৩৯১ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হলো টিম সাউদির, তার বিদায়ী টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৪২৩ রানে হারাল নিউ জিল্যান্ড।
Published : 17 Dec 2024, 10:13 AM
ম্যাচের ভাগ্য অনুমিতই ছিল। তবে ম্যাচের ফল বা অন্য সব কিছু এ দিন যেন গৌণ। টিম সাউদির বিদায়ী দিন বলে কথা! ঘরের ছেলেকে সম্মান জানাতে সেডন পার্কের গ্যালারি ভিড় জমালেন দর্শকেরা। মাঠে উপস্থিত কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলি। শেষ দিনটিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেটও পেলেন সাউদি। সবকিছুর পূর্ণতা পেল নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ে।
হ্যামিল্টন টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৪২৩ রানে বিধ্বস্ত করল নিউ জিল্যান্ড। রানের হিসেবে এটি যৌথভাবে কিউইদের সবচেয়ে বড় জয়। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছিল ৪২৩ রানের আরেকটি জয়। রানের হিসেবে ইংলিশদের বিপক্ষে আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ১৯৯ রানের।
চতুর্থ দিনে মঙ্গলবার দুই সেশনও লাগেনি খেলা শেষ হতে। ৬৫৮ রানের লক্ষ্যে ছুটে ইংলিশদের ইনিংস শেষ হয় ২৩৪ রানে। আগের দিন হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় মাঠ ছেড়ে যাওয়া অধিনায়ক বেন স্টোকস ব্যাটিংয়ে নামেননি।
প্রথম দুই টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল আগেই।
ক্যারিয়ারের শেষ দিনে সাউদি আউট করেছেন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোরার জ্যাকব বেথেলের উইকেট। ১০৭ টেস্টে ৩৯১ উইকেট নিয়ে শেষ হলো তার টেস্ট ক্যারিয়ার।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বেথেল ও জো রুট যেভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল হারার আগে লড়াই ভালোই করবে ইংল্যান্ড। ওয়ানডের গতিতে খেলে ৬৩ বলে ফিফটি করেন বেথেল, ৫৯ বলে রুট। জুটি পেরিয়ে যায় শতরান।
রুট অবশ্য ২০ রানে জীবন পান সাউদির বলে স্লিপে টম ল্যাথামের হাতে। উইল ও’রোক ১৫৩ কিলোমিটার ছাড়ানো গতিতে বল করে বারবার অস্বস্তিতে ফেলেন বেথেলকে। তবে সব সামলে রান করার পথ বের করে নেন দুজনই।
জুটি শেষ পর্যন্ত ১০৪ রানে থামান মিচেল স্যান্টনার। সুইপ করার চেষ্টায় ৫৪ রানে এলবিডব্লিউ হন রুট।
একটু পর ও’রোকের দুর্দান্ত এক শর্ট বলে হ্যারি ব্রুক বিদায় নেন ১ রান করেই। প্রথম ইনিংসে তিনি একই বোলারের বলে আউট হয়েছিলেন প্রথম বলে।
আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে ওঠার পরই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে টেস্ট কাটালেন ব্রুক। এই সপ্তাহে র্যাঙ্কিংয়ে তার অবনমন হবে নিশ্চিতভাবেই।
১৩ চার ও ১ ছক্কায় ৭৬ রান করা বেথেলকে লাঞ্চের আগেই বিদায় করেন সাউদি। ম্যাট হেনরিকে রিভার্স র্যাম্প খেলার চেষ্টায় বাজেভাবে বোল্ড হন অলিভার পোপ।
এরপর ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ রান করে একটু বিনোদন উপহার দেন গাস অ্যাটকিনসন। একটি করে ছক্কা ও চারে ১১ রান করেন ব্রাইডন কার্স। শেষ তিন উইকেটই নেন স্যান্টনার।
তবে ম্যাচ শেষ হতেই সবার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন সাউদি। প্রায় ১৭ বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই হার দিয়ে শুরু হয়েছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ার। শেষটা হলো জয় দিয়ে। সবার সামনে থেকে দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। পুরস্কার বিতরণীতে তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিয়ে স্তুতিতে ভাসান নিউ জিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার বলে বিবেচিত রিচার্ড হ্যাডলি।
দুই ইনিংস মিলিয়ে সাত উইকেট আর ব্যাট হাতে ৭৬ ও ৪৯ রানের দুটি ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা মিচেল স্যান্টনার। নিজের সবশেষ টেস্টেও তিনি ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে। পরে ওই ভারত সফরের শেষ টেস্টে খেলতে পারেননি চোটের কারণে। দেশে ফিরে এই সিরিজের প্রথম দুই টেস্টেও সুযোগ পাননি। এবার একাদশে ফিরেই আবার মেলে ধরলেন নিজেকে।
এই টেস্টে ব্যর্থ হলেও আগের দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করে ম্যান অব দা সিরিজ হ্যারি ব্রুক।
ইংল্যান্ডের পরের চ্যালেঞ্জ আগামী মাসের ভারত সফর। সেখানে ৫ টি-টোয়েন্টি, ৩ ওয়ানডে ও ৫ টেস্ট খেলবে তারা। নিউ জিল্যান্ড এই মাসের শেষে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৪৭
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৪৩
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৪৫৩
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৬৫৮, আগের দিন ১৮/২) ৪৭.২ ওভারে ২৩৪ (বেথেল ৭৬, রুট ৫৪, ব্রুক ১, পোপ ১৭, অ্যাটকিনসন ৪৩, কার্স ১১, পটস ০, বাশির ০*, স্টোকস আহত অনুপস্থিত; হেনরি ১৩-১-৬২-২, সাউদি ৮-১-৩৪-২, ও’রোক ১২-৫-৩৭-১, স্যান্টনার ১৪.২-১-৮৫-৪)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৪২৩ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মিচেল স্যান্টনার।
ম্যান অব দা সিরিজ: হ্যারি ব্রুক।