এবার মানি এক্সচেঞ্জের ডলার বিক্রির সীমা নির্ধারণ

মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর এবং ব্যাংকের নগদ ডলার বিক্রির দরের ব্যবধান হবে সর্বোচ্চ দেড় টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 12:48 PM
Updated : 17 August 2022, 12:48 PM

ব্যাংকগুলো যে দরে নগদ ডলার বিক্রি করবে সেটির সঙ্গে সর্বোচ্চ দেড় টাকা যোগ করে এখন থেকে ডলার বিক্রি করতে পারবে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে খোলা বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয়কারীদের সংগঠন মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

বর্তমানে একেক ব্যাংক একেক দরে নগদ ডলার কেনাবেচা করে। ব্যাংকগুলোর নগদ ডলার কেনাবেচার দরের মধ্যে কয়েক টাকা পর্যন্ত ফারাক দেখা যায়। আবার একটি ব্যাংকের নগদ ডলার কেনা ও বিক্রির দরের মধ্যেও ব্যবধান (স্প্রেড) থাকে বেশি।

এমন প্রেক্ষাপটে সব ব্যাংক খুব দ্রুত একটি একক (ইউনিফর্ম রেট) নির্ধারণ করবে, যা বাফেদা জানাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল।

এর আগে গত ১৪ অগাস্ট সঙ্কট সামাল দিতে ব্যাংকের ডলার কেনাবেচার দামের ব্যবধান (স্প্রেড) সর্বোচ্চ কত হতে পারবে, তা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যে দরে ডলার কেনা হবে, বিক্রির দাম তার চেয়ে সর্বোচ্চ ১ টাকা বেশি হতে পারবে।

ওই দিন বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

আর খোলা বাজারে সঙ্কট তীব্র হওয়ায় ডলারের দর অনেক বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে বুধবার মানি চেঞ্জাদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা; যেখানে ব্যাংকের মত ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এল।

এ বিষয়ে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলাল শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টি ডটকমকে বলেন, "বাফেদার কাছ থেকে রেট নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সকল সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হবে প্রতিদিন।"

এ প্রক্রিয়া নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে বৈঠক ডেকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ডলার সংগ্রহের মূল উৎস বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা। খোলা বাজারে সরবরাহের ভিত্তিতে এ দর ওঠানামা করে; সম্প্রতি যা ১২০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে নেওয়া নতুন এ সিদ্ধান্তের পর মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা করতে হলে খোলা বাজার থেকে অনেক উচ্চ দরে ডলার কেনার পথ বন্ধ হবে। কেননা এখন থেকে মানি চেঞ্জারদের ব্যাংকের নগদ বিক্রির দরের চেয়ে দেড় টাকা বেশি নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

গত কয়েক মাস থেকে সরবরাহ সঙ্কটে ডলারের দাম ক্রমাগত চড়ছে। প্রতিনিয়ত টাকার অবমূল্যায়ন করে এবং ডলার বিক্রি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

পাশাপাশি ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া ধারাবাহিক বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নীতি ছাড়ের পরও সঙ্কট কাটছে না।

চলমান এ সঙ্কটের মধ্যে খোলা বাজারে ডলারের দর গত সপ্তাহে ১২০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। আর কিছু ব্যাংক নিজেদের প্রয়োজনে বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১১০ টাকারও বেশি দরে ডলার কিনেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।

এরমধ্যে ব্যাংকে ও খোলা বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ একদম কমে যাওয়ার কারণে ডলারের বিনিময় হার যেমন ক্রমাগত বেড়েছে, তেমনি স্প্রেডও বাড়তে দেখা গেছে। এমন পেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিক্রির সর্বোচ্চ দর বেঁধে দিল।

এদিকে ডলারের দর স্থিতিশীল করতে গত ১৪ অগাস্ট বাফেদা ও এবিবির সঙ্গে বৈঠকে ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে কাছাকাছি দরে ডলার কেনার বিষয়েও সম্মতি দেয়। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক অস্বাভাবিক কোনো দর প্রস্তাব করবে না বলে জানান শীর্ষ ব্যাংকাররা।

ব্যাংকগুলো এ নির্দেশনা মানছে কি না তা তদারকি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাফেদা।