“গাড়ি এখন আর বিলাসিতা নয়। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
Published : 26 Apr 2025, 05:35 PM
নতুনের চেয়ে পুরনো গাড়ির নিবন্ধন ও হস্তান্তর মাশুল বেশি হওয়াকে বৈষম্যমূলক বলে দাবি করেছে গাড়ি আমদানিকারক সমিতি বারভিডা। সংগঠনটি সব ধরনের গাড়ির উপর শুল্কহার কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক বলেন, “গাড়ির আমদানি শুল্ক বেশি হওয়ার কারণে মধ্যবিত্তদের বিরাট অংশ গাড়ির মালিক হতে পারছেন না।
“গাড়ি এখন আর বিলাসী নয়, নিরাপদ বাহন হয়। মধ্যবিত্তরা গাড়ি ব্যবহার করতে পারলে দেশে গাড়ির বাজার এক লাখে উন্নীত হতে পারে।”
পুরনো (রিকন্ডিশন্ড) গাড়ি ব্যাবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বারভিডা সভাপতি বলেন, দেশে বতর্মানে বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার গাড়ি নিবন্ধন হয়। এটা এক লাখে উন্নীত হলে দেশেই গাড়ি উৎপাদন ও সংযোজনে আগ্রহী হবে বিদেশি কোম্পানিগুলো।
সংগঠনের লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আব্দুল হক। এতে বলা হয়, “রিকন্ডিশন মোটরযান আমদানিতে আমরা ন্যূনতম ১২৯ শতাংশ সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ শুল্ক প্রদান করছি। এটি কমানো দরকর।”
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর নিবন্ধন খরচ নতুনের চেয়ে পুরনো গাড়িতে অনেক বেশি বলে তুলে ধরে বারভিডা বলেছে, দেড় হাজার সিসি সক্ষমতার গাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা বদল ও মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট মিলিয়ে নতুন গাড়িতে খরচ পড়ে ৮০ হাজার ৪০৮ টাকার বেশি। অন্যদিকে পুরনো গাড়িতে এ খরচ হয় ১ লাখ ৭ হাজার টাকার বেশি। আর সাড়ে তিন হাজার সিসি সক্ষমতার নতুন গাড়িতে খরচ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৮ টাকা। একই সক্ষমতার পুরনো গাড়ির বেলায় তা ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৬ টাকা।
মডেল ভেদে পুরনো গাড়ির নিবন্ধন খরচ নতুনের তুলনায় ২৭ হাজার থেকে ৫৪ হাজার টাকার মত বেশি হওয়াটা বৈষম্যমূলক বলে দাবি করেন আব্দুল হক।
তিনি বললেন, “গাড়ি আমদানি পরবর্তী শুল্কহার বেশি হওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত গাড়ি কিনতে পারছেন না।”
দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ঝুঁকিপূর্ণ ছোট যানবাহনের কারণে প্রতি বছর সড়কে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত ও ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত হয়েছে।
আগের বছরের তুলনায় সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, আর মৃত্যু বেড়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এসব দূঘর্টনায় নিম্নমানের গাড়ির সঙ্গে স্থানীয় পরিবহন রয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা পরিবেশের জন্য হুমকি ও দেশের জন্য ‘ক্যান্সারে’ পরিণত হয়েছে দাবি করে বারভিডা সভাপতি বলেন, “গাড়ি এখন আর বিলাসিতা নয়। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। গাড়ির ব্যবহার বাড়লে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে যাবে।”
তিনি বলেন, শুল্কহার বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে দুর্ঘটনা কমছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিআরটিএ এর তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালে গাড়ি নিবন্ধন হয় ৩ লাখ ৭ হাজারটি। ২০২৩ সালে তা ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে নিবন্ধন হয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার। ২০১৫ সালের পর থেকে এটিই একক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ।
বারভিডা বলেছে, সরকার শুল্কহার কমালে দাম বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
বর্ধিত গাড়ির চাপ সড়কগুলো নিতে পারবে কি না, এ প্রশ্নে বারভিডা সভাপতি বলেন, “আমরা গণপরিবহনকে সমর্থন করি। আমাদের মত ঘনবসতির দেশে শুধু গাড়ি দিয়ে যানজট নিরসন সমাধান সম্ভব না। আমি মেট্রোরেল বাস্তবায়ন প্রকল্পে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলাম।
“সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অনেক কম খরচে বাংলাদেশে মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব। তাতে ভাড়াও কম হবে।”
‘বারভিডার ব্যবসা-সহায়ক এবং ভোক্তা ও রাজস্ববান্ধব শুল্ক-বাণিজ্য নীতিমালা দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ রহমান, সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জগলুল হোসেন।