এর আগে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি নিয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত হয়েছে অন্য নাম।
Published : 16 Mar 2025, 04:15 PM
ঢাকার সরকারি সাত কলেজকে নিয়ে যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, তার নাম হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর আন্দোলন টিমের ফোকাল পয়েন্ট ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সাত কলেজকে নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, সেটির নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি বা ডিসিইউ হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঢাকা ফেডারেল ইউনিভার্সিটি নামকরণের পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামটিই চূড়ান্ত করা হয়েছে।
"মোট ৪০টি নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল সেখান থেকে দুটি নামে আসে। সেখান থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামটিই চূড়ান্ত করা হল।"
ঢাকার সরকারি সাত কলেজ হল, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।
এক সময় দেশের সব ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হত ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
২০১৪ সালের শেষ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৭৯টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর ধারাবাহিতায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। কলেজগুলো হল ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাত সরকারি কলেজকে অধিভুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ করার কথা জানানো হয় গত ২৭ জানুয়ারি।
তার আগেই গত ডিসেম্বরে সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়।
ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই মঞ্জুরি কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একটি কাঠামো করার প্রস্তাব দেয়, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকার সরকারি সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে; আর পুরো কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি’ নামটি চূড়ান্ত হল।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদারও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামের নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া ‘আরেক ধাপ এগিয়েছে’।
“ইউজিসি সাত কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ হিসাবে চূড়ান্ত করেছে। ইউজিসি ইমেইলে মতামত নিয়েছেন। সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২৮টি টিম করা হয়েছে। তারা নিজেরা আলোচনা করে মতামত দিয়েছে। ২৮ জন টিম লিডারদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করা হয়েছে নতুন নাম।”
বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সাতটা কলেজের প্রশাসনিক কাজ কীভাবে চলবে সেটা চূড়ান্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। ঢাবি সিন্ডিকেট অনুমোদন করলে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কার্যকর হয়ে যাবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অচিরেই বিষয়টি নিয়ে বসবেন জানিয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। সাতটা কলেজের অধ্যক্ষদের কোনো একজনকে মনোনীত করা হবে প্রশাসক হিসাবে।
“ইতোমধ্যে ইউজিসি সাতজন অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই কলেজেই হবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের প্রশাসনিক ভবন বা হেড কোয়ার্টার্স। সাতটা কলেজের মধ্যে কো অর্ডিনেশন ডেস্ক তৈরি করা হবে। সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষরা থাকবেন কো অর্ডিনেশনের দায়িত্বে।”