এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার ভাগ্য আর নিজেদের হাতে রইল না ভারতের।
Published : 06 Sep 2022, 11:54 PM
জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ৭ রান। পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে ক্রিজে দুই সেট ব্যাটসম্যান। সেই সমীকরণ দাঁড়াল ২ বলে ২ রানে। আর্শদিপ সিংয়ের পঞ্চম বল মিস করে রানের জন্য ছুটলেন দাসুন শানাকা। কিপার বল ধরে ভাঙতে পারলেন না স্টাম্প। বোলারও পারলেন না নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে বল লাগাতে। দুই ব্যাটসম্যানই বেঁচে গিয়ে ২ রান নিয়ে মেতে উঠলেন উৎসবে।
এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে মঙ্গলবার শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ১৭৪ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে যায় ১ বল হাতে রেখে।
এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে সফলভাবে রান তাড়াকে যেন অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে তারা জিতল ১৭০ রানের বেশি তাড়া করে।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৮৩ ও সুপার ফোরে আফগানিস্তানের ১৭৫ রান তাড়ায় জিতেছিল লঙ্কানরা।
সুপার ফোরে পরপর দুই ম্যাচে হারায় ফাইনালে খেলার ভাগ্য আর নিজেদের হাতে রইল না ভারতের।
দিলশান মাদুশাঙ্কা, চামিকা করুনারত্নের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর রেকর্ড জুটিতে শ্রীলঙ্কার সুর বেঁধে দেন পাথুম নিসানকা ও কুসল মেন্ডিস। মাঝে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারানোয় যদিও জেগেছিল শঙ্কা। তবে ভানুকা রাজাপাকসার সঙ্গে দারুণ জুটিতে শ্রীলঙ্কাকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় নিয়ে যান অধিনায়ক শানাকা।
ভারতের ইনিংস রোহিতময়। ৪১ বলে তিনি খেলেন ৭২ রানের ইনিংস। অন্যরা মিলে ৮০ বলে করে ৯৩ রান। এক্সট্রা থেকে আসে ৮।
৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সফলতম বোলার মাদুশাঙ্কা। ২৭ রান দিয়ে করুনারত্নের প্রাপ্তি ২টি।
সূর্যকুমার যাদব ও হার্দিক পান্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নেওয়ার পর ১৮ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা অবশ্য শানাকা।
আগের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারা ভারত ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। ১৩ রানের মধ্যেই তারা হারায় লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলিকে।
ওপেনার রাহুল বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় অফ স্পিনার মাহিশ থিকশানার আর্ম বলে হন এলবিডব্লিউ। বাঁহাতি পেসার মাদুশাঙ্কার সোজা বলে ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন কোহলি। প্রথম তিন ম্যাচে ৩৫, ৫৯ ও ৬০ রানের পর এবার শূন্য রানে ফেরেন সাবেক ভারত অধিনায়ক।
শুরুর জোড়া ধাক্কা ভারত সামাল দেয় রোহিত ও সূর্যকুমারের ব্যাটে। দারুণ কিছু শট খেলে চাপ সরিয়ে দেন রোহিত। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভারত অধিনায়ক ফিফটি পূর্ণ করেন ৩২ বলে।
১০ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ২ উইকেটে ৭৯।
ফিফটির পর ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে একই ওভারে দুই ছক্কা ও একটি চার মেরে ছুটছিলেন রোহিত। পরের ওভারেই তাকে থামান করুনারত্নে। এই পেসারের স্লোয়ার বলে আপার কাট করে ডিপ পয়েন্টে ধরা পড়েন ৩৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
রোহিতের ৭২ রানের ইনিংস গড়া ৫ চার ও ৪ ছক্কায়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৭ রান আসে ৫৮ বলে।
সূর্যকুমারও এরপর টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ (২৯ বলে ৩৪)। শেষ দিকে ওঠেনি প্রত্যাশিত ঝড়। পান্ডিয়া বিদায় নেন একটি ছক্কা মেরে। শানাকার একই ওভারে দিপক হুডা শর্ট বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান উচ্চতার ‘নো’ বলের কারণে। ওভারে সেটি ছিল শানাকার দ্বিতীয় বাউন্সার।
