শীতের সবজিও চড়া, স্বস্তি শুধু ব্রয়লার মুরগিতে

“দাম বাড়তি সবকিছুর, চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মাছ-মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা,” বললেন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আবুল হাশেম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2022, 03:31 PM
Updated : 25 Nov 2022, 03:31 PM

শীতের সবজিতে বাজার ভরে উঠলেও মন বেজার করেই ঘরে ফিরতে হচ্ছে রাজধানীর ক্রেতাদের; মুলা আর পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই মিলছে না সহনীয় দামে।

দাম চড়া চাল, আটা, চিনি ও তেলেরও। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমলেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু-খাসির মাংস ও সোনালি মুরগি।

শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকার মিরপুর, আগারগাঁও ও মহাখালী এলাকার চারটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহের এ সময়ে চড়া দামে ক্রেতাদের অসন্তোষ থাকলেও বরাবরের মত পাইকারি দাম ও পরিবহন ব্যয়কে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা।

মিরপুর ছয় নম্বর কাঁচাবাজারে কথা হচ্ছিল সরকারি চাকুরে ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলছিলেন, “ছুটির দিনে সকাল সকাল বাজার করি। শীত আসায় টাটকা কিছু সবজি কেনার জন্য এসেছি। কিন্তু দাম অনেক বেশি।

“মুলা-পেঁপে ছাড়া সবকিছু ৬০-৭০ টাকা কেজি নিচ্ছে। মাছ মাংসেরও দাম বেশি। মধ্যবিত্তের জন্য দিন পার করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।“

তবে এ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন সবজির দাম বেশি মানতে নারাজ। তার ভাষ্য, “আড়তে সবজি আসছে অনেক। কিন্তু পাইকারদের কাছ থেকে আমরা কমদামে কিনতে পারছি না। যেমন দামে কিনব, তেমন দামেই তো বিক্রি করতে হবে।“

আগারগাঁও তালতলা বাজারে আসা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিটায়ার্ডের পর খুব অল্প টাকায় চলা লাগে। দাম বাড়তি সবকিছুর, চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মাছ-মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা।“

সবজির বাজারও চড়া

রাজধানীর মিরপুরের দুই ও ছয় নম্বর বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। ভাল মানের শীতের সবজি গড়ে কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই দুই বাজারে লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা আর গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। শিমের কেজি ৫০-৬০ টাকা, আকার ভেদে পাতাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়।  অন্যদিকে করলার কেজি ৬০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০ টাকা, আকারভেদে লাউ ৫০-৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা এবং ধুন্দুল কেজিতে ৬০-৭০ টাকায় বেচতে দেখা গেছে।

নতুন আলুর দামের উত্তাপ আরও বেশি। প্রতি কেজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়।

আগারগাঁও ও মহাখালী কাঁচাবাজারেও এমন দামেই শীতের সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা সাব্বর আলী বলেন, “সবজির দাম তো কমে নাই। ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ, ১০০ গ্রাম ধনেপাতা, একটা লাউ আর এক কেজি আলু কিনতে ১৩০ টাকা চলে গেল।“

তবে সব বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরাই বলছেন, পাইকারি আড়তে সবজি অনেক আসলেও কমদামে কিনতে পারছেন না তারা, ফলে দাম কমছে না খুচরা বাজারে।  

স্বস্তি নেই মুদি দোকানেও

সবজির দাম নিয়ে হতাশ হয়ে ক্রেতারা স্বস্তি পাচ্ছেন না মুদি পণ্যেও। বাজারে আটা ও চালের দাম বেড়েছে; বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি ও তেল।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্যাকেটজাত আটা কেজিতে আবার ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ময়দার ক্ষেত্রেও তাই, ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পরিশোধনকারীদের ঘোষিত বাড়তি দরেই সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৯০-১৯২ টাকা। আর চিনির বাজারে অস্থিরতা কমেনি; সরবরাহ না থাকার কথা বলে বাজারভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

মহাখালী কাঁচাবাজারের বরিশাল জেনারেল স্টোরের স্বতাধিকারী বলেন, “দাম বাড়ে নাকি কমে- বুঝি না। কখন কোনটার কী দাম থাকে, কোনো ঠিক নাই। যখন যে দামে কিনি, তখন সেই দামে বেচি।“

সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে চিকন চালের দামও। মিনিকেট চাল মানভেদে ৬৮-৭২ টাকা, পাইজাম চাল ৬২-৬৫ টাকা এবং মোটা চাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মহাখালী কাঁচাবাজারের চালের দোকান জাকির ট্রেডার্সের স্বতাধিকারী ‘বেশি দামে কেনার’ একই যুক্তি দাঁড় করান।

দাম বেশি থাকায় চাহিদার তুলনায় কম কিনে হাত গোটাতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মিরপুর দুই নম্বর বাজারে আসা ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী শামীম হোসেন বলেন, “শুক্রবারে সপ্তাহের বাজার করি। জিনিসের দাম এত বেশি, যে টাকা নিয়ে এসেছি- তাতে হচ্ছে না। অনেককিছু না কিনেই ফিরতে হবে।“

ব্রয়লারে কিছুটা স্বস্তি, মাছ-মাংস আগের মতই

আমিষের বাজারে আসা ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের কেনার বেলায়। বাজারভেদে কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের তুলনায় ৫-১০ টাকা কমে ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে ব্রয়লার ডিমের দামও। হালিপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়, ডজন ১২০-১২৫ টাকা।

তবে দাম কমেনি সোনালি মুরগির। প্রতি কেজি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংস এখনও সাধারণের নাগালের বাইরেই আছে। এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পকেট থেকে চলে যাচ্ছে ৭০০ টাকা আর খাসির ক্ষেত্রে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা।

মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকার মাংসবিক্রেতা ইমাম হোসেন বলেন, “গরুর দাম অনেক বেশি। তার ওপর দোকান খরচ, কর্মচারীর বেতন- সবই বেশি। ৭০০-এর নিচে এক কেজি গরু বিক্রি করলে কিছু থাকে না। মানুষ এখন আর আগের মতো গরু-খাসির মাংস কেনে না।“

মহাখালী বাজারে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইসমাইল হোসেন মোল্লা বলেন, “দাম বেশি তাই গরু-খাসির দিকে যাই না। রুই মাছ নিলাম। সেটাও তুলনামূলক দামে বেশি।“

নিম্নআয়ের মানুষের আগ্রহের তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়; পাঙাস ২০০ টাকায়; সিলভার কার্প ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়; রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়; পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়; চাষের কই ২৪০ টাকা; আর চিংড়ি আকারভেদে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুরের ছয় নম্বর বাজারে মাছ কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলমগীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “এখন আর পছন্দের মাছ খাওয়ার দিন নাই। যে মাছের দাম কম পাই, সেটাই কিনি।“

আরও পড়ুন:

Also Read: তবুও ভোজ্যতেল-চিনির ঘাটতি

Also Read: ‘শুধু পেট বাঁচাতেই কেনাকাটা’

Also Read: চাল আটা পেঁয়াজে গুনতে হচ্ছে আরও বেশি, কমেছে ডিম মাছের দাম

Also Read: সিত্রাং বাড়াল সবজির দর; আটা চিনি পেঁয়াজ ফের ঊর্ধ্বমুখী

Also Read: বাজারের উত্তাপ এবার ব্রয়লার মুরগিতে

Also Read: ‘সবজির বাজারেও হাত পোড়ার অবস্থা’