‘আর কোনো অবন্তিকা যেন এভাবে ঝরে না পড়ে’

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় ‘প্ররোচনাদাতাদের’ বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা সোমবার মানববন্ধন করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2024, 10:07 AM
Updated : 18 March 2024, 10:07 AM

“বৃহস্পতিবারও একসাথে ক্লাস করেছি; আর এখন এভাবে অবন্তিকার জন্য মানববন্ধন করতে হবে এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

কথাগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা শান্তর। সহপাঠীদের সঙ্গে তিনিও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন।

তাদের দাবি, যাদের কারণে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে থেকে পদযাত্রা করেন। পুরো ক্যম্পাস ঘুরে ফের শহীদমিনারে এসে তারা মানববন্ধনে মিলিত হন। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন সেখানে।

গত ১৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকার বাসায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এর আগে নিজের ফেইসবুক আইডিতে তার এমন মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন দুইজনকে। তারা হলেন-সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।

আম্মান তাকে অনলাইন ও অফলাইনে ‘হুমকির ওপর রাখতেন’ এবং সহকারী প্রক্টরকে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনিও ‘হুমকি ধমকি দিয়েছেন’–এমন অভিযোগের কথা লিখে গেছেন অবন্তিকা।

শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে অবন্তিকার সহপাঠী নাদিম বলেন, “এখানে এভাবে অবন্তিকার জন্য মানববন্ধন করতে হবে সেটা কখনো ভাবিনি। আর কোনো আশ্বাস পেতে চাই না। প্রশাসনের কাছে দাবি, এই ঘটনার পেছনে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। এরপর যেন এমন কোনো ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আর না ঘটে। “

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা শান্ত বরেন, “আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ও এমন করবে৷ এখানে এভাবে অবন্তিকার জন্য মানববন্ধন করতে হবে এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।“

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা বলেন, “এমন স্ট্রং মানুষ কীভাবে আত্মহত্যা করেছে এটাই ভেবে পাচ্ছি না। আমরা এমন একটা মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারালাম, যে শুধু আইন বিভাগ না, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব ছিল। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার পেছনে যারা দায়ী তারা বেরিয়ে আসুক। আর কোনো অবন্তিকা যেন এভাবে ঝরে না পড়ে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ইয়াসুনুল কবির মনে করেন, ‘একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন’ ঘটল।

“অবন্তিকা শেষ পর্যন্ত তার অবস্থা আমাদের যদি জানাত, তাহলে হয়ত আমরা তার মানসিক অবস্থা বুঝে সাহায্য করতে পারতাম।“

অবন্তিকার সমস্যার বিষয়ে কিছু জানতেন না বলে আফসোস করেন আইন বিভাগের শিক্ষকরা।

এ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নূরনাহার মজুমদার  বলেন, “আমাদের বিভাগে কোনো অভিযোগ করেনি, সে অভিযোগ করেছিল প্রক্টর বরাবর। সে আমাদের মৌখিকভাবে কিছু অভিযোগ করেছিল সহপাঠীদের বিরুদ্ধে। আমরা সে ব্যাপারে তাদের সাথেও কথাও বলেছি এবং তাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে সে সরাসারি প্রক্টরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।“

আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সরকার আলী আক্কাস বলেন, “অবন্তিকার মৃত্যুতে আইন বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমাদের বিভাগের মেধাবী ছাত্রী অবন্তিকার মৃত্যুর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচারের দাবি জানাই।

“তার মনের অবস্থাটা সে যে ফেইসবুকে পোস্ট করে মনের কথাগুলো বললো, সেগুলো যদি সে আমাদের আগেই বলত, তাহলে আমরা তাকে হয়ত বাঁচাতে পারতাম।“

অবন্তিকার মৃত্যুর পর শুক্রবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার সহপাঠী ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে বহিষ্কার ও দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন দ্বীন।

শনিবার রাতে আম্মান ও দ্বীনকে আসামি করে কুমিল্লা কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। 

রাতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার তাদের কুমিল্লার আমলি আদালতে হাজির করা হলে আম্মানকে দুদিন এবং দ্বীন ইসলামকে একদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

আরো পড়ুন 

Also Read: অবন্তিকার আত্মহত্যা: আম্মান ও দ্বীন রিমান্ডে