“৬০০ জন গ্যাস নিতে আবেদন করে রেখেছে। ৭৫ টাকা ইউনিটপ্রতি দাম দিতে তারা লিখিত দিয়েছে,” বলেন তিনি।
Published : 27 Apr 2025, 12:45 AM
উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘জোর জবরদস্তি’ না করে একটি ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করার কথা বলেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
শনিবার বিদ্যুৎ ভবনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ-এফইআরবি আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে সরকারের এমন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেনে তিনি।
তিনি বলেন, “বিদ্যুৎখাতে শোষণমূলক কিছু ট্যারিফ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আমরা এখন রিনেগোশিয়েট করছি গণতান্ত্রিক আবহে। আগের মত কাউকে জোর করে ডেকে এনে এটা করছি না। আমরা একটা বেঞ্চমার্ক প্রাইস প্রতিষ্ঠা করেছি।”
’বেঞ্চমার্ক’ কীভাবে ঠিক করা হবে সেটির ব্যাখ্যা করে উপদেষ্টা বলেন, “কয়লার দাম প্রতিটন ১১৫ ডলার বিবেচনায় মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন মূল্য ৮ টাকা ৪৪ পয়সা দাঁড়িয়েছে। এখন এটা ধরে আমরা প্রতিটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফমূল্য সমন্বয় করব।”
বর্তমানে মাতারবাড়ী ছাড়াও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের, পটুয়াখালীর পায়রাতে চীনা বিনিয়োগের এবং বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারতের বিনিয়োগের তিনটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুতের মূল্য ইউনিটপ্রতি ১০ টাকার আশেপাশে।
এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশের জন্য প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে আদানি গ্রুপের। ওই কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট অনেক সময় ১৬ টাকায় উঠে যাওয়ার তথ্য বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ার কারণে চুক্তি বাতিলের দাবি উঠলেও বাস্তবতার নিরিখে তা সম্ভব নয় বলে অনুষ্ঠানে বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল।
দাম সমন্বয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দুই কেন্দ্রের মধ্যে দামে পার্থক্য থাকতে পারে। সেটা হয়তো ২০/৩০ পয়সা হতে পারে। কিন্তু সেটা ৩/৪ টাকা হবে না। বেঞ্চমার্ক ধরে আমরা একইভাবে গ্যাসভিত্তিক ও অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ট্যারিফ ঠিক করে দেব।”
বর্তমান সরকারের দুর্বলতা ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নীতি নির্ধারণে লম্বা সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা স্বল্প মেয়াদের সরকার। হয়ত আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। কিন্তু জ্বালানির যেকোনো সিদ্ধান্তে আসতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। আজকেও যদি গ্যাসের খনি আবিষ্কার করা যায় তাহলে তা ব্যবহার উপযোগী হতে দুই তিন বছর লাগবে।”
বকেয়া পরিশোধ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “উপদেষ্টা হওয়ার দুই দিনের মাথায় আমাকে বলা হল, বকেয়ার কারণে কাতার এলএনজি বন্ধ করে দেবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। বিলম্বে পরিশোধের কারণে দাম বাড়তে থাকে। এসব কারণে আমরা বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার সময় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বকেয়া ছিল। বিদ্যুৎ জ্বালানিসহ এখন সেটাকে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে কমিয়ে এনেছি।
“এবার কাতারকে দাম কমাতে বলেছি। চলমান চুক্তিতে কমানো সম্ভব না। তবে নতুন কোনো চুক্তিতে গেলে তারা দাম কমাবে বলে জানিয়েছে। এটা হচ্ছে, বকেয়া রাখা আর পরিশোধ করে দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য।”
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “৬০০ জন গ্যাস নিতে আবেদন করে রেখেছে। ৭৫ টাকা ইউনিটপ্রতি দাম দিতে তারা লিখিত দিয়েছে। বলা হচ্ছে গ্যাসের দাম বাড়লে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। বাস্তবসম্মত না হলে তারা কেন ৭৫ টাকায় গ্যাস নিতে চায়?”
সরকার এরইমধ্যে অধিকাংশ বকেয়া পরিশোধ করতে সক্ষম হওয়ায় ভবিষ্যতে বকেয়া পরিশোধজনিতকারণে ভর্তুকিতে খরচ বাড়বে না বলে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “ভর্তুকি বেড়েছে এরিয়ারগুলো পেমেন্ট করার কারণে। এবছর বকেয়া পরিশোধের সুযোগও ছিল। অনেক অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁট করেছি। সেখান থেকে বকেয়া পরিশোধ করেছি। আগামী বছর কোনো বকেয়া লায়বেলিটি থাকবে না। ফলে ভর্তুকি বেশি গুণতে হবে না, বরং কমবে।”
উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁট প্রসঙ্গে ফাওজুল কবির বলেন, “উপদেষ্টা হওয়ার পর মাত্র ১০ দিন সময়ে পেয়েছি তাতে পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পে ১৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙায় একটি সেন্ট্রাল এসি রেলস্টেশন করেছিল। সেটা ক্যানসেল করেছি। কারণ এরকম উন্মুক্ত জায়গা যেখানে বাতাসের অভাব নেই সেখানে এসির দরকার নেই। এধরনের অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়েছি। মাস তিনেক পাইলে ওই প্রকল্পের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারতাম।”
সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানে নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সাগরে তেল অনুসন্ধানে টেন্ডার সাবমিট না হওয়ায় টেন্ডার ডকুমেন্ট কেনা চারটি কোম্পানির কাছে যাওয়া হয়েছে। তারা যে উত্তর দিয়েছে সেটার ভিত্তিতে পিএসসি ডকুমেন্ট সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধনী চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেলে রিটেন্ডার হবে।”
সেমিনারে বুয়েটের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বক্তব্য রাখেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।