করের আওতা বাড়ুক, বন্ধ হোক পোশাক খাতের নগদ প্রণোদনা: সিপিডি

“রপ্তানি খাতে যেসব পণ্য শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে তাদের ছাড় দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2023, 12:03 PM
Updated : 27 March 2023, 12:03 PM

তৈরি পোশাকসহ যেসব রপ্তানি খাত শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে, সেগুলোতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনা বন্ধের সুপারিশ করেছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি।

রাজস্ব আয় প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না জানিয়ে করের আওতা বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বড় ব্যবসায়ীদের কর ছাড়ও বন্ধ করে দিতে বলেছে তারা।

সোমবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি এবং সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।

ফাহমিদা মনে করছেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। তিনি বলেন, অর্থবছরের ছয় মাস শেষে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় কমেছে তিন দশমিক ১ শতাংশ। জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হতে পারে।

গত ডিসেম্বরের অর্থনীতির অবস্থা দেখে সিপিডি জানিয়েছিল, ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। সেটি আরও বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় ফাহিমদা খাতুন বলেন, “রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ভ্যাট খাত। আর বৈদেশিক মুদ্রার কড়াকড়িতে আমদানি কমে যাওয়ায় এবার খাতটি থেকে কম আদায় হয়েছে।”

এই ঘাটতি পূরণে সিপিডির পরামর্শ, “করের আওতা বাড়াতে জোর দিতে হবে। বড় ব্যবসায়ীদের যে কর ছাড় দেওয়া হয় তা বন্ধ করার সময় হয়েছে। রপ্তানি খাতে যেসব পণ্য শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই।”

সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দিয়ে থাকে বাংলাদেশ, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। এ খাতে যে প্রণোদনা দেওয়া হয় তাও ভর্তুকি হিসেবেই যাচ্ছে।

“রপ্তানিসহ যে কয়টি খাত শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রণোদনাগুলো এখন উদীয়মান খাতগুলোকে দেওয়া প্রয়োজন।”

বাজেটে ছয় খাতে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব নীতি কাঠামো সংস্কার, নিত্যপণ্যের দর বৃদ্ধি, ভর্তুকির পুনর্বিন্যাস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ ইস্যুতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির সুপারিশ করা হয় সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে।

ফাহমিদা বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কিছু ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলার নীতিকাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।”

ছয় মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার কারণে ব্যাংকে তারল্য কমে যাচ্ছে বলেও মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। 

ব্যাংক খাতের ‘দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি বাড়ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা জানতে কমিশন গঠন করার জন্য বলে আসছি। কমিশন তাদের সুপারিশগুলো সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে। সে অনুযায়ী কাজ করলে ফলাফল ভালো আসবে।”

সুদহার এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শও দেন ফাহমিদা। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা গতবারের মতই সাড়ে তিন লাখ টাকা রাখার প্রস্তাব করেন।

আমদানি পণ্যে শুল্ক সমন্বয়ের সুপারিশ করে ফাহমিদা বলেন, “বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পরও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেনি বাংলাদেশে, উল্টো বেড়েছে নিয়মিত। এজন্য আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনেক দুর্বলতা রয়েছে।”

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ‘দুরাবস্থার’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “চিকিৎসা খাতে ১০০ টাকা খরচ হলে তার ৭০ শতাংশেরই যেগান দেয় জনগণ। এখাতে গুরুত্ব ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।”

পরিবেশ ইস্যুতে ডিজেলের বিকল্প হিসেবে নবয়ানযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি লাভজনক রয়েছে জানিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “সরকার বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত কেন্দ্র বসিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে এ খাতে দেওয়া ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির দায় জনগণের উপর চাপাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেলের দাম কমলেও আমাদের বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে।’’

কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রেখে সামাজিক সুরক্ষার পরিসর বাড়ানোও সুপারিশ করেন তিনি।