তবে মাছ, গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন হেরফের নেই।
Published : 09 Sep 2022, 08:19 PM
সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে ডিম, মুরগি ও আলুর দাম; ডিমে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা আর মুরগিতে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ৩০ টাকা।
এক ডজন ডিম গত সপ্তাহে ১১৫ টাকায় মিললেও এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। একই বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় এবং ২০-৩০ টাকা বেড়ে সোনালী মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইসঙ্গে আলু কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়ে ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এ সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা কমে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
তবে মাছ, গরু ও খাসির মাংসের দামে কোনো পরিবর্তন নেই।
শুক্রবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডা বাজার, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, শাহজাহানপুর বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের এমন চিত্র মিলেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ডিম ও মুরগির সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই দুই পণ্যের দাম বেড়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম চড়া হওয়ায় ডিম ও মুরগির চাহিদা বাড়ার বিষয়টি দাম বাড়ায় ভূমিকা রাখছে।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের ‘কারসাজির’ কারণেই মূলত নিত্যপণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়লে কখনও কখনও দাম কিছুটা কমলেও পরে আবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
শান্তিনগর বাজারের মনির ব্রয়লার হাউসের দোকানি মনির হোসেন বলেন, “এ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দামই কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা কেনা দাম, এরপর এর সাথে আরও ব্যয় আছে। এখন আমরা যদি ১৮০ টাকা বিক্রি না করি, তাহলে তো পোষাবে না।”
একইভাবে পাইকারি বাজারে সোনালী মুরগির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দাম বাড়া-কমার মধ্যে আমাদের মত খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। যখন পাইকারি বাজারে বাড়ে, তখন খুচরা দামও বাড়ে। আবার পাইকারি দর কমলে খুচরা দরও কমে।”
খামার পর্যায়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুরগির দাম বেড়েছে বলে জানান ঢাকায় মুরগির অন্যতম পাইকারি কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী ওমর ফারুক।
“গত কয়েক মাসে মুরগির খাদ্য ও ওষুধের দাম অনেক বেড়েছে। মুরগির বাচ্চার দামও বেড়েছে। একই সঙ্গে প্রচণ্ড গরমের কারণে খামারে খুরগির বাচ্চা মারা যায়। এসব কারণে বহু খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে বলে মনে হয়।”
অপরদিকে খামারে ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং গরমের কারণে ডিম উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে বাজারে ডিমের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন তেজগাঁওয়ের জিলানী মার্কেটের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী ইসলামী ট্রেডার্সের মো. ইসলাম।
“আজকের বাজারে ডিমের পাইকারি দর ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকা (১০০ ডিম)। গত সপ্তাহে ছিল ৮৫০ থেকে ৮৭০ টাকা।”
নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে উত্তর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমরা তো বাজারে গেলেই টের পাই আজ এটার দাম বেড়েছে, ওইটার দাম বেড়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
“প্রতিটি জিনিসের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। বাজারে তো কোনো জিনিসের কমতি নেই, তার পরও কেন এভাবে দাম বাড়বে, তা আমার বোধগম্য হয় না।”
বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “যখন বাজারে মোবাইল কোর্ট আসে, তখন দেখা যায় দোকানদাররা জিনিসের দাম কম চায়। এর অর্থ হচ্ছে তারা বেশি মুনাফা করতে ক্রেতাদের থেকে অতিরিক্ত দাম নেয়।“
বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ বছরের শুরু থেকে নির্ধারিত এই দামে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে আগের দামের বিক্রি হচ্ছে মাছ। নদী-নালা ও খাল-বিলে মাছ ধরা পড়ার মৌসুম হওয়ায় দাম কমছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বাজারে অধিকাংশ চাষের মাছ বিক্রি হচ্ছে। চাষের তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কৈ মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আগের মত চড়াই রয়েছে ইলিশের দাম। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৮০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।