ছুটির প্রভাবে ক্রেতা কম মাছের; ঝাঁজ বেড়েছে কাঁচামরিচে

হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম ফের ১০০ ছাড়িয়ে কোনো কোনো বাজারে ১২০ টাকা ছুঁয়েছে। কিছু বাজারের ডিমের দামও ডজনে বেড়েছে ১০ টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 12:46 PM
Updated : 7 Oct 2022, 12:46 PM

টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতা সমাগম কমেছে; তবে এর মধ্যেও দাম বেড়েছে কিছু পণ্যের যেগুলোর মধ্যে কাঁচামরিচ, ডিম, মুরগি ও চাল রয়েছে।

হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম আবার ১০০ টাকা ছাড়িয়ে কোনো কোনো বাজারে ১২০ টাকা ছুঁয়েছে।

শুক্রবার ঢাকার মিরপুর-১১, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) আগের সপ্তাহের চেয়ে চাল ও কাঁচামরিচসহ কিছু পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছে।  

এসব বাজারে দেখা গেছে, লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে সরকার গত ৩ অক্টোবর সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে এখনও। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আর আগে থেকেই বাজারে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চিনি সরকার নির্ধারিত নতুন দরেই বিক্রি হচ্ছে। নতুন দর অনুযায়ী, খোলা চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজারে বেশ অনেক আগে থেকেই এ দরে বিক্রি হচ্ছিল। গত মাসে মাঝে কেজিতে দুই ধরনের চিনিতেই দাম ছয় টাকা কমানো হলেও তা মানেননি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে প্রতি লিটার সুপার পাম তেলের দর কমিয়ে ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা আগে থেকেই বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছিল।

সম্প্রতি সয়াবিন, চিনি ও পাম তেলের নতুন এসব দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোজ্যতেল তেল পরিশোধন ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকদিন থেকে আলোচনায় থাকা ডিমের দামও বাড়তি। যেসব বাজারে গত সপ্তাহের প্রতি ডজন ১৩০ টাকায় পাওয়া গেলেও শুক্রবার ১০ টাকা বাড়তি চাওয়া হচ্ছে। বয়লার ও খামারের সোনালী মুরগির দামও কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সাধারণ বাজারে ক্রেতার ভিড় থাকে বেশি। পুরো সপ্তাহের কেনাকাটার বড় অংশ এ দিনই করে থাকেন কর্মজীবীরা। তবে শুক্রবার টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে পরিবারসহ অনেকেই ঢাকার বাইরে যাওয়ায় বাজারগুলোতে তেমন জমজমাট ভিড় চোখে পড়েনি।

পণ্যের কেনাবেচায় এর প্রভাবও দেখা গেছে। বিশেষ করে মাছের বাজারে ক্রেতা কমেছে বেশি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

মিরপুর সেকশন ১১ এর প্রধান কাঁচাবাজারে দুই দশক ধরে ব্যবসা করে আসা শাহীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত বুধবার সবচেয়ে বেশি বেক্রি হয়েছে তার। সরকারি ছুটিতে মানুষ কম আসবে বুঝে আগেই অর্ধেক মাছ আনেন। শুক্রবার তার আনা ১৬ কেজি সিং মাছের মধ্যে সকালের ভাগে বিক্রি হয়েছে অর্ধেকের মত।

একইভাবে রুই, পাঙ্গাস ও ছোট মাছের বিক্রিও কমেছে। তবে তুলনামূলক দাম কম থাকা তেলাপিয়া মাছ বিক্রেতার কাছে ক্রেতা উপস্থিতি বেশি দেখা গিয়েছে।

মিরপুরের ওই বাজারে চাষের বরফ দেওয়া তেলাপিয়া বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য মাছের দরেও আগের সপ্তাহের চেয়ে তেমন হেরফের হয়নি।

এদিকে পর্যাপ্ত সরবরাহের পাশাপাশি শীতকালীন আগাম ফলনের লাউ ও সিম উঠতে শুরু করায় সবজির দাম আর চড়েনি। তবে আগের দামও খুব একটা কমেনি। উল্টো বেড়ে গেছে কাঁচামরিচের দাম।

বাজারগুলোতে খুলনা ও যশোর থেকে আসা প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। সিম মান ভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

খিলগাঁওয়ের তালতলা কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে সবজির দামে খুব একটা হেরফের হয়নি। পটল বিক্রি হচেছ সর্বোচ্চ কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা।

মিরপুর সেকশন ১১ কাঁচাবাজারের বিক্রেতাদের কেজিপ্রতি বরবটি ৮০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, ৬০ টাকা দরে ঝিঙা ও ৫০ টাকায় ঢেঁড়স বিক্রি করতে দেখা গেছে।

যাত্রাবাড়ীর কাজলার ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন জানান, হঠাৎ করে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। পাইকারিতেই তাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলে গত কয়েকদিনের থেকে দাম বেড়েছে। তবে ঠিক কারণটা তিনি বলতে পারেননি।

টিসিবির পণ্য দরের তথ্যেও দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর শুক্রবার প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়।

তবে গত সপ্তাহের তুলনায়। পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, আদা, হলুদ, জিরা এর দরে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি বলে টিসিবির তথ্য বলছে। বাজারেও সেই চিত্র দেখা গেছে।

যাত্রাবাড়ীর মুরগি ব্যবসায়ী মো. এজাজ মিয়া জানান, সবধরনের মুরগির দাম ১০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা এবং ব্রয়লার বিক্রি করছেন ১৭৫ টাকায়।

দেশি মুরগির বাচ্চা আকার অনুযায়ী প্রতিটি (ওজন ছাড়া) বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে।

মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মত গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা কেজিতে।

ডিম বিক্রেতা সজল সরকার জানালেন, গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করেছিলেন ১৩০ টাকা। এদিন তা ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। প্রতি হালি বিক্রি করছেন ৪৮ টাকায়। টিসিবিও ডিমের দরে একই তথ্য দিয়েছে।

টিসিবির তথ্য বলছে, শুক্রবার চালের দরও ছিল কিছুটা বাড়তি। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

আরও খবর

Also Read: চিনিতে প্রভাব নেই সরকারি দামের

Also Read: তেল চিনির দাম কমলো

Also Read: ‘সবজির বাজারেও হাত পোড়ার অবস্থা’

Also Read: বাজারে আবার আলোচনায় ডিমের দামবৃদ্ধি

Also Read: চাহিদায় হেরফেরে দাম বাড়ছে ডিম মুরগি আলুর