পারভেজকে এক টাকা পারিশ্রমিকও না দেওয়ার প্রসঙ্গে চিটাগং কিংসের কর্ণধার বলেছিলেন, আগে তিনি সন্তুষ্ট হতে চান।
Published : 02 Feb 2025, 08:25 AM
তাইজুল ইসলামকে ছক্কা মেরে যখন ফিফটি পূর্ণ করলেন পারভেজ হোসেন ইমন, ড্রেসিং রুমের পাশে সোফায় বসা দলের কর্ণধার তখন সমানে তালি দিচ্ছেন। এমনিতে খুবই স্বাভাবিক দৃশ্য। ছয় ছক্কায় ঝড়ো ফিফটি করেছেন ব্যাটসম্যান, স্বত্বাধিকারীর তো খুশিই হওয়ার কথা। তবু দৃশ্যটি আলাদা করেই নজর কাড়ল অনেকের। কারণ, একটি প্রেক্ষাপট আছে, যেখানে মিশে আছে বিস্ময় আর বিতর্ক।
সপ্তাহখানেক আগে চিটাগং কিংসের কর্ণদার সামির কাদের চৌধুরি ডেইলি স্টারকে অকপটেই বলেছিলেন, তার দলের ক্রিকেটার পারভেজকে তিনি পারিশ্রমিকের এক টাকাও দেননি। ‘টাকা গাছে ধরে না’, এই কথা বলে তিনি যোগ করেছিলেন, ব্যক্তিগত ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ইস্যুর কারণে তিনি পারভেজনকে টাকা দেননি। পাশাপাশি বলেছিলেন, তার নিজের সন্তুষ্ট হওয়ার ব্যাপারও এখানে আছে।
এবারের বিপিএলে তখনও পর্যন্ত সাত ইনিংসে পারভেজের মোট রান ছিল ১০৩, সর্বোচ্চ ছিল ৩৯। এমন পারফরম্যান্সে দলের কর্ণধার হতাশ হতেই পারেন। তবে কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে তার দলের মালিকপক্ষের কেউ প্রকাশ্যে এমন কথা বলেছেন, এরকম ভাষার ব্যবহার করেছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন নজির আর আছে বলে মনে হয় না।
সামির কাদের চোধুরির এই মন্তব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় জন্ম দেয় ক্রিকেট আঙিনায়। তার কথায় ঔদ্ধত্য, কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করা, একজন ক্রিকেটারের প্রতি অপমান, এমন অনেক কিছুই খুঁজে পান ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও বিপিএল পরিচালক নাজমুল আবেদীন পরে বলেন, এই ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক।
পারভেজ যখন পরের ম্যাচটি খেলতে নামে, মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪১ রানের ইনিংস খেলেন। তবে তার স্বাভাবিক ব্যাটিং সেদিন দেখা যায়নি। ৪৩ বল খেলেছিলেন তিনি, ইনিংসজুড়ে ছিল জড়তা। পরের ম্যাচে দল প্লে-অফ নিশ্চিত করলেও বাঁহাতি এই ওপেনার ফেরেন ১ রানেই।
অবশেষে শনিবার তার ব্যাটে দেখা যায় সেই প্রত্যাশিত বারুদ। জ্বলে ওঠেন তিনি আপন রূপে। ফিফটি ছোঁয়ার সময় কোনো বাউন্ডারি ছিল না তার, ছক্কা ছিল ছয়টি। পরে একটি চার ও মোট আট ছক্কায় ৪১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন ২২ বছর বয়সী ওপেনার।
শীর্ষে থাকা ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে রংপুর রাইডার্সকে টপকে কোয়ালিফায়ার খেলা নিশ্চিত করে চিটাগং কিংস।
পেশাদার ক্রীড়ায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর পারফর্ম করা বা না করার সঙ্গে পারিশ্রমিকের সংযোগ থাকার কথা নয়। ব্যর্থতাও এই পেশাদার ভুবনের অংশ। পারভেজ অবশেষে দারুণ ইনিংসটি খেললেও তাই কর্ণধারের সন্তুষ্টি প্রসঙ্গ আসার কথা নয়। তবে প্রেক্ষাপটই এসবকে এক সুতোয় গেঁথে দিচ্ছে।
মিরপুরে শনিবর ক্রীড়া উপদেষ্টাকে পাশে নিয়ে গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন বললেন, ওই মন্তব্যের জন্য তাদের কাছে ‘সরি’ বলেছেন সামির কাদের চৌধুরি।
পারভেজ অবশ্য দারুণ ইনিংসটি খেলে ক্রিকেটীয় আলোচনাতেই থাকলেন। বিপিএলে প্রথমবার ম্যান অব দা ম্যাচ হওয়ার স্বাদ পাওয়ার পর টি-স্পোর্টসকে বললেন, তিনি চেষ্টা করেছেন উইকেট বুঝে ও নিজের শক্তির জায়গায় আস্থা রেখে ব্যাট চালাতে।
“পরিকল্পনা ছিল আগে উইকেট মূল্যায়ন করার। উইকেটের আচরণ বুঝে খেলার চেষ্টা করেছি।”
“বড় ছক্কার কোনো ইয়ে (রহস্য) নেই। আমি স্রেফ বল দেখেছি। যেটা আমার জোনে ছিল, ওটা চেষ্টা করেছি (ছক্কা মারার)।”
পারভেজ যখন আউট হলেন, তখনও ইনিংসের সাত ওভারের বেশি বাকি। শতরানের হাতছানি তাই ভালোভাবেই ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি সেঞ্চুরি তার আছে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ৪২ বলে করেছিলেন অপরাজিত ১০০, এখনও যা বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। তবে বিপিএলে তার সর্বোচ্চ এই ৭৫ রানের ইনিংসই।
পারভেজের আক্ষেপ অবশ্য সেঞ্চুরি নিয়ে নয়, ইনিংস আরও টেনে নিতে না পারায়।
“সেঞ্চুরি নিয়ে চিন্তা করিনি। বড় করতে না পারার একটা আক্ষেপ আছে। আমি স্রেফ পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি।”
নিজের দিনে বড় বড় ছক্কা মারার জন্য তার পরিচিতি থাকলেও প্রতিক্রিয়া প্রকাশে তিনি বরাবরই আড়ষ্ঠ। ছোট্ট করে কথা বলেন। তাতে ক্ষতিও অবশ্য নেই। তার আসল কাজ তো ২২ গজে! সেখানে তিনি বড় কিছু করতে চান সামনের সময়টায়।
“অনেক দিন পর ভালো একটা ইনিংস আমার থেকে, মনে হলো। আমাদের সামনের ম্যাচগুলি বড়। চেষ্টা করব এটা ধরে রাখার।”
বিপিএলের পরপরই তার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে জাতীয় দলের হয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ স্কোয়াডে তিনি জায়গা পেয়েছেন। তবে আপাতত বিপিএলের বাইরে ভাবতে চান না এখনও ওয়ানডে অভিষেক না হওয়া এই ব্যাটসম্যান।
“এত কিছু এখনও চিন্তা করিনি। আমাদের এখন বিপিএল চলছে, ফোকাস এখানেই রাখছি। বিপিএল শেষে ক্যাম্প আছে আমাদের। চেষ্টা করব ওয়ানডের জন্য ওখানে প্রস্তুতি নেওয়ার।