“দোকানিদেরই যৌক্তিক মূল্যের তালিকা টানানোর কথা। তবে তারা লুকিয়ে রাখে। তারা ‘শয়তান তো’, তাই টানায় না”, বলেন এক কর্মকর্তা।
Published : 25 Mar 2024, 12:28 AM
কৃষিপণ্যের ‘যৌক্তিক মুনাফা’ সরকার ঠিক করে দেবে, সেটি অর্ধযুগ আগে করা একটি আইনের কথা। সেই আইন কীভাবে প্রয়োগ হবে, তিন বছর আগে বিধিমালা করে সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে।
কৃষিপণ্য বিপণন অধিদপ্তর কয়েক বছর ধরে প্রায়ই সেই যৌক্তিক মূল্যের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। কিন্তু ক্রেতা বা বিক্রেতা কেউ তা জানে না।
এর একটি কারণ হল, ওই মূল্য তালিকা বাজারে দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে টানিয়ে দেওয়ার যে নির্দেশনা আইন ও বিধিমালায় বলা আছে, তার বাস্তবায়ন হয় না ঠিকমত।
ভোক্তা এবং ভোক্তা অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা মনে করেন, যৌক্তিক মূল্যের তালিকাটা বাজারে থাকলে বিক্রেতার মার্জি মাফিক দাম রাখার প্রবণতার অবসান হতে পারত। আগের দিন পাইকারি দর এবং সর্বোচ্চ কত টাকায় বেচা উচিত, সেই তথ্য ক্রেতা জানতে পারত। তখন তার দর কষাকষির ভিত্তি তৈরি হত।
কিন্তু কৃষিপণ্য বিপণন অধিদপ্তর সেই পথে না হেঁটে কেবল ওয়েবসাইটে একটি তালিকা দিয়ে আসছে। বাজারে সেই তালিকা না থাকায় ক্রেতা জানতে পারছে না, কোন পণ্য কত দামে কেনা ‘যুক্তিযুক্ত’।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলছেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ‘অর্ধেক’ করে বসে আছে। কাজটা পুরোপুরি না করায় তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে মূল্য তালিকা তারা করেছে, সে মূল্যে নিজেরা পণ্য বিক্রি করে তাদের দেখিয়ে দেওয়া উচিত যে এটা বাস্তবসম্মত দাম।”
এর বিপরীতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা ব্যবসায়ীদেরকেই ওই তালিকা বাজারে টানিয়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু তারা তা করছেন না।
সংস্থাটির ময়মনসিংহের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যবসায়ীরা তালিকা না টানালেও তারা চাপ দিতে পারছেন না। কারণ, চাপ দিলে তারা পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেন কি না, এমন আশঙ্কা থাকে।
চাপ দিতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাংস বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে, সেদিকেই তিনি ইঙ্গিত করেছেন।
পাইকারি ও খুচরায় মূল্যের পার্থক্য ব্যাপক
যৌক্তিক মুনাফা বা মূল্যের তালিকা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে, কিন্তু ক্রেতাদের কাছে তথ্য পৌঁছানোর উদ্যোগের যে ঘাটতি, তার সমাধান হচ্ছে না। বাজারে পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিরাট পার্থক্য থাকছে। তাতে পকেট ভারী হচ্ছে বিক্রেতার, ফাঁকা হচ্ছে ক্রেতার।
রোজায় বেগুন, শসার দাম নিয়ে ঘটেছে নানা কিছু। কৃষক বেগুন বেচতে পারছে না ৫ টাকা কেজিতেও, সেই ভিডিও আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার ঢাকায় সেই বেগুন কোনো বাজারে ৪০, কোনো বাজারে ৫০ আবার কোনো বাজারে ৬০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা।
পাইকারি বাজারের তুলনায় সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মুনাফার সুযোগ আছে কাগজে কলমে, কিন্তু পাইকারিতে দর কত, তা ক্রেতা জানে না। তাতে বাজারে বিক্রেতার একচেটিয়া প্রভাব তৈরি হয়েছে।
কারওয়ানবাজার ও গুলশান-২ কাঁচাবাজারের সামনে দুটি ডিজিটাল ডিসপ্লেতে কিছু পণ্যের তালিকা দেওয়া আছে। তবে সেটি যৌক্তিক মূল্যের নয়। প্রতিদিন বাজারে কী দর চলছে, সেটি জেনে সরকারি সংস্থা টিসিবি বাজারদরের যে তালিকা তৈরি করে, সেই তথ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। এটি জেনে আসলে ক্রেতার কোনো লাভ নেই। এই তালিকা তার জন্য দর কষাকষির ভিত্তি তৈরি করে না।
কারওয়ানবাজারে এসে যৌক্তিক মূল্যের তালিকা না পেয়ে তরিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুচরা বিক্রেতারা আমাদের থেকে কত টাকা লাভ করে তা জানি না। সব সময়ই সন্দেহ হয় দাম অনেক বেশি নিচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারের দর আর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘যৌক্তিক’ মূল্যের সঙ্গে বাজার মূল্যের বড় ব্যবধান দেখা গেছে।
সেদিন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ২১০ টাকা কেজি দরে, যদিও এর যৌক্তিক মূল্য ঠিক হয়েছে ১৭৫ টাকা। গরুর মাংসের বাজার দর ৭৫০ থেকে ৭৮০; যৌক্তিক মূল্য ৬৬৫ টাকা। আলুর যৌক্তিক মূল্য সাড়ে ২৮ টাকা, বাজার মূল্য ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। সাধারণ মানের খেজুরের যৌক্তিক মূল্য ১৫০ থেকে ১৬০, বাজার দাম ২০০ টাকা।
বেগুন ও টমেটোর মতো কিছু কিছু পণ্যের যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য কমও দেখা গেছে।
তালিকা: দোকানিদের ওপরই ভরসা!
