চাল আটা পেঁয়াজে গুনতে হচ্ছে আরও বেশি, কমেছে ডিম মাছের দাম

প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দর বাড়ছে, যা বাজারে গেলেই টের পাওয়া যায়, বলছেন ক্রেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2022, 12:52 PM
Updated : 4 Nov 2022, 12:52 PM

আরেক দফা বেড়েছে চাল, আটা, পেঁয়াজ, রসুন, ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় আরও কিছু পণ্যের দাম; তবে মাছ ও ডিমের দাম কিছুটা কমতে দেখা গেছে ঢাকার কাঁচাবাজারগুলো।

শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, মহাখালী কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে বিভিন্ন পণ্যের দর পরিবর্তনের এমন চিত্র পাওয়া যায়।

দোকানিরা বলছেন, পাইকারি দর বাড়ার কারণেই খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আবার কোনো পণ্যের দাম কমলে খুচরা বাজারেও কমিয়ে দেন তারা।

তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক ও পাইকারি বাজারে ঊর্ধ্বগতির অজুহাত তুলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা সব সময় দেখা যায়। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দর বাড়ছে, যা বাজারে গেলেই টের পাওয়া যায়।

শুক্রবার বিভিন্ন খুচরা বাজারভেদে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মত সরু চাল কেজিতে ৬৬ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়, যেগুলো গত সপ্তাহে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা ছিল।

এছাড়া আগের সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পাইজাম ও স্বর্ণা জাতের মাঝারি ও মোটা চাল বিভিন্ন বাজারে ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মালিক মো. মহসিন জানান, তারা ট্রাক করে দিনাজপুর, বগুড়া ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মিল থেকে চাল এনে বিক্রি করেন। প্রতি বস্তায় গড়ে মিলেই দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

আমন ধান ওঠার এসময়ে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি এর দায় মিল মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেন।

এদিকে গত সপ্তাহে আটা ও ময়দার দর এক দফা বাড়ার পর এ সপ্তাহে আবার বেড়েছে। গত সপ্তাহের চেয়ে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে খোলা আটার কেজি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা এবং প্যাকেট আটা ৬৫ টাকা। গত সপ্তাহে ময়দা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা হয়েছিল। এ সপ্তাহে আরও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়।

এছাড়া গত সপ্তাহ পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বাড়ার পর এ সপ্তাহে আরও ৫ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে রসুনের দর বেড়েছে ১০ টাকা। আমদানি করা রসুন গত সপ্তাহে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও তা বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে লিটারে ১৫ টাকা দর বাড়ানোর প্রস্তাব করে তা সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এরপর থেকে বাজারে তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানে সয়াবিনের সংকট দেখা দিয়েছে বলে ক্রেতা ও দোকানিরা জানিয়েছেন।

শান্তিনগরের এক দোকানি জানান, ডিলাররা তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। আগের তেল বোতলের গায়ে লেখা মূল্য ধরেই বিক্রি করছেন।

তবে খোলা তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। বোতলজাত তেল লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়।

সবশেষ গত ৩ অক্টোবর সয়াবিন তেল লিটারে ১৪ টাকা কমানো হয়। সেই অনুযায়ী সয়াবিন তেলের ১ লিটারের বোতল ১৭৮ টাকা আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৮ টাকা করা হয়।

রামপুরা বাজারের তাহের স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, “কয়েক দিন ধরে তেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, ডিলাররা তেল কমিয়ে দিয়েছে। শুনছি আবার দাম বাড়ছে।”

সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “বাজারে এমন কোনো জিনিস নেই যে দাম বাড়েনি, প্রতিদিন এটা-সেটার দাম বাড়ছেই। কোনো কিছুর দাম কমতে তো দেখি না।“

দামে ঊর্ধ্বমুখী এসব পণ্যের বিপরীতে গত সপ্তাহের চেয়ে ডিম ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও তা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।

শান্তিনগরের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী সোহেল রানা জানান, পাইকারিতে দর কমায় তারা খুচরায় ডজনপ্রতি কমিয়েছেন ১০ টাকা করে।

এছাড়া সরবরাহ বেশি হওয়ায় মাছের দরও কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

একই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. সোহেল বলেন, “এখন দেশি মাছের মৌসুম, বাজারে প্রচুর মাছ এসেছে। যে কারণে দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।”

তিনি জানান, যে বোয়াল এখন ৬০০ টাকা কেজি, তা কয়েক দিন আগেও ছিল ৭০০ টাকার বেশি। একইভাবে বড় আইড় মাছ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলোর দাম এক হাজার টাকার ওপরে ছিল।

বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ তেমন দেখা না গেলেও বড় বড় পাঙ্গাস মাছ দেখা গেছে দোকানে দোকানে যাকে নদীর বলে দাবি দোকানিদের।

মাছ বিক্রেতা সোহেল জানান, ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের পাঙ্গাস মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন তারা।

ইলিশ সবেমাত্র আশা শুরু হলেও দাম আগের মতই রয়েছে। এক কেজি ওজনের মাছ ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং এক থেকে দেড় কেজি ওজন হলে ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা দর হাঁকছেন বিক্রেতারা।

Also Read: সিত্রাং বাড়াল সবজির দর; আটা চিনি পেঁয়াজ ফের ঊর্ধ্বমুখী

Also Read: বাজারের উত্তাপ এবার ব্রয়লার মুরগিতে

Also Read: ছুটির প্রভাবে ক্রেতা কম মাছের; ঝাঁজ বেড়েছে কাঁচামরিচে

Also Read: চিনিতে প্রভাব নেই সরকারি দামের

Also Read: ‘সবজির বাজারেও হাত পোড়ার অবস্থা’

Also Read: বাজারে আবার আলোচনায় ডিমের দামবৃদ্ধি