Published : 02 Feb 2024, 06:49 PM
আলুর উচ্চমূল্য নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে আলোচনার মধ্যে অবশেষে পাইকারিতে তা নেমেছে ৩০ টাকার নিচে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে তার সুফল সেভাবে পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সুপার শপগুলোর কোথাও ‘ছাড়’ দিয়ে ৩৭ টাকা, কোথাও ৪১ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত সবজিটি। পাড়া মহল্লায় বা এলাকার বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা পর্যন্ত।
এমনকি যে বাজারে পাইকারি দর ২৬ টাকা, সেই বাজারেই কেবল ১০ থেকে ২০ মিটার দূরে দাম দেখা গেছে ৩৫ টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজার ঘুরে আলুর দামে এই চিত্র দেখা গেছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে চড়তে থাকা আলুর বাজার ঠান্ডা করতে সরকারি সব ‘টোটকা’ ব্যর্থ হওয়ার পর চলতি মৌসুমে তৈরি হয় আরো ‘বিস্ময়’। গত বছরের যে সময় নতুন আলুর দাম ছিল ২৫ টাকা, সেই সময়ে তা ৬০ এমনকি ৭০ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছে ক্রেতারা।
শীতে আলু উঠার পর ক্রমে দাম কমতে থাকলেও এবার দেখা গেছে উল্টো চিত্র। শীতের শুরুতে ৫০ টাকায় নেমে পরে তা লাফ দিয়ে বেড়ে ছাড়ায় ৭০ টাকা।
সে সময় জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে আলুর উৎপাদন পিছিয়ে গেছে। আলুর আকার দেখে সেটি বোঝাও যায়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস জুড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় আলুর আকার ছিল ছোট। বেশি দাম পাওয়ায় চাষিদের ছোট আলু বাজারে নিয়ে আসাই এর কারণ বলে উঠে আসে বিক্রেতাদের ভাষ্যে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি দোকান বিক্রমপুর ভান্ডারে ডায়মন্ড বড় আকারের আলু বিক্রি হচ্ছিল দাম ২৭ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে; মধ্যম আকারেরগুলোর দাম ছিল ২৬ টাকা কেজি দরে; ছোট আলুর কেজি ছিল ২২ টাকা। লাল আলু ২৫ টাকা কেজি দরে কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
এই দোকানে আলু বিক্রি হয় বস্তা হিসেবে।
বিক্রমপুর ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, “আলুর দাম আরও কমে পাইকারিতে ২০ টাকার নিচে নামবে মনে হচ্ছে। আজ রাতে আরও ২ টাকা কমবে জেনেছি। এতদিন আলুর কিছুটা সংকট ছিল, বাজারে আলু খুব বেশি উঠে নাই। এখন বাজারে আলুতে ভরপুর। দাম কমবেই।”
খুচরা পর্যায়ে তাহলে দাম এত কেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ওরা (খুচরা ব্যবসায়ী) বেশি লাভ করে। কেউ কেউ ৪৫ টাকা কিংবা ৫০ টাকাও বেচে। তাদের ধরা উচিত।”
একই বাজারে মেসার্স মদিনা ট্রেডার্সে রাত ও দিনের দামে পার্থক্য ‘রাত দিনের’। রাতে এখানে পাইকারি দরে, দিনে বিক্রি হয় খুচরা দরে।
আগের রাতে ২২ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হওয়া আলু পরের দিন বিকালে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছে তারা।
এই দোকানের বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “দাম প্রতিদিন ১-২ টাকা করে কমতেছে। এক সপ্তাহের ভিতরে ৭-৮ টাকা কমে গেছে। আলুর দাম কমলেও খুচরা দোকানিরা দাম কমাচ্ছে না। ওরা কমালেই বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে সম্পূর্ণ। মালের আমদানি বেশি তাই বাজার আরও কমার সম্ভাবনা আছে।”
সোনার বাংলা বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. নাসির আহমেদ বলেন, “আগের দিন পাইকারিতে দাম ছিল ২৮ থেকে ২৯ টাকা। আর আজ দাম ২৬ থেকে ২৭ টাকা।”
