ডলার কেনা-বেচায় দামের ব্যবধান ১ টাকার বেশি নয়, সীমা বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হার ক্রমাগত বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত জানাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 12:50 PM
Updated : 14 August 2022, 12:50 PM

সঙ্কট সামাল দিতে ডলার কেনা-বেচায় দামের ব্যবধান (স্প্রেড) সর্বোচ্চ কত হতে পারবে, তা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে দরে ডলার কেনা হবে, বিক্রির দাম তার চেয়ে সর্বোচ্চ ১ টাকা বেশি হতে পারবে।

রোববার বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ব্যাংকগুলো যে দরে ডলার কিনবে, তার সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের একটি সিলিং করতে হবে। সব ব্যাংক এটি ফলো করবে বলে তারা জানিয়েছেন।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ডলার কেনা ও বেচার ওই ব্যবধান হবে সর্বোচ্চ ১ টাকা। অর্থাৎ ডলার কেনাবেচা থেকে কোনো ব্যাংক এক টাকা মুনাফা করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।

বর্তমানে ডলারের সব ধরনের লেনদেন, যেমন নগদ কেনাবেচা কিংবা এলসি খোলা বা নিষ্পত্তিতে একেক ব্যাংক একেক দর নিয়ে থাকে। গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদে ডলার কেনা কিংবা এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে কেনা দর এবং বিক্রির দরের মধ্যে ব্যবধান সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেশি থাকতে দেখা গেছে।

ব্যাংকে ও খোলা বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ একদম কমে যাওয়ার কারণে ডলারের বিনিময় হার যেমন ক্রমাগত বেড়েছে, তেমনি স্প্রেডও বাড়তে দেখা গেছে। এমন পেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই সিদ্ধান্ত এল।

সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া ধারাবাহিক বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নীতি ছাড়ের পরও ব্যাংকে ডলার সংকট কাটছে না।

চলমান এ সঙ্কটের মধ্যে খোলা বাজারে ডলারের দর গত সপ্তাহে ১২০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আর কিছু ব্যাংক নিজেদের প্রয়োজনে বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১১০ টাকারও বেশি দরে ডলার কিনেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।

রোববারও ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্য সিটি ব্যাংক নগদে ডলার বিক্রি করেছে ১০৯.৫০ টাকায়, এন`আরবি ব্যাংক ১০৮.৫০ টাকায়, ইস্টার্ন ব্যাংক ১০৭ টাকায় ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৫ টাকায়। ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে ডলার বিক্রির এ দর ঘোষণা করা হয়েছে।

অপর দিকে গত সপ্তাহে টাকার মান আরও এক দফা কমিয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৫ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমন প্রেক্ষাপটে ব্যাংকারদের সঙ্গে ডলার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় এ বৈঠক ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজারে ডলার সরবরাহ ও দর নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে আলোচনায় বসেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শীর্ষ ব্যাংকাররা।

গভর্নর ভবনের চতুর্থ তলার জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।

বাফেদা ও এবিবি খুব দ্রুত আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন স্থিতিশীল করার বিষয়ে একমত হয়েছে জানিয়ে বৈঠক শেষে মুখপাত্র সিরাজুল বলেন, ‘‘ব্যাংকগুলো যদি আন্তঃব্যাংকের মধ্যে ডলার সরবরাহ করতে পারে সেই বিষয়গুলো বলা হয়েছে।

‘‘ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে এক্সপোর্ট প্রসিড (রপ্তানির পর বিল নগদায়ন) দেশে ফিরিয়ে আনতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’’

চলতি অগাস্টের প্রথম ১১ দিনে এক বিলিয়ন ডলার কম এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে বিলাসপণ্য আমদানি বন্ধ করতে পেরেছি। ফলে এই পদক্ষেপের কারণে অসামাঞ্জস্যতা কমে আসবে ডলার মার্কেটে।