ফরহাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চায়। আমরাও চাই। তবে ডাকসু আয়োজন করতে প্রশাসন যদি অতিরিক্ত সময় চায়, যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে।”
Published : 13 Jan 2025, 06:00 PM
চলতি মাসের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
সোমবার বিকালে মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের পক্ষে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের ৯ প্রস্তাব তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান।
ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, “আমরা যে সংস্কার প্রস্তাব করছি, অন্যান্য সংগঠনগুলোও করবে। এর মধ্যে সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে যৌক্তিক সংস্কারগুলো নিশ্চিত করে জানুয়ারির মধ্যে ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চায়। আমরাও চাই। তবে ডাকসু আয়োজন করতে প্রশাসন যদি অতিরিক্ত সময় চায়, যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে।”
নির্বাচন ঘিরে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সংঘাতের আশংকা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ডাকসু একটি প্রতিযোগিতামূলক জায়গা। আমরা এটিকে দ্বন্দ্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই না। বরং প্রতিযোগিতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই।
“তাছাড়া নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন হলে কোনো সংগঠন আগ বাড়িয়ে সংঘাতে জড়াবে না। কারণ কেউ যদি আগ বাড়িয়ে সংঘাতে জড়ায়, শিক্ষার্থীরা তাকে আর ভোট দেবেন না।”
৯ প্রস্তাব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যামান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপাচার্য পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি মনোনিত হন। তার তত্ত্বাবধানে সকল সভা, নির্বাহী কমিটি, অন্যান্য কমিটি ও উপকমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সংসদ পরিচালনা, জরুরী অবস্থা, অচলাবস্থা বা নিয়ম ভঙ্গের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। যেকোনো সময় একোনো কমিটির সদস্যকে বহিস্কার বা সম্পূর্ণ কমিটি বাতিল বা নতুন নির্বাচন আহবানসহ একাধিক ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রশিবির বলছে, অনির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও সভাপতিকে যে অসীম স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা যেকোনো অর্থেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
সভাপতির এসব ক্ষমতা হ্রাস করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রশিবির। তারা সভাপতি পদটিকে একটি আলঙ্করিক করার প্রস্তাব করেছে, যেখানে সভাপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২০১৯ সালের সংশোধিত সম্পাদকীয় পদ অনুযায়ী ডাকসুতে ১৪ টি পদ রয়েছে। এরমধ্যে কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদকে আলাদা করে ‘পাঠাগার, পাঠকক্ষ ও কমনরুম বিষক সম্পাদক’ এবং ‘ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিন বিষয়ক সম্পাদক’ পদ তৈরির প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। এছাড়াও ‘সাহিত্য সম্পাদক’ ও ‘সংস্কৃতি সম্পাদক’ পদকে একীভূত করে ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক’ পদ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
‘নারী ও সমতা বিষয়ক সম্পাদক’, ‘ধর্ম ও সম্প্রীতি বিষয়ক সম্পাদক’ নামে নতুন পদ তৈরির প্রস্তাব করেছে ছাত্রশিবির।
নতুন দুই পদ প্রস্তাবের বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, “আমাদের সবগুলো হলের মধ্যে ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধর্মের শিক্ষার্থীরা আছেন, তাদের মধ্যকার আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি এবং ধর্মের সত্যিকারের অধিকার ঠিকঠাক সংরক্ষণ হচ্ছে কি না, তা দেখতে এই পদ তৈরির আহ্বান করেছি।”
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদ পরিবর্তন করে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক’ পদ চালুর প্রস্তাব করেছে ছাত্রশিবির।
নতুন পদে যারা আসবেন, তারা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে দেশের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশী জাতীয়বাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
এছাড়াও ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। আগে ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ৯০ দিন কমিটির মেয়াদ থাকত।
ছাত্রশিবির প্রস্তাব করছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেবে। এছাড়াও ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের ক্ষমতা সিন্ডিকেট থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দেওয়া ও যেকোনো এজেন্ডা আলোচনার পর সভাপতির অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রশিবির।