বিপিএলে প্রথমবারের মতো ইমার্জিং ক্রিকেটারের পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোগটি প্রশংসিত হলেও এর মানদণ্ড পরিষ্কার নয়, একজন কিপারকে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার দেওয়া নিয়েও আছে প্রশ্ন।
Published : 08 Feb 2025, 05:03 PM
নতুনত্বের বার্তা নিয়ে আয়োজন করা বিপিএলের শেষ দিনেও দেখা গেছে নতুন এক উদ্যোগ। প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টের সেরা ইমার্জিং ক্রিকেটারকে পুরস্কৃত করেছে বিসিবি। আসরজুড়ে চমৎকার পারফরম্যান্সে এটি জিতেছেন তানজিদ হাসান। উদীয়মান ক্রিকেটারকে অনুপ্রাণিত করার পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই স্বীকৃতির মানদণ্ড নিয়ে। দুটি বিশ্বকাপে খেলা তানজিদ কি এই মানদণ্ডে পড়েন?
প্রশ্ন উঠছে টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার নিয়েও। ফরচুন বরিশালের উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম পেয়েছেন এই স্বীকৃতি। সেরা ফিল্ডার বাছাইয়ের মাপকাঠি কী, কিপারকে সেরা ফিল্ডারের বিবেচনায় রাখার পেছনে ভাবনা কী, সেই ব্যাপারে মেলেনি কোনো সদুত্তর।
দুজনের পারফরম্যান্স নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। পুরো আসরে ঢাকা ক্যাপিট্যালসের ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তানজিদ। প্রথম পর্বে বাদ পড়ার আগপর্যন্ত ১২ ইনিংসে ৪৪.০৯ গড় ও ১৪১.৩৯ স্ট্রাইক রেটে ৪৮৫ রান করে তিনিই ছিলেন ব্যাটসম্যানদের তালিকার শীর্ষে।
দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ৬ চার ও ৮ ছক্কায় তানজিদ খেলেন ১০৮ রানের ইনিংস। দুই ম্যাচ পর চিটাগং কিংসের সঙ্গে ৫৪ বলে ৩ চারের পাশাপাশি ৭ ছক্কায় বাঁহাতি ওপেনার করেন ৯০ রান।
টুর্নামেন্টে মোট ৩৬টি ছক্কা মারেন ২৪ বছর বয়সী ওপেনার। বিপিএলের এক আসরে স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের এটিই সর্বোচ্চ ছয়ের রেকর্ড। প্লে-অফে উঠলে হয়তো ক্রিস গেইলের ৪৭ ছক্কার কীর্তির কাছাকাছি যেতে পারতেন তানজিদ।
সার্বিকভাবে অনেকদিন মনে রাখার মতো আসরই পার করেছেন তানজিদ। তবে কোন মানদণ্ড বা বিবেচনায় ইমার্জিং ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি, তা নিয়ে নেই কোনো স্পষ্ট বার্তা।
বিশ্ব ক্রিকেটের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএলে প্রথম আসর থেকেই দেওয়া হয় এই পুরস্কার। যেখানে ইমার্জিং ক্রিকেটার পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হওয়ার জন্য দেওয়া আছে সুনির্দিষ্ট মানদন্ড। টুর্নামেন্ট শুরুর সময় বা কাছাকাছ সময়ে একটি তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়, যে তারিখে ওই ক্রিকেটারের বয়স হতে হবে ২৬ বছরের কম, ৫টির বেশি টেস্ট, ২০টির বেশি ওয়ানডে ও আসর শুরুর পর আইপিএলে ২৫টির বেশি ম্যাচ খেলেননি এবং আগে কখনও ইমার্জিং পুরস্কার পাননি, তারাই এই পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় থাকেন।
২০১৬ সালে যেমন ইমার্জিং ক্রিকেটার হয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। এই স্বীকৃতি পাওয়া একমাত্র বিদেশি ক্রিকেটার এখনও তিনিই।
এটিকে মানদণ্ড ধরা হলে শুধু বয়সটাই পক্ষে পাবেন তানজিদ। এর বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় দেড় বছরের অভিজ্ঞতা তার। এরই মধ্যে খেলেছেন একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে ২১ ওয়ানডে ও ১৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তানজিদ।
আইপিএলের মানদণ্ড অবশ্যই অনুসরণ করা হয়নি বিপিএলে। সেটা জরুরিও নয়। তবে নিজেদের তো একটা মানদণ্ড বা কিছু শর্ত তো ঠিক করতে হবে!
