“অধ্যাপক নাদির জুনাইদ শ্রেণিকক্ষে ভালো শিক্ষক হতে পারেন, কিন্তু তিনি মানসিকভাবে অস্থিতিশীল, বিকারগ্রস্ত,” লিখেছেন সেই ছাত্রী।
Published : 29 Feb 2024, 12:10 AM
যৌন হয়রানির অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের আরেকটি অভিযোগ এসেছে।
এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন রাজধানীর অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট টিচার হিসেবে ক্লাস নিতেন নাদির জুনাইদ।
ওই শিক্ষার্থী বুধবার ই মেইলের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে তার লিখিত অভিযোগ পাঠান। তার একজন প্রতিনিধিও প্রক্টর অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগটি জমা দেয়।
প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগ ই-মেইলেও পেয়েছি, হার্ড কপিও পেয়েছি। ইতিমধ্যে অভিযোগটি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তরফ থেকে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
লিখিত অভিযোগে সেই শিক্ষার্থী বলেছেন, তিনি ২০২১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। নাদির জুনাইদ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্স পড়ানোর জন্য অতিথি শিক্ষক হিসেবে যেতেন। শ্রেণি প্রতিনিধি হওয়ায় সেই শিক্ষার্থীকে স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ রাখতে হত শিক্ষক জুনাইদের সঙ্গে। কিন্তু জুনাইদ সেটা ব্যক্তিগত যোগাযোগের পর্যায়ে নিয়ে যান এবং মোবাইল ফোনে, মেসেঞ্জারে ও সাক্ষাতে তার সঙ্গে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন, এমনকি বিয়ের প্রস্তাবও দেন।
বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রেণিকক্ষে হেনস্তা করা হত এবং নানাভাবে কটূক্তি করা হত বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থী।
তার সহপাঠী আরেক ছাত্রীকেও নাদির জুনাইদ বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং একইভাবে হেনস্তা করেছেন অভিযোগ করে তিনি লিখেছের, “অধ্যাপক নাদির জুনাইদ শ্রেণিকক্ষে ভালো শিক্ষক হতে পারেন, কিন্তু তিনি মানসিকভাবে অস্থিতিশীল, বিকারগ্রস্ত। তাকে শিক্ষকতা করতে দেওয়ার অর্থ শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ এক ‘সিরিয়াল হ্যারাসার’ এর হাতে তুলে দেওয়া।”
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের একটি ব্যাচের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ইচ্ছাকৃতভাবে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগে তোলেন নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে। এরপর ওই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করেন প্রক্টরের কাছে। সঙ্গে কিছু অডিও রেকর্ড ও মেসেজের স্ক্রিনশটও জমা দেন তিনি।
সে সময় অভিযোগ অস্বীকার করে নাদির জুনাইদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার’ হচ্ছেন তিনি।
এদিকে যৌন হয়রানির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক নাদির জুনাইদের অফিস কক্ষে তালা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের তালায় সিলগালা করে দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন।
সেই প্রেক্ষাপটে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষককে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ নেবে তা জানতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন।
পুরনো খবর
ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
যৌন হয়রানি: ১০ দিন সময় দিয়ে ক্লাসে ফিরলেন ঢাবি সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা
ঢাবিতে ‘যৌন হয়রানি’: শিক্ষক নাদির জুনাইদকে ৩ মাসের ছুটি
ঢাবিতে যৌন হয়রানি: শিক্ষক নাদির জুনাইদের কক্ষে তালা ঝুলিয়েছেন শিক্ষার্থীরা
ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