"আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গর্বিত উত্তরাধিকার বহন করছি, যা আমাদেরকে সাহস দেয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরো জাতিকেও সাহস দেয়।"
Published : 02 Mar 2025, 04:26 PM
যারা ইতিহাস নির্মাণ করেন, তারা ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।
ঐতিহাসিক ‘পতাকা উত্তোলন দিবস’ উপলক্ষে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন ১৯৭১ সালের ২ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারী সাবেক ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।
আ স ম আবদুর রবের জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান এবং পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার ভূমিকার কথা স্মরণ করে উপাচার্য বলেন, "যারা ইতিহাস নির্মাণ করেন, তারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। আমরা আ স ম আবদুর রবকে ব্যক্তিগত পরিচয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।
“শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। ঐতিহাসিক এ দিবস উদযাপনে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছেন।"
নিয়াজ আহমদ খান বলেন, "দেশ নানামুখী প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্রে মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঐক্য ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। ঐক্য ধরে রাখতে এই উদ্যোগগুলো আরো আন্তরিকতার সঙ্গে আয়োজন করা জরুরি।"
দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গর্বিত উত্তরাধিকার বহন করছি, যা আমাদেরকে সাহস দেয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরো জাতিকেও সাহস দেয়।"
১৯৭১ সালের ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন সে সময়কার ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব। শিবনারায়ণ দাশের নকশায় তৈরি ওই জাতীয় পতাকার মাঝখানে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার শিবনারায়ণ দাশের নকশা করা পতাকার মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও এর ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটুয়া কামরুল হাসানকে। তার পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে লাল বৃত্ত, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়।
সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, লাল বৃত্ত উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক।
সেই ইতিহাস স্মরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা অনুষ্ঠানে বলেন, "আমরা ঐতিহাসিক দিনে সমাবেত হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় পতাকা উত্তলনের মাধ্যমে আর ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়। জাতীয় পতাকা আমাদের ঐক্যের জায়গা। এটা আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করে।
“সব ধরনের আন্দোলনে বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় পতাকাকে সামনে নিয়ে একতাবদ্ধ হয়। আমরা নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একতাবদ্ধ হব।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, "একটি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা। যাদের রক্তের মিনিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদেরকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।"
এসময় তিনি ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪-এর আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আহতের আরোগ্য কামনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদের সঞ্চালনায় এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।