বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগে এসব কলেজে ভর্তি ও একাডেমিক কাজ চালিয়ে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্ব কোন অধ্যক্ষ দেবেন তা ‘প্রাথমিকভাবে’ ঠিক করেছে এ সংক্রান্ত কমিটি।
Published : 20 Mar 2025, 01:33 AM
আন্দোলনের মুখে হঠাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় ভেস্তে গেছে চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজধানীর সাত কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া; একাডেমিক অভিভাবকহীন এসব কলেজে যা আবার শিগগির শুরুর সম্ভাবনাও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগে কলেজগুলোর দায়িত্ব নিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের কথা থাকলেও তা এখনও হয়নি। এ প্রশাসন গঠনের পরই খুলবে ভর্তির রাস্তা।
এমন পরিস্থিতিতে চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যারা এসব কলেজে কিংবা প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন তারা সেশন জটের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে আশঙ্কা করছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।
কলেজগুলোর স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগে এসব কলেজে ভর্তি ও একাডেমিক কাজ চালিয়ে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্ব কোন অধ্যক্ষ দেবেন তা ‘প্রাথমিকভাবে’ ঠিক করেছে। ওই অধ্যক্ষের নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তবে কমিটির প্রধান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ওই অধ্যক্ষের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
ঈদের আগে আর সুযোগ নেই
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত রাজধানী ঢাকার এই সাত কলেজেও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায়। এরপর শুরু হওয়া ভর্তি প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়।
ভর্তির আবেদন আবারও কবে নাগাদ শুরু হতে পারে তা নিয়ে বুধবার ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, কোনো একাডেমিক কাঠামো গঠনের আগে নতুন করে ভর্তি শুরুর রাস্তা নেই। ইউজিসির প্রস্তাব অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের পর তা শুরু হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, " ইউজিসির পাঠানো প্রস্তাব এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন পায়নি, যা মনে হচ্ছে ঈদের আগে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।"
অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সাত কলেজের অন্তর্ভুক্তকালীন প্রশাসন ইউজিসি গঠন করবে। তারা এখনও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।"
আরও পড়ুন:
সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হচ্ছে 'ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’
সাত কলেজ: স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হলেও উচ্চমাধ্যমিক থাকছে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখার অতিরিক্ত সচিব ও প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন কমিটির সদস্য নুরুন আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ বিষয়ে ইউজিসি কাজ করছে।"
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সাত কলেজকে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে এরইমধ্যে 'ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি' নাম ঠিক করা হয়েছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি। প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের আগে কলেজগুলোর দায়িত্ব নিতে সাত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব করেছে মঞ্জুরি কমিশন।
বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দায়িত্ব আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিলেও নতুন শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ওপর বর্তাবে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির পাঠানো ওই প্রস্তাব ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দ্রুত অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের তাগিদ
ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে থাকায় সেশন জট সৃষ্টির আশঙ্কার কথা বললেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলনে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি স্মৃতি আক্তার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "সেশন জট ঠেকাতে আমাদের অন্তর্বর্তী কাঠামোটা দ্রুত হওয়া দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ কাঠামো গঠন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেছে। আমরা আশা করব সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দ্রুত অন্তর্বর্তী কাঠামোটা গঠন করা হবে।”
ইউজিসি সবগুলো কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেই অন্তর্বর্তী কাঠামোর প্রস্তাব তৈরি করেছে বলেও তথ্য দেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্বে কে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগে সরকারি সাত কলেজের ভর্তি ও একাডেমিক কাজ চালিয়ে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্ব কোন অধ্যক্ষ দেবেন তা 'প্রাথমিকভাবে ঠিক করার’ কথা বলেছেন কলেজগুলোর স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তবে ওই অধ্যক্ষের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
আরও পড়ুন:
অধিভুক্তি থেকে 'মুক্তি মিলছে', সাত কলেজের সামনে কী
ঢাবি থেকে আলাদা হচ্ছে ৭ কলেজ, ভর্তি বন্ধ এ বছরই
ওই অধ্যক্ষের নাম প্রস্তাব আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, "মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর ওই অধ্যক্ষের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠন করা হবে।"
বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্ব কোন অধ্যক্ষ দেবেন তা আমরা অলরেডি প্রাথমিকভাবে ঠিক করছি। তার নাম প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে।"
ইউজিসির প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সাময়িক একটি সমন্বিত কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজের দায়িত্ব পালন করবে।
ইউজিসি যে কাঠামোর প্রস্তাব করেছে সে অনুযায়ী, কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সাত কলেজের নজরদারি সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। কাঠামোটির পরিচালক হবেন নজরদারি সংস্থা মনোনীত সাত কলেজের মধ্য থেকে একজন ‘যোগ্য ও অভিজ্ঞ’ অধ্যক্ষ।
প্রস্তাবিত কাঠামোতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক নির্দেশনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তা সাত কলেজের শিক্ষার্থী সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহায়তা করবেন। একইভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে ওই কাঠামোকে সহায়তা করবেন।
অপরদিকে অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কাজে সহায়তা দেবে। সাত কলেজের জন্য অনলাইন ভর্তি কমিটি থাকবে।
এ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরের কোনো উপযুক্ত কার্যালয়ে (যে কলেজ থেকে পরিচালক মনোনীত হবেন) থেকে পরিচালিত হবে; এই কাঠামোর অধীনে সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত হবে।
এ প্রস্তাবিত ব্যবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন করে নেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগ প্রস্তাবিত কাঠামোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে। নিয়োগ পাওয়ার পর প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমে ’অপারেশন ম্যানুয়েল’ প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেবেন।
কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ’নাম হারাবে না’ সাত কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরিত হলেও সরকারি এই সাত কলেজ তার নিজস্বতা হারাবে না বলে মনে করছেন রূপরেখা প্রণয়ন কমিটির প্রধান অধ্যাপক ফায়েজ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর কলেজগুলো নাম হারাবে না। সেভাবেই স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে।"
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ‘কলেজিয়েট ঘরানার’ না কি স্বায়ত্তশাসিত অনুষদভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো হবে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন,"সেটি এখনো গবেষণা ও আলোচনা পর্যায়ে আছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সব ঠিক করা হবে।“
আরও পড়ুন:
মধ্যরাতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, থমথমে পরিস্থিতি