এই টুর্নামেন্টে প্রথমবার ইমার্জিং পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন মানদণ্ড বিবেচনায় ছিল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হলে ধারাভাষ্যকারদের মতামত ও পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যানের কথা জানায় বিসিবির দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
“ইমার্জিং ক্রিকেটারের পুরস্কারটা ধারাভাষ্যকারদের মূল্যায়ন ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তাদেরকে (ধারাভাষ্যকার) কোনো ক্রাইটেরিয়া দেওয়া হয়নি। সেরা ফিল্ডারের ক্ষেত্রেও একইভাবে পরিসংখ্যান দেখা হয়েছে।”
পরিসংখ্যানের বিচারে মুশফিকের সেরা ফিল্ডার হওয়ার যৌক্তিকতা অবশ্য কিছুটা আছে। বরিশালের হয়ে ১১ ম্যাচে কিপিং করে ১৪টি ডিসমিসাল পান অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক। কিপারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার ওপরে।
তবে নন-কিপারদের মধ্যে ফিল্ডারদের মধ্যে মুশফিকের কাছাকাছি ছিলেন আরিফুল হক। ১২ ম্যাচে ১৩টি ক্যাচ নেন সিলেট স্ট্রাইকার্স অধিনায়ক। তার অন্তত তিনটি ক্যাচ টুর্নামেন্টের হাইলাইটসে জায়গা পাওয়ার জোর দাবি রাখে। কিন্তু সেরা ফিল্ডার পুরস্কারে আসেনি তার নাম।
কিপারকে সেরা ফিল্ডার পুরস্কার দেওয়ার নজির অবশ্য এটিই প্রথম নয়। নানা সময়ে নানা টুর্নামেন্ট এটা দেখা গেছে। আবার ব্যতিক্রমও আছে। মূল ব্যাপার হলো, সেরাদের বিবেচনার কোনো মানদণ্ড কি ঠিক করা হয়েছিল?
কিপার তো আদতে একজন ফিল্ডারও। তবে তার হাতে গ্লাভস থাকে। ক্যাচ-ডিসমিসালের সুযোগও তার বেশি। এখানেও প্রশ্ন থাকে, শুধ ডিসমিসাল সংখ্যা দেখে সেরা বাছাই করা হয়েছে নাকি সামগ্রিক ফিল্ডিং পারফরম্যান্স দেখে?
ধারাভাষ্যকারদের মূল্যায়নে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, মানতে রাজি নন অভিজ্ঞ ধারাভাষ্যকার শামীম আশরাফ চৌধুরি। তার দাবি, সবগুলো পুরস্কারই ঠিক করা হয়েছে বিসিবি থেকে।
“সবগুলো পুরস্কার বিসিবি থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি বলে থাকে যে ধারাভাষ্যকাররা এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল, তাহলে ভুল বলেছে। যদি খেয়াল করে থাকেন, পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে আমি বলেছি, ‘বিসিবি ইমার্জিং প্লেয়ার’ বা ‘বিসিবি বেস্ট ব্যাটসম্যান।’ বিসিবি শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ধারাভাষ্যকাররা এখানে যুক্ত ছিল না।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধারাভাষ্য প্যানেলের আরেক সদস্য আবার ভিন্ন এক তথ্য দিলেন।
“ফাইনালের পুরস্কার বিতরণের জন্য আমাদের সবাইকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ দেওয়া ছিল। যতটুকু জানি, ইমার্জিং ক্রিকেটারের পুরস্কারটা আতহার আলি খান দেখেছেন। তিনি হয়তো আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সেরা ফিল্ডার পুরস্কারটা সম্ভবত বিসিবি থেকেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল।”
অভিজ্ঞ ধারাভাষ্যকার ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আতহার আলিকে জিজ্ঞেস করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে চাননি তিনি। অল্প কথায় শুধু বলেন, ‘এখন মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। পরে বিস্তারিত কথা বলব।’
নানা জনের সঙ্গে কথা বলেও তাই পরিষ্কার কোনো বার্তা পাওয়া গেল না। শুধু আভাস পাওয়া গেল, ইমার্জিং ক্রিকেটার বা সেরা ফিল্ডারের বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট শর্তাবলী বা মানদণ্ড হয়তো ছিলই না।