কোরবানির ঈদ ঘিরে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ক্যাব।
Published : 22 Jun 2023, 05:59 PM
ঈদকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের চড়া দামে লাগাম টানতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে বাজার মনিটরিংয়ের অনুরোধ জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।
কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি বলেছে, ঈদের আগে সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, জিরাসহ অন্যান্য মসলার দাম উর্ধ্বমুখী। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে কাজ শুরু করলেও বাজারে তার প্রভাব তেমন দেখা যাচ্ছে না। ফলে লাগামহীন পণ্যমূল্যের কারণে দিশেহারা ভোক্তারা।
বিষয়টি নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, “ঈদ সামনে রেখে যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, ভারতে তা আমাদের চেয়ে ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট’ কম আছে। সরকারের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এখানে সবাই যদি সুষ্ঠুভাবে বাজার মনিটরিং করেন, তাহলে মূল্য কমতে পারে।”
ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে গরুর মাংস, সব ধরনের মশলা জাতীয় পণ্য কিংবা চিনির নিয়ন্ত্রণ ‘কতিপয় কোম্পানির হাতে চলে যাওয়ায়’ বাজারে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পণ্যের দাম বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের আমদানি পর্যায়ে দাম বেশি। কারণ সকল নিত্যপণ্য ছয়-সাতটা কোম্পানির কাছে চলে গেছে। এই মাল্টিন্যাশনালের কারণে সাধারণ ছোট কোম্পানিগুলো এলসি করতে পারছে না। ফলে উনারা ইচ্ছামত দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।”
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ ৫০-৬০টা পণ্য দৈনিক ব্যবহার করে। সেগুলো নিয়ে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ইনডেক্স করা হয়, তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।”
কৃষিতে সরকারের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা কৃষিতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য করছি। কৃষিতে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি অন্যান্য দেশের চেয়ে কম, সেজন্য আমরা এখানে আমদানি শুল্ক আরোপ করছি। আসলে আমাদের উচিত কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে কৃষিকে মানুষের দোড়গোঁড়ায় পৌঁছে দেওয়া। তখন আমদানি কমে যাবে, দামও কম পড়বে।”
এর পাশাপাশি তিনি সোশাল সেইফটি নেট কর্মসূচি বৃদ্ধিতে, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে এবং নিত্যপণ্যকে ভোক্তাবান্ধব করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শও দেন।
“আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো যদি সমন্বয় করে কাজ করে, তাহলে পণ্যকে ভোক্তাবান্ধব করার সুযোগ এখনও আছে। কিন্তু আমাদের প্রশাসনিক কাঠামোর কারণে সেটা হচ্ছে না। আর আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দুটি বিভাগ দরকার; একটা বিজনেস ডিভিশন, আরেকটা কনজ্যুমার ডিভিশন।”
ক্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে বাজারে গরুর মাংস ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ ভারতের কলকাতায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ রুপিতে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৪৫ টাকা। এই চড়া দামের কারণে নিম্ন ও নিম্নবিত্ত লোকেরা এখন গরুর মাংস খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন।
এছাড়া, গত এক বছরে জিরা, রসুন, ও চিনির দাম যথাক্রমে ৫৬, ৬৩ ও ৫৭ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৫-৬৫ টাকা। আর আমদানি ও রিফাইনারি পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে না দেওয়ায় খুচরা বাজারে এর দাম বেশি পড়ছে বলে মনে করে ক্যাব।
চলমান সংকট দূর করতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যের বিক্রয়মূল্য দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করাতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ক্যাব।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য সংগ্রহ করে পণ্যের আমদানি মূল্য, পাইকারি মূল্য ও খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপরও জোর দিয়েছে সংগঠনটি।