জীবনের এই পর্যায়ে বৈশ্বিক আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে বড় কিছু নেই দিনেশ কার্তিকের কাছে।
Published : 20 Apr 2024, 09:30 PM
বয়স ৩৯ ছুঁইছুঁই। তবে দিনেশ কার্তিকের মাঠের পারফরম্যান্সে বয়সের ছাপ যেন একদমই পড়ছে না। ভারতের হয়ে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার জন্য প্রস্তুত করছেন নিজেকে। এই কিপার-ব্যাটসম্যান বললেন, আসছে বৈশ্বিক আসরে খেলতে সম্ভাব্য সবকিছু করবেন তিনি।
আইপিএলের চলতি আসরে দারুণ ছন্দে আছেন কার্তিক। ফিনিশারের দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই পালন করছেন তিনি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সবশেষ ম্যাচেই যেমন, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে বিধ্বংসী এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
বেঙ্গালুরুতে গত সোমবারের ম্যাচে আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮৭ রানের রেকর্ড গড়ে হায়দরাবাদ। রান তাড়ায় কার্তিকের সৌজন্যে ২৬২ রান পর্যন্ত যায় বেঙ্গালুরু। ম্যাচ হারে তারা ২৫ রানে। ৬ নম্বরে নেমে ৩৫ বলে ৮৩ রান করেন কার্তিক। তার ইনিংসে ৭ ছক্কার সঙ্গে ছিল ৫টি চার। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত কার্তিকের রান ২২৬, স্ট্রাইক রেট ২০৫.৪৫।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার জন্য সেবার আইপিএলে ফিনিশার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। এই দায়িত্বে উপযোগী হতে কঠোর পরিশ্রম করা কার্তিক শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগও পেয়ে যান। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার আসরে নিজের সামর্থ্য দেখাতে পারেননি কার্তিক। চার ম্যাচ খেলে তিনটিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে একবারও যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। রান করেন কেবল ১৪। এরপর আর ভারতের হয়ে সুযোগ পাননি তিনি। দেশের জার্সিতে তার সবশেষ ম্যাচ ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
গত আইপিএলেও ভালো করতে পারেননি তিনি। তবে এবার আছেন চমৎকার ফর্মে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে রোববার মাঠে নামবে বেঙ্গালুরু। আগের দিন কার্তিক বললেন, বিশ্বকাপের বিমানে উঠতে সর্বোচ্চটা দেবেন তিনি।
“জীবনের এই পর্যায়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা আমার কাছে সবচেয়ে বড় অনুভূতি হবে। এটা করতে খুব, খুবই উদগ্রীব আমি। আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে আমার জীবনে আর বড় কিছু নেই।”
“আমার মনে হয়, বিশ্বকাপের জন্য ভারতের সেরা দল কেমন হওয়া উচিত, তা ঠিক করার দায়িত্বে তিন জন খুবই দৃঢ় ও সৎ মানুষ রয়েছেন- রাহুল দ্রাবিড় (কোচ), রোহিত শার্মা (অধিনায়ক) ও আজিত আগারকার (প্রধান নির্বাচক)। আর আমি পুরোপুরি তাদের সমর্থন করি। তাদের যেকোনো সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি শতভাগ প্রস্তুত এবং বিশ্বকাপের সেই ফ্লাইটে থাকার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করব।”
গত তিন আইপিএলে ছয় নম্বর বা এর নিচে ব্যাট করতে নেমে কার্তিকের ৬০৪ রানের বেশি রান করতে পারেননি আর কেউ। ২০২২ আইপিএল থেকে এই পজিশনে ব্যাট করে ২৮০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার ১৭৫.০৭ স্ট্রাইক রেটই সেরা।
নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের জায়গা খুঁজে বের করে, সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার ফল পাচ্ছেন বলে মনে করছেন কার্তিক।
“আজকাল খেলোয়াড় হিসেবে নিজের সামর্থ্য বুঝতে হবে। আমি আন্দ্রে রাসেল বা কাইরন পোলার্ড নই, যারা বলে ঠিকঠাক টাইমিং করতে না পারলেও ছক্কা হয়। তাই, আমাকে বুঝতে হবে কীভাবে গ্যাপগুলিকে কাজে লাগাতে পারি এবং কোন ধরনের বলগুলি বাউন্ডারির জন্য মারতে পারি।”
“আমি যখন অনুশীলন করি, তখন বোঝার চেষ্টা করি, তারা (বোলাররা) যদি এভাবে বোলিং করে তবে আমি কীভাবে বাউন্ডারি পাব, ওই সময় একটি ফিল্ডিং কল্পনা করে ব্যাটিং করি। মাঠে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারা দারুণ ব্যাপার এবং ফিনিশার হিসেবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে আমি যা করছি তা দারুণ উপভোগ্য।”
বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে মুম্বাইয়ের সবশেষ ম্যাচ চলাকালে কার্তিকের বিশ্বকাপ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রসিকতা করতে শোনা যায় ভারত অধিনায়ক রোহিত শার্মাকে। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘সাবাশ ডিকে! তার মাথায় বিশ্বকাপ ঘুরছে।’ ওই ম্যাচে অপরাজিত ৫৩ রান করেছিলেন কার্তিক স্রেফ ২৩ বলে।
পরে একটি অনুষ্ঠানে কার্তিককে বিশ্বকাপের জন্য ডাকার একটি ইঙ্গিতও দেন রোহিত।
“কয়েক দিন আগে ডিকে-র (দিনেশ কার্তিক) ব্যাটিং দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। ধোনিও মুগ্ধ করেছিল, চার বল খেলতে এসে বড় প্রভাব ফেলেছিল, এটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। এমএসকে (বিশ্বকাপে খেলার জন্য) রাজি করানো কঠিন হবে, যদিও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন, অন্য ভূমিকায়। তিনি এখন গলফে আছেন। আমার ধারণা, ডিকে-কে রাজি করানো সহজ হবে।”
আগামী ১ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।