কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি কমেছে মাছের দর। ব্রয়লার নেমে এসেছে ১৬০ টাকায়।
Published : 17 Nov 2023, 06:31 PM
মাসের পর মাস উচ্চ মূল্যে বাজার করে ত্যক্ত বিরক্ত ক্রেতারা শীতের আগে আগে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। কমে আসছে বেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ পণ্যের দর।
শুক্রবার বৃষ্টিস্নাত দিনে বাজারে গিয়ে কিছুটা হাসিমুখেই ফিরতে পেরেছে ঢাকার মানুষ। তবে টানা হরতাল অবরোধে আবার দাম বেড়ে যায় কি না, এমন শঙ্কার কথাও বলেছেন একজন ক্রেতা।
মিরপুর পীরেরবাগে বাজার করতে আসা আমাতুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাক সবজির দাম কমছে না তা বলব না। তবে এই পরিস্থিত চলতে থাকে নাকি হরতাল অবরোধের কথা বলে আবার দাম বাড়ায় সেটা দেখার অপেক্ষা।”
দুই সপ্তাহ ধরেই দাম কমছে সবজির। এর সঙ্গে স্বস্তি দিচ্ছে মাছের দামও। ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ার পর ডিমের পড়তি দামে কমছে মুরগির দামও। গরুর মাংসও আগের তুলনায় কিছুটা কম দামে কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
তবে চিনির দামে এই স্বস্তি নেই। কদিন আগে সরকার শুল্ক কমালেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। উল্টো নতুন করে বেড়ে গেছে দাম।
মাছের দামে ‘বড় পতন’
সুপার শপ স্বপ্ন দেড় কেজি ওজন পর্যন্ত রুই মাছ সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিশেষ মূল্য ২৮৫ টাকা দরে বিক্রি করেছে। কাটাকাটির খরচও নেই। বাইরে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা নেয়। এই হিসাবে দর পড়েছে ২৭০ বা ২৭৫ টাকা।
এক মাস আগেও এই মাছ ৩৭৫ বা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে সুপার শপটি। তেলাপিয়ার দাম কমে ১৮০ টাকায় নেমেছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।
এর চেয়ে বেশি কমেছে চিংড়ির দাম। কেজিতে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা কমে গলদা ও বাগদার দাম নেমে এসেছে ৭০০ টাকার নিচে। কদিন আগেও দাম ছিল হাজারের কাছাকাছি।
অন্য সুপার শপগুলোতেও মিলছে এই স্বস্তি। তবে একেকটিতে দেখা গেছে একেক দর। বাইরের খোলাবাজারের চিত্রটিও আলাদা কিছু নয়।
মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা আলী আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি কমেছে।
বড় সাইজের পোয়া মাছ তিনি বিক্রি করেছেন ৩০০ টাকা কেজি দরে যা কিছু দিন আগেও ছিল চারশ টাকার বেশি।
সাড়ে ৩ কেজি থেকে ৪ কেজি ওজনের রুই মাছের দাম চেয়েছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে, কিছুদিন আগেও তা পাঁচশ টাকার আশেপাশে ছিল।
আড়াই কেজি ওজনের বোয়াল মাছ প্রতিকেজি ৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০ টাকা, এক কেজি ওজনের কোরাল মাছের দাম চেয়েছেন ৬০০ টাকা।
এক সপ্তাহ আগেও ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে চিংড়ি বিক্রি করেছেন বলেও জানালেন এই বিক্রেতা।
আরেকজন বিক্রেতা এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম চেয়েছেন ১২শ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা।
স্বস্তি মাংসেও
পীরেরবাগে বাজারে এদিন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। দুই সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ১৮০ টাকা।
আরও বেশি কমেছে সোনালী মুরগির দাম। দুই সপ্তাহ আগেও ৩০০ বা ৩২০ টাকা কেজি দরের এই জাতের দাম এখন নেমেছে ২৬০ টাকায়। এক সপ্তাহে কেজি ২০ টাকা কমার তথ্য দিয়েছেন বিক্রেতারা।
ডিম পাড়া শেষে কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া লেয়ারের দাম এই বাজারে দেখা গেল ২৯০ টাকা দরে।
মুরগির পাশাপাশি কিছুটা কমেছে গরুর মাংসের দামও। পীরেরবাগে এদিন ৭২০ টাকা দরেই কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৭৪০ টাকা করে। সুপার শপগুলোতেও এই মাংস পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৭৩০ টাকা করে।
শীতের সবজির স্বাদ
ঢাকার বাইরে তাপমাত্রা কমে আসতে থাকার পর ঢাকার বাজারে বাড়ছে সবজির সরবরাহ। এতে অক্টোবরের শুরুতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরের সবজিগুলো নেমে এসেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
পীরেরবাগ বাজারে ফুল কপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, বাঁধা কপি ৩০ টাকা, পটল, শিম, চিচিঙ্গা, শসা ও উচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুলার দাম নেমে এসেছে ৪০ টাকা বা তার চেয়ে নিচে।
তুমুল আলোচিত কাঁচা মরিচের দর এখন কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
দেশি পাকা টমেটো এখনও উঠেনি। কাঁচা অবস্থায় সবজিটি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। পাকা টমেটো আসছে দেশের বাইরে থেকে। পীরেরবাগে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা দরে।
সবজি বিক্রেতা মো. শামীম বলেন, “এখন দাম খুব একটা বেশি নাই। দুই সপ্তাহ ধরেই কমে আসছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিতে আরও ১০/১৫ টাকা করে কমেছে।”
চিনির উল্টো দৌড়
চিনি কোম্পানিগুলো নিজেরা যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ঘোষণা করেছে, তা তারা নিজেরাই মানছে না বহু মাস ধরেই। খুচরা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, আরেক দফা বেড়েছে দাম।
সর্বশেষ সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিকেজি খোলা চিনি ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজান চিনি ১৩৫ টাকা করে বিক্রি হওয়ার কথা।
কিন্তু খুচরায় খোলা চিনির দাম এখন ১৪০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি কোথাও ১৪০, কোথাও দাম, নিচ্ছে ১৫০ টাকা।
চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাইকারি বাজারে চিনির দাম গত ১০ দিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। আগে প্রতিকেজি ১২৮ টাকা থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা থেকে ১৩৬ টাকায়।”
ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এই দাম আর কমে কি না, সে বিষয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন তিনি।