‘সবজির বাজারেও হাত পোড়ার অবস্থা’

সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা; পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৬০ টাকার কমে মিলছে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2022, 02:43 PM
Updated : 23 Sept 2022, 02:43 PM

নিত্যপণ্যের চড়া বাজারে সব ধরনের সবজি দামও বাড়তে দেখে সাপ্তাহিক ছুটির দিন কেনাকাটা করতে আসা এক ক্রেতার আক্ষেপ, “প্রয়োজনের চেয়ে অর্ধেক অর্ধেক করে তিন-চারটি সবজি কিনলাম, তাতেই ২০০ টাকা গুণতে হয়েছে। এত হিসাব করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”

উত্তর বাড্ডার বাজারে সবজি কেনাকাটার সময় স্থানীয় বাসিন্দা জাহান আরা বেগমের প্রতিক্রিয়া ছিল এমনই। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে নিজের মাসওয়ারি খরচের হিসাবে মেলানোর হিমশিম অবস্থা তুলে ধরেন তিনি।

এ গৃহিণী বলেন, “সবকিছুতে দাম বাড়তি। প্রয়োজনের অনেক কিছুই এখন কেনা সম্ভব না। এখন দেখছি সবজির বাজারও হাত পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা।“

সবজির দর বাড়াতে থাকা নিয়ে খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ানের বাসিন্দা মঈন উদ্দিন খান বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই চড়া, এখন দেখছি সবজির দরও হাতের নাগালে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংসের দাম হওয়ার কারণে সেগুলো কেনা যাচ্ছে না। এখন যদি সবজির দামই এমন থাকে তাহলে মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।

কারণে-অকারণে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো হয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কখন কোন জিসিনের দাম বাড়ে তা আগে থেকে আমাদের জানা সম্ভব হয় না। বাজারে গেলেই দেখি এটা-সেটার দাম বেড়ে চলেছে।“

শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখে গেছে, পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। আর সর্বোচ্চ দামের সবজি এখন আগাম আসা শীতকালীন সিম, যা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে।

সবজি বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।

তবে এসময়ে নতুন করে সবজির দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার, রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে এমন চিত্র দেখা যায়।

বাজারগুলোতে সর্বোচ্চ দামের সবজির মধ্যে প্রতি কেজি শিম ২২০ টাকা ছাড়াও টমেটো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, জলপাই ২০০ টাকা, বরবটি, কাঁকরোল ও করলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে পটল ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ও কচুর মুখী ৭০ টাকা, মূলা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সশা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিটি লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধা কপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে লেবু, কাঁচা মরিচ, পেঁপের দর হাতের নাগালে রয়েছে বলে জানান ক্রেতারা।

এক হালি লেবু ১৫ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম কমে মানভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় নেমেছে। যদিও এক মাস আগে কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা ইমরান হোসেন বলেন, “সবজির দর বাড়তি। কেন এভাবে দাম বাড়ছে এর সঠিক কারণ আমাদেরও জানা নেই। রাতে বা ভোরবেলায় আড়তে গেলেই জানতে পারি দাম বেড়েছে না কি কমেছে। কেনা দামের সঙ্গে পরিবহন খরচ ও কিছু লাভ ধরে বেচার দর ঠিক করা হয়।”

গত কয়েক দিন ধরেই প্রায় সব ধরনের সবজির দর বাড়ছে জানিয়ে রামপুরা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ জালাল বলেন, “মাছ-মাংসের দাম বেশি, যে কারণে সবজির ওপর চাপ পড়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।”

মৌসুম না হলেও কিছু সবজি আগাম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর দাম অনেক বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন শিমের মৌসুম নয়, যে কারণে দাম বেশি। একইভাবে টমেটো, গাজর, ফুলকপিসহ আরও অনেক সবজির মৌসুম না থাকলেও বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো কিছু কিছু আমদানি করা হয়।”

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে দাম বেড়েছে আদা ও রসুনের।

আমদানি করা আদা কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং দেশি আদা ১২০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে আমদানি করা আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং দেশি আদা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া আমদানি করা রসুন কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরা বাজারের মুদী দোকানি মাইদুল ইসরাম মাহিন বলেন, “এই সপ্তাহে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। আর অন্যান্য জিনিসের দর অপরিবর্তিত আছে।”