‘যৌক্তিক মূল্য’ বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। আরো করার কথা বাজারভিত্তিক আলাদা কৃষি বিপণন কমিটি।
বাজার কমিটির অন্যতম কাজ হল, পাইকারি ও খুচরা বাজারে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা সাধারণের দৃষ্টিগোচর স্থানে প্রদর্শন হচ্ছে কি না, সেটি তত্ত্বাবধান করা।
বাজার কমিটি হওয়ার কথা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিল বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের। সদস্য সচিব হওয়ার কথা উপজেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার।
সদস্যরা হবেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সভাপতি মনোনীত গণ্যমান্য ব্যক্তি ও তিনজন কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী, একজন কৃষিপণ্য উৎপাদন, বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা সেক্রেটারি।
কিন্তু জেলা পর্যায়ে কৃষি বিপণন কমিটি থাকলেও উপজেলা, ইউনিয়ন বা বাজার পর্যায়ে কোনো কমিটি নেই।
মূল্য তালিকা টানানোর ক্ষেত্রে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাজারের ব্যবসায়ীদের সমিতির ওপরই নির্ভর করছে।
অধিদপ্তরের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দোকানিদেরই যৌক্তিক মূল্যের তালিকা টানানোর কথা। তবে তারা লুকিয়ে রাখে। তারা ‘শয়তান তো’, তাই টানায় না।”
সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “দেশে লাখ লাখ বাজার রয়েছে। আমাদের তো সব বাজার পরিদর্শন করা সম্ভব না। তবে আমরা সেসব বাজারে ব্যবসায়ীদের যে সমিতি রয়েছে সেই সমিতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছি। আমরা তাদের বোর্ড দিয়ে দিয়েছি। তারা প্রতিদিনকার আপডেট দিয়ে টানানোর কথা।”
এই তালিকা তো বাজার কমিটির টানানোর কথা, সে দিকে যাচ্ছেন না কেন- এই প্রশ্নে আগের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের বাজার কমিটি আছে।”
যদি কমিটি থাকেই, তাহলে কেন তা দেখা যায় না? উত্তরে তিনি বলেন, “দেশে তো লাখ লাখ বাজার আছে, তা তো দেখা সম্ভব না। আর প্রতিদিন মিটিং করতে হবে, সেটা তো আইনে বলা নেই। যখন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন বৈঠক করব।”
যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, পরিস্থিতি তাহলে কখন তৈরি হবে? এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি এই কর্মকর্তার কাছে।
তবে বাস্তবে সব জায়গায় এমন কমিটি আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, “বাজারে দৃশ্যমান কোনো কাজ তো নেই।”
বিক্রেতারা যদি তালিকা টানিয়ে না দেন, তাহলে ক্রেতাদের যৌক্তিক মূল্যের ব্যাপারে জানানো যাবে কীভাবে?
