দাম বাড়িয়ে স্থিতিশীল পেঁয়াজ আর সয়াবিন।
Published : 25 Apr 2025, 09:58 PM
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তরিতরকারিতে স্বস্তি ফেরেনি।
মুরগির দাম কমার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, তীব্র গরমে মুরগি মরে যেতে পারে- এ ভয়ে অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সবজির বাজার চড়া হওয়ার যুক্তি হিসেবেও আবহাওয়াকে সামনে দাঁড় করাচ্ছেন বিক্রেতারা। তাদের ভাষ্য, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।
মুরগি আর তরিতরকারির বাজার ওঠানামা করলেও গত সপ্তাহের দামেই আছে পেঁয়াজ আর সয়াবিন তেল। যদিও ঈদের পর দুটি পণ্যই দাম ‘বাড়িয়ে নিয়েছে’।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী, সাত তলা ও নিকেতন কাঁচাবাজারের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতকালীন সবজির সরবরাহ থাকায় মোটামুটি ঈদের আগ পর্যন্ত সবজির দাম কম ছিল। কিন্তু বাজার আবার চড়েছে।
এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির কেজিই ৬০ টাকার ওপরে; একশ পার করা সবজিও আছে।
বাজাগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে করলা, পটল, ধুন্দুল, বেগুন, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
কিছু সবজি শতক ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বরবটি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, কাঁকরোল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, সজনে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিকেতন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা জসিম উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ কম। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।
“পাইকারিতে এখন দাম বেশি সবজির, তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
বাজারে শীতকালীন কিছু সবজি এখনও মিলছে, তবে দাম চড়া। এর মধ্যে শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও শালগম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে।
ফুলকপি আকৃতিভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ১০০ টাকা ও চাল কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা।
প্রতিকেজি ৬০ টাকার কমে মিলছে কেবল পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়া। সবজি দুটির কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
বাজারে ঈদের পরও কিছুদিন বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া লেবুর হালির দাম কমে নেমেছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। আর ধনে পাতা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ‘সবজি’ হিসেবে কাঁচা আমও মিলছে। ছোট মাছ ও ডালসহ বেশ কিছু খাবারে ব্যবহার হওয়া পণ্যটির কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
কাঁচামরিচ গেল সপ্তাহের মতই মিলছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। শীতের আরেক সবজি টমেটোর কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। এক কেজি গাজর ৫০ টাকা মিললেও শসায় গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
সাত তলা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গোপাল চন্দ্র শীল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সেলুনের দোকানে কাজ করি। সবজির দামটা অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। দু-চার মাস ভালোই গেল। এখন সব সবজির দাম বাড়তি।”
সবজির দাম নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বাজারে আসা আরেক ক্রেতা বেসরকারি চাকুরে শাহজালাল। তিনি বলেন, “সবজির দামটা ঈদের পরে বেড়ে গেল। এতদিন যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে চাইলে এখনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নাহয় তো আমাদের পকেটে টান পড়ে।”
সবজির দাম বাড়তি হলেও বাজারগুলোতে শাক বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। এক আঁটি লাল শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৪০-৫০ টাকা, ডাটা শাক ১০ টাকা ও পাট শাকের আঁটি মিলছে ৩০ টাকায়।
কমেছে মুরগির দাম
রাজধানীর বাজারগুলোয় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। সাত তলা কাঁচাবাজারের ‘রাজীব-মুক্তা পোল্ট্রি দোকানের’ বিক্রেতা রাজিব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তার তথ্যানুযায়ী, সোনালি মুরগি কেজিতে গেল সপ্তাহের তুলনায় ২০ টাকা কমে ২৬০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড জাতের মুরগি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর লাল লেয়ার মুরগির কেজি ২৭০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় মিলছে।
ব্রয়লার মুরগি গেল সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে ৬৩০-৬৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম কমার কারণ জানতে চাইলে এই দোকানি বলেন, “গেল কয়েক দিন ধরে যে তীব্র গরম পড়ছে, তাতে মুরগি মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; বিশেষ করে ব্রয়লার। এ কারণে দাম কিছুটা পড়ে যায়”
মশলাপাতি আগের দামেই
বাজারে অধিকাংশ মশলাজাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। গেল সপ্তাহে হঠাৎ চড়ে যাওয়া পেঁয়াজের বাজারও স্থিতিশীল আছে আগের দামে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাজারে বগুড়ার আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ গেল সপ্তাহের মতই ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আদা প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি রসুন ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, হাইব্রিড (মোটা দানা) মশুর ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা ও ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আল আমীন বলেন, “পেঁয়াজের বাজার নিয়ে অভিযানের সংবাদ পেলাম; ফরিদপুরসহ বিভিন্ন আড়ত ও পাইকারি দোকানে। নয়ত দাম আরও বাড়ার শঙ্কা ছিল।
“এখন দাম স্থিতিশীল আছে। এছাড়া অন্যান্য মশালজাত পণ্যের দামেও খুব-বেশি ওঠানামা হয়নি। দাম বাড়ার পর বোতলের সয়াবিন তেলের সরবরাহও পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে।”
ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে পাঁচ মাসের মাথায় গত ১৫ এপ্রিল বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়ায় সরকার।
প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের নতুন দাম ধরা হয় ১৮৯ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতল ৮৫২ থেকে হয় ৯২২ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের লিটার ১২ টাকা বেড়ে হয় ১৬৯।
ঈদের পর বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দামও। বাড়তে বাড়তে ৩৫ টাকার পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ঠেকে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।