ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস, আমেরিকায় অভিবাসিত সেই জার্মান নাপিত ফ্রেডরিক ট্রাম্পের নাতি ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতেই আজ নিপীড়িত হচ্ছে আমেরিকান অভিবাসীরা।
Published : 19 Mar 2025, 12:56 AM
অভিবাসীদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিউ ইয়র্ক শহরের বন্দর এলাকায় ফ্রিডম আইল্যান্ডে এখনও দাঁড়িয়ে আছে ৪৬ মিটার উঁচু স্ট্যাচু অব লিবার্টি, হাতে তার বিরাট এক মশাল। ১৪০ বছর ধরেই সে ডাকছে অভিবাসীদেরকে– তোমরা যারা নিজ দেশে নির্যাতিত, যারা নিজ দেশে ধর্ম পালন করতে পারছ না, যারা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লেখা করতে চাও, তোমরা চলে এসো, এখানেই মিলবে তোমাদের আশ্রয়। ডনাল্ড জে. ট্রাম্পের অভিবাসন নিয়ে কড়াকড়িতে আজ সেই স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেন কাঁদছে। প্রথম মেয়াদে যেমন কড়াকড়ি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের, দ্বিতীয়বারের মত তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা বাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে।
স্ট্যাচু অব লিবার্টির ডাকে ১৮৮৫ সালের ৭ অক্টোবর ফ্রেডরিক ট্রাম্প নামের এক জার্মান নাপিত জাহাজে ফিরতি টিকিট না কিনেই চলে এসেছিলেন আমেরিকায়। তার উদ্দেশ্য ছিল জার্মানির তিন বছরের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ ফাঁকি দেওয়া। ফ্রেডরিক ছিলেন বেশ রুগ্ন। সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া তো দূরের কথা ভারী কাজ একদম করতে পারতেন না। তাই সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই ফ্রিডম আইল্যান্ডের মধ্য দিয়ে তিনি চলে এলেন নিউ ইয়র্কে, শহরের মূলভূমিতে।
ওয়াশিংটন পোস্ট ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাদা ফ্রেডরিক ট্রাম্পকে নিয়ে একটা নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, ফ্রেডরিক যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তখন পেশায় তিনি ছিলেন একজন নাপিতের সহকারী, ছোট্ট একটা বাক্সে সামান্য কাপড়চোপড় নিয়ে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নেমেছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট আরও লিখেছিল, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসন নীতিতে, তার পরিবারের মার্কিনি দলপতি দাদা ফ্রেডরিক ট্রাম্প কস্মিনকালেও যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারতেন না।” এই পত্রিকাতে আরও লেখা হয়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিবারের লোকজন সবসময় তাদের জার্মান পরিচয় লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করত। হয়তো নিজেকে অভিবাসী ভাবতে তারা পছন্দ করতেন না।”
১৯০৫ সালে জার্মান অভিবাসী এলিজাবেথ ক্রাইস্ট আর ফ্রেডেরিক ট্রাম্প সিনিয়রের ঘরে জন্ম হয় ডনাল্ড ট্রাম্পের পিতা ফ্রেডরিক ক্রাইস্ট ট্রাম্পের।এর এক শতাব্দীর একটু বেশি সময় পরে সিনিয়র ফ্রেডরিকের নাতি ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
জুনিয়র ফ্রেডরিকের ১৩ বছর বয়সে তার বাবা সিনিয়র ফ্রেডরিক মারা যান। তিনি মার্কিনিদের কাছে ফ্রেড ট্রাম্প নামে অধিক পরিচিত। গত শতাব্দীর বিশের দশকে কুইন্স অঞ্চলে ছোট ছোট বাড়ি, যেগুলো এক পরিবারের উপযোগী, বিক্রির মধ্যে দিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের ব্যবসা-বাণিজ্যের যাত্রা শুরু হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে মাঝারি আয় করা পরিবারদের সহজে গৃহায়ন সুবিধা দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দারুণ ব্যবসাসফল হন ফ্রেড ট্রাম্প। সেসময় গৃহায়ন খাতে মার্কিন সরকারের বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বড় করেন তিনি।উৎকৃষ্ট মানের বিল্ডিং বানানোয় প্রসিদ্ধ ছিলেন ফ্রেড ট্রাম্প। তার বানানো অনেক স্থাপনা এখনও টিকে আছে।ফ্রেড ট্রাম্প নিজেই যথেষ্ট ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন, তার উত্তরাধিকারী তো ডনাল্ড ট্রাম্প রীতিমতন ধনকুবের।
তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসী আমেরিকান এই ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনই এখন বিশ্বের ৪৩ দেশের নাগরিকদের ভিসা পাওয়া নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করতে কাজ শুরু করেছে। রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের দেওয়া তথ্য অবশ্য ৪১ দেশের কথা বলছে। জানুয়ারির ২০ তারিখ শপথ গ্রহণ করার পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একটা অধ্যাদেশ জারি করেন যার শিরোনাম ছিল– 'যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশী সন্ত্রাসবাদী ও অন্যান্যদের থেকে রক্ষা করা’। সেখানে বলা হয়, “এই অধ্যাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ওইসব লোকদের থেকে রক্ষা করবে যারা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক, যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে এবং যারা অভিবাসন নীতির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চায়। এই অধ্যাদেশের সময় সীমা আর মাত্র সপ্তাহদুয়েক আছে, এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেটস ডিপার্টমেন্টকে এই বিধি অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।তারই ধারাবাহিকতায় কাজ চলছে ৪৩ দেশের নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের, এর মধ্যে ইরান, আফগানিস্তান, ভুটানসহ ১১টা দেশ আছে লাল গ্রুপে, সেই সব দেশের নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য কোনোভাবেই বিবেচিত হবেন না। অন্য দুই গ্রুপ কমলা ও হলুদ, এইসব দেশের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা। কমলা গ্রুপে রাশিয়াও রয়েছে। এইসব দেশের যেসব লোক এরই মধ্যে ভিসা পেয়েছেন, তাদের স্ট্যাটাস কি হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। ট্রাম্পের গত মেয়াদে এই রকম ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাট্রের এয়ারপোর্টগুলোতে দারুণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।তখন ছিল ৮টা দেশ, তার মধ্যে ৬টাই ছিল মুসলিম অধ্যুষিত। এইবার ৪৩টা দেশ, ঝামেলা বাধবে আরও বেশি।
নিষেধাজ্ঞা সরকারিভাবে জারি হবে আরও পরে, আগেই তা পত্রিকাতে ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে কোনো বিশেষ কারণে। হোয়াইট হাউসের একজন প্রতিনিধি অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দৈনিক ‘ইউএসএ টুডে’কে একটা ইমেইল পাঠিয়ে এই খবর অস্বীকার করেছেন, ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি। এই নিয়ে যারা বলাবলি করছেন তারা নিজেরাও জানেন না, তারা কি বলছেন।’ এটা যে খুব যে দৃঢ় অস্বীকৃতি তা বলা যাবে না।
এরপর স্টেটস ডিপার্টমেন্টের একজন বললেন, যে তালিকা প্রকাশ পেয়েছে সেটা সঠিক নাও হতে পারে, এতে রদবদল হতে পারে, নতুন দেশ যুক্ত হতে পারে। মনে হচ্ছে সমস্ত ব্যাপারটা কেমন যেন লেজগোবেরে অবস্থায় আছে।
