চিনির মজুদ আছে, তবে গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত: টিপু মুনশি

“এটা সত্যি কথা যে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের পেছনে কিন্তু আমাদের চেয়ে বৈশ্বিক কারণ বেশি।”

নিজস্ব প্রতিবেদক
Published : 3 Nov 2022, 01:02 PM
Updated : 3 Nov 2022, 01:02 PM

চিনির যে মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গ্যাসের অভাবে এখন উৎপদন ব্যাহত হলেও সেই সমস্যা অচিরেই কেটে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চতুর্থ সভা শেষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “চিনি নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব দেখছি না, চিনিটা এভেইলাবল। জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই।

“গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় চিনির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে৷ যে সমস্যা পেয়েছি, সেটি হলো গ্যাসের সাপ্লাই অপ্রতুলতার কারণে ৬৬ শতাংশের বেশি চিনি উৎপাদন করতে পারছে না মিলগুলো।”

তবে গ্যাস পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, “বিদ্যুতের অবস্থা ইমপ্রুভ করবে, তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে গ্যাসের সাপ্লাই স্বাভাবিক হলে যে পরিমাণ চিনি দরকার, তা উৎপাদন সম্ভব হবে।”

তিনি বলেন, “গ্যাস তো আর বাণিজ্যমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করে না। সেটাকে যদি আমরা অ্যাড্রেস করতে পারি, তাহলে সরবরাহের সমস্যাটা থাকবে না।”

কবে নাগাদ চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক হবে- এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে টিপু মুনশি বলেন, “চিনির সাপ্লাইটা ঠিকভাবে হওয়া দরকার। সরবরাহ ধীরগতি হলে সমস্যা; সরবরাহ স্বাভাবিক হলে যেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সে দামে বিক্রি করা যাবে।”

বাংলাদেশে চিনির মোট চাহিদার অধিকাংশই আমদানি করে মেটাতে হয়। দেশে বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো থেকে আসে সর্বোচ্চ এক লাখ টনের মতো চিনি। অপরিশোধিত চিনি আমদানির পর তা পরিশোধন করে দেশীয় মিলগুলো বাজারে সরবরাহ করে।

ডলারের দরের ঊর্ধ্বগতিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ৬ অক্টোবর চিনির দর কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে খোলা চিনির বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ টাকা কেজি, আর প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি হয় ৯৫ টাকা।

তবে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত চিনি ১২০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে।

সরকারের তরফে দর বৃদ্ধির পরও দাম বৃদ্ধি হতে থাকলে গত ২২ অক্টোবর জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুচরা ও পাইকারি বাজারের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে পরিশোধনকারী মিল পরিদর্শন করে।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান ওই দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “সিটি ও ফ্রেশ রিফাইনারির কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সক্ষমতার অর্ধেকে নেমেছে তাদের উৎপাদন। কোম্পানির লোকজন জানিয়েছেন, গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমেছে।“

বাজারে চিনির দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর গেল ২৪ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকসেল শুরু করেছে। সেখানে দীর্ঘ সারি ধরে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ এক কেজি চিনি কিনতে পারছেন ৫৫ টাকা দরে। 

নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ সংসার চালতে হিমশিম খাচ্ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টিপু মুনশি বলেন, “এটা সত্যি কথা যে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের পেছনে কিন্তু আমাদের চেয়ে বৈশ্বিক কারণ বেশি। এখন বৈশ্বিক কারণটা তো আমরা রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারব না।”

তিনি বলেন, “প্রত্যেক মানুষের জীবনে কখনও ভালো সময় থাকে, কখনও খারাপ সময় থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সামনে দুর্ভিক্ষ হতে পারে, খাদ্যের অভাব হতে পারে। সে চিন্তা করেই কিন্তু উনি বারবার বলছেন।”

ভোজ্য তেলের দর সমন্বয়ের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “সয়াবিন তেলের বিষয়টি আমাদের ট্যারিফ কমিশন ঠিক করবে। আমি আজকে এখনই বলেছি, খুব শিগগিরই আবার বসে পুরো বিষয়টি মূল্যায়ন করে তারা দর র্নিধারণ করবে- কতো হওয়া উচিত।”

গম আমদানিতে এখনও ঘাটতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বেশি দরে হলেও ব্যবসায়ীরা ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিকল্প দেশ থেকে গম আমদানি করছেন। এজন্য বাজারে গমের সরবরাহ রয়েছে।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসন জি এম সালেহ উদ্দিন, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী, মেঘনা গ্রুপের উপদেষ্টা মো. শফিউর রহমান, ভোক্তাকণ্ঠ সম্পাদক কাজী মো. আব্দুল হান্নান।

আরও পড়ুন:

Also Read: চিনির সঙ্কটের ৩ কারণ দেখালেন ব্যবসায়ীরা

Also Read: চিনি উৎপাদন কমেছে, গ্যাস সংকটকে দুষছে সিটি ও ফ্রেশ গ্রুপ

Also Read: চিনির দাম কেজিতে বাড়ল ৬ টাকা