এই প্রশ্নে সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা এ সংক্রান্ত একটা অ্যাপ তৈরির কাজ করছি।”
তবে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান এর কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না।
তিনি বলেন, “কয়জন মানুষ অ্যাপে ঢুকে ঢুকে দেখবে যে কোন পণ্যের দাম কত হওয়া উচিত? বাজারে তালিকা টানালেই তো হয়ে যায়।”
‘যৌক্তিক দাম আসলে আমরা জানি না’
কক্সবাজারের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সাধারণত যে কোনো পণ্যের আসল দাম জানি না। বিক্রেতারা একজোট হয়ে যেভাবে মন চায় সেভাবে দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে।”
“তাই যৌক্তিক মূল্য যৌক্তিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত। শুধু ওয়েবসাইটেই প্রচার করে বসে থাকলে চলবে না। আর অ্যাপ তৈরি করলে সে অ্যাপ দেখে দেখে কয়জন মানুষ বাজার করবে? বরং বাজারে দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো জায়গায় তালিকা লাগালে কাজটা যৌক্তিক হবে বলে মনে করছি।”
ঢাকার বাসিন্দা ভুঁইয়া মোহাম্মদ তমাল বলেন, “যৌক্তিক মূল্যের কথা বললে অনেক দোকানদার হাসাহাসি করে। তারা বলে, ‘এখানে এইসব চলে না’। পাইকারিতে নাকি রেট বেশি। কিন্তু আসলে আমরা জানি না পাইকারিতে রেট কত।“
‘যৌক্তিক মূল্য’ কী
২০১৮ সালে কৃষিপণ্য বিপণন আইন এবং এর আলোকে তিন বছর পর কৃষিপণ্য বিপণন বিধিমালা করা হয়।
এই বিধিমালায় চাল, ডাল, শাক সবজি, মাছ ডিম, দুধ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের জন্য আলাদা আলাদা সর্বোচ্চ মুনাফার হার ঠিক করে দেওয়া আছে।
বিধিমালা অনুযায়ী উৎপাদন পর্যায়ে ফসল ও পণ্যভেদে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ, এবং খুচরা পর্যায়ে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ যৌক্তিক মুনাফা করার কথাও বলা আছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ, কখনও আড়াই গুণ বেশি দামে পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে উৎপাদন খরচের ১০ গুণ দামেও পণ্য বিক্রির কথা উঠে এসেছে সরকারি হিসেবেই।
ঢাকায় কারওয়ানবাজার থেকে পাইকারিকে ১৫ বা ২০ টাকায় কিনে নিয়ে খুচরায় ৭৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রির ঘটনা ঘটছে অহরহ।
রোজায় তরমুজের ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমন ঘটনা। চাষির কাছ থেকে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা দিয়ে কিনে আনা তরমুজ বাজারে ৭০০ থেকে ৮০০ এমনকি তার চেয়ে বেশি দরে বিক্রির অভিযোগও আছে।
‘বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়’
মফস্বল শহরেও কৃষিপণ্যের দাম ঢাকার চেয়ে কম না, বরং ক্ষেত্রে বিশেষে বেশি।
ঢাকার মতই ময়মনসিংহেও বাজার কমিটি করা হয়নি। প্রশাসন ব্যবসায়ী সমিতিকেই তালিকা টানাতে বলছে। তবে বিক্রি বন্ধ করে দেয় কি না, এই শঙ্কা থেকে চাপও দিচ্ছে না।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলা বাজার কর্মকর্তা জিল্লুল বারী ভুঁইয়া বলেন, “ব্যবসায়ীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে। হয়ত ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিকঠাক হবে।”
তিনি বলেন, “দোকানিদের মূল্য তালিকা টানানোর জন্যও তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো কঠোরতা দেখানো যাচ্ছে না কারণ তারা যদি আবার পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়!”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরিফুল হক মৃদুল বলেন, “দোকানিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মূল্য তালিকা সবসময় সাঁটিয়ে রাখার জন্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ওদিকে ব্যবসায়ীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তালিকার ওই দরে ‘পণ্য বিক্রি সম্ভব নয়’।
মেছুয়া বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, “সরাসরি খামার থেকে আমরা মুরগি কিনতে পারি না। ব্যাপারির কাছ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার বিক্রি করছি ২০০ টাকা করে।”
যৌক্তিক মূল্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “দাম নির্ধারণ করলেও কিছু করার নেই।”
‘পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন’
বরিশালের কাঁচাবাজারেও সরকারের করা যৌক্তিক মূল্যের তালিকা নেই। মাংস ও ফল বিক্রেতারা অতি মুনাফার অভিযোগ নাকচ করে পাইকারি বাজারে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন।
মহানগর মাংস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলম সিকদার বলছেন, “সরকার গরুর দর ঠিক করেছে। কিন্তু পাইকারি বাজার বা সরকারি কোনো বিক্রয় কেন্দ্র তো ঠিক করে দেয়নি, যেখান থেকে আমরা ৬৩০ টাকা দরে কেজি দরে কিনতে পারব।
“হাট বাজার থেকে যে গরু কেনা হয়, সেটি গৃহস্থের। তারা চাহিদা মত দাম না পেলে গরু নিয়ে চলে যায়। তাদের কাছ থেকে কেনা মাংস সাড়ে সাতশ টাকার নিচে বেচা যায় না।”
নগরীর বাজার রোডের মুরগি বিক্রেতা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এলে লাভ হবে না। বড় বড় পোলট্রি ব্যবসায়ীরা যে দামে বিক্রি করে, সেখান থেকে কিনে আমাদের তো একটু লাভ রেখে বিক্রি করতে হবে।”
নগরীর ফলপট্টির মদিনা খেজুর ঘর অ্যান্ড ড্রাইফ্রুটের আলমগীর হাওলাদার বলেন, “পাইকারি বাজারে দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনলে কীভাবে কমে বিক্রি করব? পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ না করলে খুচরা বাজার কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে?”
এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যৌক্তিক মূল্য নিয়ে তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের ১১টি মনিটরিং টিম কাজ করছে। সদর উপজেলায় দুটি দল কাজ করছে যার প্রধান তিনি নিজেই। ৯ উপজেলায় আছে একটি করে টিম, যার প্রধান ইউএনওরা।
জেলার কৃষি বিপণন কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মাঠ ও বাজার পরিদর্শক মো. রাসেল খান বলেন, “নগরীর বাজারের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ বাজারে তালিকা টানানো হয়েছে। বাকি বাজারেও টানানো হবে।”
রমজানের অন্তত ১৫ দিন আগে এই ব্যবস্থা নিলে আরো ভালো হত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবু চেষ্টা করা হচ্ছে। তদারকিতে সবজি, পেঁয়াজ, দেশি রসুন ও ডিম মানুষের হাতের নাগালে এসেছে।”
শহরের বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন বলেন, “যৌক্তিক মূল্য’ বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থার বাজার তদারকি বেশ জোরদার করতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করা বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
“এ নিয়ে প্রচার চালানো জরুরি আর ক্রেতাদের হতে হবে সচেতন। বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা বিক্রেতাদের বয়কট করতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে সম্মিলিতভাবে।”
ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই ‘অন্ধকারে’
যৌক্তিক মূল্য ঘোষণার কোনো প্রভাবই নেই খুলনার বাজারে।
ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, বয়রা বাজার, নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, এ সম্পর্কে তারা জানেন না, তাদেরকে কিছু বলা হয়নি।
কয়েকজন বলেছেন, বাজারে চাহিদার সঙ্গে জোগানের সামঞ্জস্য নেই, মোকাম থেকে ‘বাড়তি মূল্যে’ কেনার কারণে চাইলেও ওই দামে পণ্য বিক্রি করা যায় না।
বয়রা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী বিভূতি দাস বলেন, “পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।”
খুলনার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা জি এম মহিউদ্দিন বললে, “দাম সদ্য ঘোষণা হয়েছে। এটা বাস্তবায়নে সময় লাগবে।
“আর নির্ধারিত দাম কার্যকর না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার অধিদপ্তরের নেই। নিজস্ব সক্ষমতাও নেই। আমরা অভিযোগ জানাতে পারি। বিচার করবেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।”
সিলেটেও বিপণন অধিদপ্তর বাজার কমিটি করে নিজেরা তালিকা না টানিয়ে ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা মূল্য তালিকা টাঙানোর জন্য গত তিন মাসে ৬০টি বোর্ড দিয়েছি বাজার কমিটির নেতাদের কাছে।”
এই কর্মকর্তা প্রতিটি বাজারে যৌক্তিক মূল্যের তালিকা টানানো থাকার দাবি করলেও ক্রেতারা গিয়ে তা খুঁজে পান না।
কিছু দোকানে যে তালিকা দেখা গেছে তা ব্যবসায়ীরা যে দামে বিক্রি করেন, তা লেখা। বিপণন অধিদপ্তরের তালিকা নয়।
আবার বিপণন অধিদপ্তরের একটি তালিকা দেখা গেছে যাতে কিছু পণ্যের দাম উল্লেখ নেই। সেসব পণ্যের দাম বেশি রাখছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ইলিয়াস আহমেদ, বরিশাল প্রতিনিধি সাইদ মেমন, খুলনা প্রতিনিধি শুভ্র শচীন ও সিলেট প্রতিনিধি বাপ্পা মৈত্র।
আরো পড়ুন:
কৃষিপণ্য: বিধিমালা কিতাবে রেখে ‘ভুল পথে’ বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
নিত্যপণ্য: উৎপাদন খরচের আড়াই গুণ দামকে ‘যৌক্তিক’ ভাবছে সরকার
গরুর মাংসে ‘অযৌক্তিক মুনাফা’ ১৫০ টাকা, হাত গুটিয়ে সবাই
‘যৌক্তিক মূল্য’র চেয়েও কেজিতে ১৯ টাকা বেশি ছোলায়
নিত্যপণ্যের দাম ‘যৌক্তিক পর্যায়ে’ চলে আসবে, আশা টিটুর
যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের ফল হতে পারে পণ্য সংকট: দোকান মালিক সমিতি