“বিগত সময়ে সবকিছু আওয়ামী লীগ সরকার নির্ধারণ করে দিত- কী হবে। এবার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন,” বলেন এক পাহাড়ি।
Published : 14 Apr 2025, 01:54 PM
চারুকলা অনুষদ থেকে গিটার হাতে শোভাযাত্রায় হাঁটছে একদল ক্ষুদে শিল্পী। সামনে একটু এগোতেই কণ্ঠে তুলল পাহাড়ি গান।
বাংলা বর্ণবরণের আনন্দ শোভাযাত্রায় শামিল হওয়া এই পাহাড়ি শিশুরা বলছিলেন, নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে তারা এখানে এসেছেন।
তাদের একজন ডুচাঙ্গো তঞ্চঙ্গা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পাহাড়ের মানুষরা বিগত সময়ে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সুযোগ পাইনি। আমরা সবসময় বঞ্চনার শিকার হয়েছি।
“বিগত সময়ে সবকিছু আওয়ামী লীগ সরকার নির্ধারণ করে দিত- কী হবে। এবার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। আমরা আমাদের মত, আমাদের সংস্কৃতির মাধ্যমে নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছি।”
নানা মত-পথের মানুষকে আনন্দ শোভাযাত্রায় দেখা গেছে। কেউ কেউ হাজির হন প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে। ‘শ্রমিকের নায্য পাওনা বুঝিয়ে দাও’, ‘ভারতের সাথে সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘জুলাই গণহত্যার বিচার কবে?’, ‘Free Free Palestine’ সহ নানা প্ল্যাকার্ড দেখা গেল হাতে হাতে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া কয়েকজন বলছিলেন, ফ্যাসিবাদের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা হোক-এটাই তাদের নববর্ষের প্রত্যাশা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার বলেন, “ভারত আমাদের পানি দিয়ে মারে। বর্ডারে মানুষ মারে। বিভিন্ন সময় তারা এদেশে নানা নৈরাজ্যের কারণ হয়। আমরা আর চাই না, তাদের সাথে আমাদের অসম চুক্তি থাকুক।"
শোভাযাত্রায় ভিন্নধর্মী বার্তা নিয়ে হাজির হন সৌরভ দাস। প্রাণীদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে তার প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘Don't Abuse Animal’।
সৌরভ বললেন, “বাংলাদেশের একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে- প্রাণীদের নির্যাতন করা। আমরা নতুন বছরে তা বন্ধ করার দাবি জানাই।"
শোভাযাত্রাকে প্রাণবন্ত করতে ঘোড়ার বহর ছিল জানিয়ে চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন বলেন, “নববর্ষকে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর করে তুলতে আমাদের এ আয়োজন। মানুষের তুষ্টিই আমাদের আনন্দ।
“আমরা এতো সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে আরও রঙিনভাবে বরণ করার পাশাপাশি ব্যতিক্রমী করার প্রয়াসে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়িগুলো রেখেছি।"
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর বলছে, এবছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ফারহানা ফারুল বলেন, “আমি বেশ কয়েকবছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নববর্ষ পালন করি। তবে এবারের আয়োজন আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে।
“কোনো আর্টিফিসিয়াল লোক দেখানো কিছু নেই; সবাই যেন নববর্ষে আনন্দে মেতে উঠেছে।”
রাঙামাটি থেকে আসা মৌসুমি চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমবার আমরা নববর্ষে আমন্ত্রিত হয়েছি এবং আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পেরেছি। নববর্ষ যে সবার- তা আমরা এবারই দেখেছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন বিডিনিউজকে বলেন, “এবারেই প্রথম চারুকলায় এমন আয়োজন, এর আগে কখনোই এমন আয়োজন হয়নি। এর আগে প্রচার করা হয়েছে এটা বাঙালির উৎসব।
“এবারেই আমরা সেটাকে বাংলাদেশিদের উৎসব বলছি। এবারেই প্রথম বাংলাদেশের ২৮টি ভিন্ন জনগোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। আমরা তাদেরকে অতিথির মত স্বাগত জানিয়েছি।”