কাউস তত্ত্ব অঙ্ক শাস্ত্রের একটা বড় অজানা বিষয়। কিভাবে যে প্রকৃতির নিয়মের ও মানুষের মনের এবড়ো- থেবড়ো বিষয়গুলোকে সুনিনির্দিষ্টভাবে বোঝা যায় তা নিয়ে বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। গতিশীল জিনিসের মধ্যে যে এলোমেলো ভাব তা যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাতে বুঝবার কোনো উপায় নেই, এরপর কি হবে? ট্রাম্পকে বুঝতে বা বুঝতে না পারার জন্য এইটুকু কাউস তত্ত্ব জানলেই চলবে।যখন সবাই ধরে নিয়েছিল ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতির মূল মন্ত্র হলো ‘রাশিয়া তোষণ’, তখন তিনি বসালেন রাশিয়ার ওপর কমলা রংয়ের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।
বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি এমনিতেই কখনো মুক্ত ছিল না। মার্কিন স্টেটস ডিপার্টমেন্ট তাদের দূতাবাসে আগেভাগে জানিয়ে দেয় কতটুকু কড়াকড়ি একেকটা দেশে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত খুব ঘটা করে না জানিয়ে এটা প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু ট্রাম্পের সরকারের সবকিছুই ট্রাম্পীয়, তাতে ট্রাম্পের ছাপ থাকবেই। ২০১৮ সালে জাপানী ঔপন্যাসিক হারুকি মুরাকামি নিউ ইয়র্কার ফেস্টিভ্যালে ডেবোরাহ ট্রিজম্যানের সঙ্গে এক আড্ডায় তিনি যে খুব ভালো মানুষ নন সেটা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “একজন মানুষের পক্ষে একই সঙ্গে ঔপন্যাসিক এবং ভদ্রলোক হওয়া কঠিন। ধরুন, একজন রাজনীতিবিদ একই সঙ্গে বারাক ওবামা ও ডনাল্ড ট্রাম্প হতে চাইল। বিষয়টা অনেকটা সে রকম।”
তাহলে ডনাল্ড ট্রাম্প কী, ট্রাম্পের ছাপটাই কী, সেটা হলো কর্তৃত্ববাদী খামখেয়ালি, একতরফা সিদ্ধান্ত। নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘটা করে আগেভাগে ফাঁস করে দেওয়ার পেছনে যে যুক্তি, তাহলো তালিকায় যাদের নাম আছে তাদেরকে হুঁশিয়ার করা। তবে আমার মনে হয় এটা তাদের জন্যও যাদের নাম নেই তালিকায়।হয়তো বলছেন, মিশর, জর্ডান– তোমরা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তোমাদের দেশে নেবে না? তোমাদেরকেও ঢুকিয়ে দেব এই তালিকায়। আয়ারল্যান্ড, স্পেন, তোমরা ফিলিস্তিনিদেরকে সমর্থন করবে? তোমরাও নিরাপদ নও। কানাডা ৫১তম অঙ্গরাষ্ট্র হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। এই কথাগুলো আমি হালকাভাবে বলছি না– দীর্ঘদিন ট্রাম্পের মনস্তত্ত্ব পর্যবেক্ষণ করে বলছি।
ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস, আমেরিকায় অভিবাসিত সেই জার্মান নাপিত ফ্রেডরিক ট্রাম্পের নাতি ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতেই আজ নিপীড়িত হচ্ছে আমেরিকান অভিবাসীরা। সপ্তাহ দেড়েক আগে, নিউ ইয়র্ক সিটির কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র মাহমুদ খলিলকে এফবিআই ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার পাঁয়তারা করে। তিনি গ্রিনকার্ডধারী এবং তার স্ত্রী মার্কিন নাগরিক। তাকে ‘ইহুদীদেরকে অধিকার বঞ্চিত’ করার অপরাধে দোষী বলা হয়েছে। তার অপরাধ, তিনি ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যা করার প্রতিবাদ করেছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেছেন। কি নির্মম ট্রাম্পের কানুন! অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালত মাহমুদের বহিষ্কারাদেশ আপাতত স্থগিত করেছে। কিন্তু ভারতীয় শিক্ষার্থী রঞ্জনীকে আমেরিকা ছেড়ে আসতে হয়েছে। ‘হামাসের সমর্থনে আন্দোলনে’ অংশ নেওয়ার অভিযোগে রঞ্জনী শ্রীনিবাসন নামে ভারতীয় এই শিক্ষার্থীর ভিসা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আমেরিকা। রঞ্জনীও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। স্টুডেন্ট ভিসা নাকচ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি নিজেই মার্কিন মুলুক ছেড়ে চলে এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রঞ্জনী অহমদাবাদের সিইপিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর বৃত্তি নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজকর্মী হিসাবে সক্রিয় ওই ভারতীয় মেয়েটি ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন। আমেরিকার বেশ কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। নিউ ইয়র্ক শহরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অবস্থান-বিক্ষোভ এবং তার সঙ্গে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে পড়ুয়াদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।
ট্রাম্পের দাদা আমেরিকায় ভিসা ছাড়া, অবৈধ পথে ঢুকেছিলেন। এখন ট্রাম্প মাহমুদ খলিল ও রঞ্জনী শ্রীনিবাসনের মতো বৈধ পথে উচ্চ শিক্ষা নিতে যাওয়অ অভিবাসীকে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করছে। অন্য দেশ থেকে যারা বৈধ ভিসা নিয় যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে বা লেখাপড়া করতে আসতে চায়, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে।
এব্রাহিম রসুল ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত। তাকে যুক্তরাষ্ট্র ‘পের্শোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেছে, মোদ্দা কথা 'তোমাকে আমরা চাই না’। তার অপরাধ তিনি অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় যারা ক্ষমতায় রয়েছে, তাদেরকে অপসারণের জন্য একটা বর্ণবাদী ষড়যন্ত্র করছেন।’ এই সামান্য সমালোচনা যে কোনো দেশই কূটনৈতিক আলোচনায় মিটিয়ে ফেলবে। কিন্তু ট্রাম্পের গায়ের ফোসকা সারানো এত সহজ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামপোশা বলেছেন, ‘কূটনৈতিক শালীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে।’ এই শালীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য তাকে হয়তো বছর পাঁচেক অপেক্ষা করতে হবে।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি দিয়েই আলাপটা শেষ করি। যুক্তরাষ্ট্রকে এটি উপহার দিয়েছিল ফ্রান্স। উপহার দেওয়ার ১৪০ বছর পর স্ট্যাচু অব লিবার্টি ফেরত চেয়েছেন ফরাসি এমপি রাফায়েল গ্লুকস্ম্যান। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাশিয়া ঘেঁষা নীতির কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, আমেরিকা এখন আর ওই ভাস্কর্যের মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে না।
ফরাসি গণমাধ্যম লো মন্দের খবর অনুযায়ী, রাফায়েল নিজ রাজনৈতিক দলের এক সম্মেলনে বলছিলেন, “আমরা আমেরিকানদের বলতে চাই, যারা স্বৈরশাসকদের পাশে দাঁড়িয়েছে, যারা বিজ্ঞানের জগতে স্বাধীনতা দাবি করার জন্য গবেষকদের চাকরিচ্যুত করেছে, তাদের কাছ থেকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি ফেরত চাই,— স্ট্যাচু অব লিবার্টি আমাদের ফেরত দিন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আপনাদের এই ভাস্কর্য উপহার দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনারা সেটিকে আর মূল্য দিতে পারেননি। তাই এটি আমাদের কাছেই ভাল থাকবে।” তার এই বক্তব্যে উপস্থিত জনতা করতালি দিয়ে সমর্থন দিয়েছে।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি ফরাসি ভাস্কর অগুস্ত বার্তোলদির নকশায় তৈরি। এই তামার ভাস্কর্যটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার ১০৮ তম বর্ষপূর্তিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ফ্রান্সের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে উৎসর্গ করা হয়েছিল। ১৮৮৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উন্মোচন করেছিলেন।