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি মার্কেট বাজারে লাল মিয়া এসেছিলেন আলু কিনতে। দাম শুনে বললেন, “আলুর দাম নাকি কমতেছে শুনলাম। কিন্তু কমার তো প্রমাণ দেখি না। ৪৫ টাকা কেজি দাম চায়।”
কমে ফের চড়েছে পেঁয়াজের দাম চড়ছে
নতুন পেঁয়াজ উঠার পর দাম ৭০ এর ঘরে নেমে ফের বাড়ছে দুই সপ্তাহ ধরে।
সাপ্তাহিক ছুটিরদিন কারওয়ান বাজারে পাইকারিতেই দেশি নতুন পেঁয়াজ ৮৬ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মানিকগঞ্জের ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ফরিদপুরের তুলনায় মানিকগঞ্জের পেঁয়াজের দাম একটু বেশি।
পাইকারি বিক্রেতা মো. লিটন বলেন, “আগের দিনের চেয়ে দাম ৬ ট্যাকা বেড়েছে। কাইলও ৮০ ট্যাকায় বেচছি। বৃষ্টির কারণে কৃষক পেঁয়াজ উডাবার পারতিছে না। তাই দাম বাইড়ে যাচ্ছে।”
শাহিনবাগের মুদি দোকানি আলামিন এসেছেন মো. লিটনের দোকানে পেঁয়াজ কিনতে। দাম শুনে তিনি বলেন, “গতকালও আমি ৮০ টাকায় কিনেছি, খুচরায় ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। আর আজ শুনি ৮৬ টাকার উপরে দাম। আমরা এই দামে কিনে কত টাকায় বিক্রি করব? হুটহাট দাম বাড়ে, কাস্টমারের সাথে মনোমালিন্য হয়।”
একই বাজারে মেসার্স মাতৃ ভান্ডারে মানিকগঞ্জের বড় আকারের পেঁয়াজ ৯০ টাকা, মধ্যম আকারের ৮৮ টাকা কেজি ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৮২ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এই দোকানের বিক্রেতা সজিব শেখ বলেন, “পেঁয়াজের সংকট রয়েছে বাজারে।”
ব্রয়লার মুরগির কেজি আবার ২০০
চারদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা হয়ে গেছে। কোথাও রাখা হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০
কারওয়ান বাজারে অন্য বাজারের তুলনায় সবসময় কম পাওয়া গেলেও তা এখন ১৯০ টাকা। তিনদিন আগেও যা ছিল ১৮০ টাকা।
আব্দুল আউয়াল ব্রয়লার হাউজে মুরগির দাম চাইতে দেখা যায় ২০০ টাকা কেজিতে। তবে দামা-দামিতে ১৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন কর্মচারী মো. শোয়েব।
তিনি বলেন, “৩-৪ দিনে কেজিতে ১০ টাকা বাড়ছে।”
নির্বাচনের আগে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গরুর মাংস তিন সপ্তাহ ধরেই ৭০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউনহল বাজার ও কারওয়ান বাজারে বেশিরভাগ দোকানে দাম দেখা যায় মাংস ৭০০ বা তার চেয়ে বেশি। কেউ কেউ ৭৫০ টাকায় চাইছেন। এ নিয়ে ক্রেতারা রাগও ঝাড়ছেন।
কারওয়ান বাজারের দোকানি মো. হাফিজ বলেন, “আমাদের আগে ৬৫০ টাকা বিক্রি করলে পোষাইতো, কিন্তু এখন পোষায় না। আমাদের গরু কেনা দাম বেশি, তাই দাম না বাড়িয়ে উপায় নাই।”
ডিমের হালি মোহাম্মদপুরে ৫০, কারওয়ানবাজারে ৪৫
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজারসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় খামারের লাল ডিম আবার ৫০ টাকা হালিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। নির্বাচনের আগে গরুর মাংস যখন কেজিতে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় নেমেছিল, সে সময় ডিমের দাম হালিতে ৪০ টাকা বা আশেপাশে নেমেছিল।
আব্দুল কাদের কৃষি মার্কেটে ডিম কিনতে এসে বলেন, “ডিমের দাম কমার কথা। কিন্তু না কমে এবার আরও বাড়ল।”
তবে কারওয়ান বাজারে ৪৫ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বিক্রেতা মো. মজিবুর বলেন, “পাইকারিতে তো দাম তো বাড়ে নাই। অনেকদিন ধরে তেজগাঁও থেকে যে দামে আনি আজও সেই দামেই আনলাম। তাই একই দামে বিক্রি করছি। আমার এখানে ৪৫ টাকা।”
মো. মজিবুরের দোকান থেকে এক ডজন ডিম ১৩৫ টাকা দিয়ে কিনেছেন মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, “বেশ কয়েকদিন ধরে তো এমন দামেই কিনছি।”
আলুর আগুন দামের নেপথ্যে যেসব কারণ