পায়ে ক্র্যাম্প করায় আরও ২০-৩০ রান বেশি করতে না পারার আক্ষেপ তাওহিদ হৃদয়ের।
Published : 21 Feb 2025, 09:46 AM
অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ হারলেও হারেননি তাওহিদ হৃদয়। ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের মতো কেউ বলছেন, নিজের জাত চিনিয়েছেন হৃদয়। অসাধারণ সেঞ্চুরিতে নিশ্চিতভাবেই আরও অনেকের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন হৃদয়। তবে তিনি নিজে তৃপ্ত নন। তার ভেতরে আক্ষেপের আনাগোনা, শেষ দিকে পায়ে ক্র্যাম্প না করলে আরও কিছু রান করতে পারতেন দলের জন্য। ম্যাচের চিত্রও তখন ভিন্ন হতে পারত!
হৃদয় বীরত্ব দেখাতে না পারলে অবশ্য এইটুকু আক্ষেপ, ম্যাচ নিয়ে এত বিশ্লেষণের প্রয়োজনই পড়ত না। বাংলাদেশ যে বিধ্বস্ত হয়ে যেত অনেক আগেই!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নবম ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৩৫। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড খোঁজাখুঁজি চলছে তখন। রোহিত শার্মা যদি জাকের আলির সহজ ক্যাচ না ছাড়তেন, তাহলে হয়তো বিব্রতকর রেকর্ডটি নতুন করে লেখা হতেও পারত।
কিন্তু হৃদয় ও জাকের আলি মিলে গড়লেন গৌরবের রেকর্ড। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ১৫৪ রানের জুটি গড়লেন দুজন, ষষ্ঠ উইকেটে যা বাংলাদেশের রেকর্ড, ভারতের বিপক্ষে যে কোনো জুটিতেই রেকর্ড।
জাকের ৬৮ রানে আউট হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করে শেষ ওভারে আউট হন হৃদয়। ৮৫ বলে ফিফটি করার পর শতরান পর্যন্ত যেতে আর মোটে ২৯ বল লাগে তার।
বাংলাদেশ অলআউট হয় ২২৮ রানে।
ওই রান নিয়ে বোলাররা লড়াই করে মোটামুটি। কিন্তু ম্যাচ জেতা যায়নি। শুবমান গিলের অপরাজিত সেঞ্চুরি জিতিয়ে দেয় ভারতকে।
উইকেট কিছুটা মন্থর ছিল দুবাইয়ে, ব্যাটিং খুব সহজ ছিল না। তবে ২২৮ রানের পুঁজিও যথেষ্টর চেয়ে ছিল কম। হৃদয় ম্যাচের পর বললেন, রান আর কিছু বেশি হলে ম্যাচের বাস্তবতাও অন্যরকম হতে পারত।
“আমরা ভাবনায় পরিষ্কার ছিলাম যে, টস জিতলে কী করতে চাই। ব্যাটিং করারই পরিকল্পনা ছিল গোটা দলের। দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ে গেছে… এজন্য জিনিসটা এরকম হয়েছে। দ্রুত উইকেট যাওয়ার পরও যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি আমি ও জাকের, দুজনের একজন যদি আরও ভালোভাবে ম্যাচটা শেষ করতে পারতাম, তাহলে অন্তত ২৬০-২৭০ রান হতো। তখন খেলার চিত্র ভিন্ন হতো।”
“ওরা রান তাড়া করেছে ৪৭ ওভারে। মনে, এত সহজ ছিল না উইকেট। আমাদের মনে হয়, ৩০ থেকে ৪০ রান কম করে ফেলেছি।”
জাকের আউট হয়ে যান ৪৩তম ওভারে। হৃদয় শেষ ওভার পর্যন্ত খেলে আউট হন দুই বল বাকি থাকতে। তার পরও কাজ শেষ করতে না পারার কথা বলছেন তিনি মূলত শেষ দিকে আরও দ্রুত রান তুলতে না পারায়। দুবাই-আবু ধাবিতে ম্যাচগুলোয় অনেক সময়ই পানিশূন্যতা থেকে পায়ে ক্র্যাম্প করতে দেখা যায় ক্রিকেটারদের। এই ম্যাচে সেই অভিজ্ঞতা হয় হৃদয়ের।
৪৫তম ওভার থেকে হৃদয়ের ক্র্যাম্প বেশ বাজে রূপ নেয়। মাঠে কিছুক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার পরও ঠিক হননি। দৌড়াতেই পারছিলেন না ঠিকঠাক, রান নিচ্ছিলেন খুঁড়িয়ে। শট খেলার সময় পা নড়ছিল না ঠিকঠাক। মোহাম্মদ শামির বলে একটি শট খেলেই তিনি পড়ে যান ধপাস করে।
৪৫ ওভারের পর ১৪ বল খেলে আর কেবল ১১ রান করতে পারেন তিনি। শেষ দিকে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে ওঠে তার। শেষ ওভারে টানা তিন বলে রান না নিয়ে চতুর্থ বলে আউট হয়ে যান।
শেষ তিন ওভারে ৯ বল খেলে কেবল ৪ রান করতে পারেন তিনি।
দলের রান আরও বেশি না হওয়ার দায় তাই নিজেকেই দিচ্ছেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
“আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার ক্র্যাম্পিং করাটাই ওই সময়… যদি আমি ঠিকঠাক থাকতাম, তাহলে আরো ২০-৩০ রান বেশি হতে পারত দলের।”
“৫ উইকেট যাওয়ার পর এতটা সহজ ছিল না। ওই সময় ধৈর্য ধরেছি। নিজের সঙ্গে কথা বলেছি যে কীভাবে এখান থেকে বের হওয়া যায়। একটা সময় অনেক ডট বল দিয়েছি। তবে আমার মনে হয়েছে, পরে তা পুষিয়ে দিতে পারব। কারণ, আমার সেই সামর্থ্য আছে। যদি ক্র্যাম্পিং ওই সময় না হতো, তাহলে হয়তো দলের জন্য আরও ২০-৩০ রান বেশি করে দিতে পারতাম।”
পরে সামাজিক মাধ্যমেও হৃদয় লেখেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটির মূল্য তার কাছে খুব একটা নেই। কারণ, দল যে হেরে গেছে!
"আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম শতক, তবে সবটুকুই বৃথা হয় যখন দল হেরে যায়।"
"শতরানের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়ার শেষ নেই, তবে মন খারাপ। হয়তো আমি আর একটু ভালো খেললে দলের জন্য আরও ভালো হতো। পরের ম্যাচে ফিরতে চাই, যত কষ্টই সহ্য করতে হোক না কেন।"
দুবাই থেকে বাংলাদেশের গন্তব্য এখন রাওয়ালপিন্ডি। সেখানে সোমবার ম্যাচ নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে, আগামী বৃহস্পতিবার লড়াই পাকিস্তানের বিপক্ষে।