গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতি ঘনফুট গ্যাস ১৭ টাকা দরে কিনে সিএনজিতে রূপান্তর ও পরিবহনের পর ঢাকায় বিক্রি করা হবে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা দরে।
Published : 21 Dec 2023, 06:14 PM
দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে প্রথমবারের মত ভোলার গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা প্রাকৃতিক গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকার বিভিন্ন শিল্পগ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো গ্রুপ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেডে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহের নতুন এই পদ্ধতি উদ্বোধন করা হল।
এ উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, ইন্ট্রাকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এইচএম হাকিম আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াদ আলী উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও দেশে জ্বালানি সংকট শুরু হওয়ার পর ভোলার গ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তর করে শিল্পের চাহিদা মেটানোর প্রস্তাব উঠে। সেই আলোচনার প্রেক্ষিতে গত ২১ মে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করে ভোলার গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।
চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস পরিবহন করলেও আগামী এক বছরের মধ্যে দৈনিক আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহন ও বিতরণের সক্ষমতা অর্জন করবে ইন্ট্রাকো।
সুন্দরবন গ্যাস ফিল্ডের কাছ থেকে প্রতি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস ১৭ টাকা দরে কিনে সিএনজি আকারে রূপান্তর ও দীর্ঘ পথ পরিবহনের পর ঢাকায় শিল্প গ্রাহকদের কাছে তা বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি ইউনিট ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা দরে।
ইন্ট্রাকোর কর্মকর্তারা জানান, ভোলা প্রান্তে গ্যাস রূপান্তর করে তা বড় বড় টিউব ট্রেইলারের সিলিন্ডারে পূর্ণ করা হয়। এরপর মেঘনা নদীর ইলিশা-লক্ষ্মীপুর অথবা ভোলা বরিশাল রুট হয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে আসে এসব ট্রেইলার।
এভাবে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে ৩০ থেকে ৩২টি ট্রাক বা ট্রেইলারের প্রয়োজন হবে। তিন হাজার পিএসআই চাপে এসব গ্যাস সিএনজি আকারে সিলিন্ডারে থাকলেও গ্রাহককে দেওয়ার সময় ১৫ পিএসআই চাপে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, সিলিন্ডারের পাশাপাশি ভোলা-বরিশাল পাইপলাইন করা হবে। সেখান থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ করার প্রাক-সমীক্ষা চলছে।
এভাবে সিএনজি করে পরিবহনের ফলে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভোলা-বরিশাল পাইপলাইন করতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা লাগবে। পাইপলাইনের টাকা সরকার দেয় তাই কেউ সেটা হিসেব করে না। জমির দাম পাইপের দাম কেউ বিবেচনায় নেয় না। শুধু গ্যাসের দাম হিসেব করা হয়। পাইপের দাম বিবেচনা করলে এই দাম খুব বেশি না।”
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম বলেন, “দৈনিক ৫ এমএমসিএফ খুব বেশি নয়। তবে কেবল শুরু, আরও বাড়াতে হবে। এলএনজি যেভাবে বড় বড় জাহাজে করে আসে, সেভাবে নিয়ে আতে হবে।”
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, “আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মত। আর সরবরাহ হচ্ছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে আসছে ২১০০ মিলিয়নের মত, আমদানি হচ্ছে কম-বেশি ৮০০ মিলিয়ন।
“চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় কিছু এলাকায়, বিশেষ করে সরবরাহ লাইনের শেষ প্রান্তের গ্রাহকদের গ্যাসের মারাত্মক স্বল্পচাপ বিরাজ করে। ভোলার গ্যাসকে সিএনজি আকারে নিয়ে এসে এসব গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা হবে। আমাদের দেশের অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোও যেন এ বিষয়ে এগিয়ে আসে।”
তিনি বলেন, বর্ডার পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের অনুমতি পেলে শিগগিরই চুক্তি করা হবে।
“পাশাপাশি দেশের মধ্যে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ৪৬টি কূপ খননের যে কাজ চলমান রয়েছে, সেটির লক্ষ্য বাড়িয়ে ৪৮ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পে নয়টি কূপ খনন করা হয়েছে, তাতে সাতটিতে গ্যাস পেয়েছি। এতে করে ১২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে।”
২০২৬ সাল থেকে ২৮ সালের মধ্যে আরও অন্তত ৬০টি কূপ খনন করা হবে বলে জানান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “আমরা যখন চুক্তি করেছি সিএনজি আনার। প্রথমে আসবে ৫ মিলিয়ন এবং পরে আরও ২০ মিলিয়ন। ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে আরও ২০ মিলিয়ন আসার কথা। আমি আগেই আনার ব্যবস্থা করব। ভোলা এলাকায় আরও পাঁচটি কূপ খনন করা হচ্ছে, ২০২৬-২৮ এর মহাপরিকল্পনায় আরও কূপ খনন করা হবে। তাতে উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়ে যাবে।”
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের চেয়ারম্যান এইচএম হাকিম আলী বলেন, “আমাদের দেশ যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, গাড়ির মধ্যে সিএনজি দেওয়া হল, তখন সমালোচনা হয়েছিল। এখন কিন্তু সেই সিএনজি নিয়ে আর সমালোচনা নেই। এখানেও প্রথমে সমালোচনা হচ্ছে, পরে আর থাকবে না।”
পুরনো খবর