ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কায় এখন যৌথভাবে শীর্ষে মাহমুদুল্লাহ, অষ্টম উইকেটে জুটির রেকর্ডও গড়লেন তিনি তানজিমকে সঙ্গী করে।
Published : 10 Dec 2024, 11:34 PM
ইনিংসের বয়স তখন মোটে ২৫ পেরিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ ততক্ষণে ভেঙে পড়েছে। তানজিম হাসান যখন ক্রিজে গেলেন, দলের রান ৭ উইকেটে ১১৫। যে কোনো সময় ইনিংস শেষ হওয়ার শঙ্কা। সেই চরম বিপর্যয় থেকেই দলকে টেনে তুললেন তানজিম ও মাহমুদল্লাহ। দুজনের দারুণ বন্ধন শুধু দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারই করল না, জুটি পৌঁছে গেল রেকর্ডের উচ্চতায়।
ওয়ানডে ক্রিকেটে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি উপহার দিলেন মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম। সেন্ট কিটসে মঙ্গলবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুজন যোগ করেন ৯২ রান।
দুজনের এই সংযোগে অতীত হয়ে গেল প্রায় ছয় বছর পুরোনো এক জুটি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নেপিয়ারে ৮৪ রানের জুটি গড়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
মিঠুন-সাইফ ভেঙেছিলেন ১৬ বছর পুরোনো রেকর্ড। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই ২০০৩ সালে অপরাজিত ৭০ রানের জুটি গড়েছিলেন খালেদ মাসুদ ও মোহাম্মদ রফিক।
জুটির রেকর্ডের আগেই ব্যক্তিগত একটা অর্জন ধরা দেয় মাহমুদউল্লাহ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৯৯ ছক্কা নিয়ে ম্যাচ শুরু করা ব্যাটসম্যান পূর্ণ করেন ছক্কার সেঞ্চুরি। পরে আরও তিনটি ছক্কায় তিনি স্পর্শ করেন তামিম ইকবালের রেকর্ড।
সেন্ট কিটসে মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেন জেডেন সিলস। সৌম্য সকার, লিটন কুমার দাসদের বাজে শটের মহড়া তো ছিলই। অভিষিক্ত মার্কিনো মিন্ডলির প্রথম শিকার হয়ে যখন বিদায় নেন রিশাদ, তখন উইকেটে যান তানজিম। দেড়শ রান সেসময় অনেক দূরের পথ।
তানজিম ক্রিজে যাওয়ার পর থেকেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করতে থাকেন। তার ব্যাটিংয়ে ভরসা পেয়ে মাহমুদউল্লাহও ক্রমে খোলস থেকে বের হন। ক্যারিবিয়ানদের হতাশ করে বাংলাদেশের রান ১৫০ হয়ে ১৮০ ছাড়িয়ে দুইশও পার করে দেন দুজন।
৪৪তম ওভারে রোস্টন চেইসের ফিরতি ক্যাচে তানজিমের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। প্রথম ফিফটি হাতছানি দিয়েও মিলিয়ে যায় তার জন্য। চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৪৫ রানের ইনিংসটিই তার ক্যারিয়ার সেরা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের আগের চার ইনিংসে চার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১৮ রানের। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আগের ২৬ ইনিংসে সর্বোচ্চ ছিল ২৬। সেই তানজিম মেলে ধরলেন নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য।
রেকর্ড জুটির সঙ্গী হারানোর পরের ওভারে আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহও। আগের ম্যাচে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফিফটি করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবার ৯২ বলে করেন ৬২। ইনিংসে ছক্কা ছিল চারটি।
এই চারটি ছক্কায় ওয়ানডেতে ১০৩ ছক্কা হয়ে গেল মাহমুদউল্লাহর। সমানসংখ্যক ছয় নিয়ে এতদিন ধরে এককভাবে শীর্ষে ছিলেন তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়। রেকর্ডটি এককভাবে নিজের করে নেওয়া মাহমুদউল্লাহর জন্য এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার।
এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ১০০ ছক্কা মেরেছেন আর কেবল মুশফিকুর রহিম। শুরুর তিনজনের চেয়ে অনেকটা পেছনে থেকে ৬২ ছক্কা নিয়ে চারে মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৫৪ ছক্কা এসেছে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে।
আগের ম্যাচটিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০ ছক্কার মাইলফলকে পৌঁছে যান মাহমুদউল্লাহ। তিন সংস্করণ বাংলাদেশের সফলতম ছক্কাবাজ তিনিই।
মাহমুদউল্লাহ-তানজিমের রেকর্ড জুটির পরও বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২২৭ রানে।