সেই সুযোগ যদিও কাজে লাগাতে পারেননি হুডা। শেষের আগের ওভারে তাকে বোল্ড করার এক বল পর রিশাভ পান্তকেও (১৩ বলে ১৭) বিদায় করে দেন মাদুশাঙ্কা। ওভারে তিনি দেন স্রেফ ৪ রান।
ইনিংসের শেষের আগের বলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ছক্কায় ১৭০ ছাড়ায় ভারতের স্কোর। শেষ বলে আউট হতে পারতেন তিনি। তার ক্যাচ ফেলে উল্টো বাড়তি দুই রান দেন হাসারাঙ্গা।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে শ্রীলঙ্কা নিতে পারে স্রেফ ১ রান। পাওয়ার প্লের শেষ দুই ওভারে ঝড় বইয়ে দেন নিসানকা ও মেন্ডিস। তাতে ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কা তোলে বিনা উইকেটে ৫৭ রান।
রানের চাকা সচল রেখে নিসানকা ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৩ বলে। এরপরই লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেলকে রিভার্স সুইপ করে ক্যাচ দেন তিনি। ৩৭ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় সাজানো তার ৫২ রানের ইনিংস।
ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার রেকর্ড উদ্বোধনী জুটিতে ৯৭ রান আসে ৬৭ বলে। আগের সেরা জুটিতেও ছিলেন নিসানকা। এই বছরের শুরুতে ধর্মশালায় দানুসকা গুনাথিলাকার সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি।
নিসানকার পথ ধরে একই ওভারে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে আউট হয়ে যান চারিথ আসালাঙ্কা। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আসরে চার ম্যচের একটিতেও ছুঁতে পারলেন না দুই অঙ্ক।
ভুবনেশ্বরকে দারুণ বাউন্ডারিতে মেন্ডিস ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৩ বলে। অন্য প্রান্তে যদিও চলতে থাকে উইকেট পতনের ধারা। আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা অফ স্পিনার অশ্বিনের বলে লং অফে ক্যাচ দেন গুনাথিলাকা।
পরের ওভারে ফিরে যান মেন্ডিস নিজেও। এলবিডব্লিউ হওয়ার সঙ্গে একটি রিভিউও নষ্ট করেন তিনি। ৩৭ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় গড়া তার ৫৭ রানের ইনিংস।
১৯ বলের মধ্যে ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন বেশ চাপে শ্রীলঙ্কা। তবে সেই চাপকে জেঁকে বসতে দেননি রাজাপাকসা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৪ বলে ৩১ রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছক্কায় ওড়ান চেহেল ও অশ্বিনকে।
শেষ ৩ ওভারে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৩৩ রান। পান্ডিয়ার করা ১৮তম ওভারে শানাকার চার-ছক্কায় আসে ১২ রান। পরের ওভারে তিনি টানা দুটি চার মারেন ভুবনেশ্বরকে, ওভারে আসে ১৪ রান। তাতে শেষ ওভারে সহজ হয়ে যায় সমীকরণ। সেখানে নাটকীয়তার আভাস মিললেও শেষ হাসি শ্রীলঙ্কারই।
শানাকা ও রাজপাকসার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৬৪ রান আসে মাত্র ৩৪ বলে। রাজাপাকসা ১৭ বলে ২ ছক্কায় করেন ২৫।
এই পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে ভারত। পরদিন শ্রীলঙ্কা খেলবে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৭৩/৮ (রাহুল ৬, রোহিত ৭২, কোহলি ০, সূর্যকুমার ৩৪, পান্ডিয়া ১৭, পান্ত ১৭, হুডা ৩, অশ্বিন ১৫*, ভুবনেশ্বর ০, আর্শদিপ ১*; মাদুশাঙ্কা ৪-০-২৪-৩, থিকশানা ৪-০-২৯-১, করুনারত্নে ৪-০-২৭-২, আসিথা ২-০-২৮-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-৩৯-০, শানাকা ২-০-২৬-২)
শ্রীলঙ্কা: ১৯.৫ ওভারে ১৭৪/৪ (নিসানকা ৫২, মেন্ডিস ৫৭, আসালাঙ্কা ০, গুনাথিলাকা ১, রাজাপাকসা ২৫*, শানাকা ৩৩*; ভুবনেশ্বর ৪-০-৩০-০, আর্শদিপ ৩.৫-০-৪০-০, পান্ডিয়া ৪-০-৩৫-০, চেহেল ৪-০-৩৪-৩, অশ্বিন ৪-০-৩২-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: দাসুন শানাকা