নিজেদের গ্রাহকদের আগ্রহে শাখা খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে এসবার ব্যাংক; যেটির উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
Published : 19 Jul 2023, 11:50 PM
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভূমিকা রাখতে এবং ডলারের বিকল্প লেনদেন চালু করতে বাংলাদেশে শাখা খুলতে আগ্রহ দেখিয়েছে রাশিয়ার একটি ব্যাংক, যা গড়িয়েছে আলোচনার টেবিলেও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ নিয়ে দুদফা বৈঠক করেছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক এসবার ব্যাংক রেসি পিএও, যা এসবার ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। কোরবানি ঈদের আগে প্রথম দফার আলোচনা শেষে ঢাকা ঘুরে গেছে ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল এবং ৬ জুলাই ভার্চুয়াল মাধ্যমে হয় দ্বিতীয় বৈঠক।
এর আগে গত ১৭ মে ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় অংশীদারিত্ব থাকা রাশিয়ার ব্যাংকটি এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি শাখা খুলতে আগ্রহ দেখিয়ে চিঠি দেয়। ব্যাংকটির নির্বাহী বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান আনাতলি পাপোভের দেওয়া চিঠিতে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
আলোচনা ও আবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তবে মস্কোভিত্তিক এসবার ব্যাংকের নির্বাহী বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান পাপোভকে ঊদ্ধৃত করে জনসংযোগ বিভাগ ইমেইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে বলেছে, ব্যাংকের রাশিয়ান গ্রাহকের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির ব্যাবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। সেসব গ্রাহকদের অনুরোধে ব্যাংকিং পরিষেবার সম্ভ্যাব্য সব সুযোগ ও কাঠামোর আরও বাড়াতে চায় ব্যাংকটি।
ঈদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর গত ৬ জুলাই ভার্চুয়াল আলোচনায় এসবার ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব করেন নির্বাহী বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান পাপোভ।
এ বিষয়ে অবহিত রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক এ দুই বৈঠকে এখন পর্যন্ত নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যাংকটি শাখা খুলতে আইনি শর্ত এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চেয়েছে।
এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশি ব্যাংকের শাখা খুলতে ব্যাংকিং নীতিমালা পরিপালনের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সরকারও সম্পৃক্ত। এজন্য তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় দফার বৈঠকে বাংলাদেশে বিদেশি ব্যাংকের শাখা খুলতে যেসব তথ্য সরবরাহ করতে হবে সেটির একটি তালিকাও এসবার ব্যাংককে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাসের প্রেস এটাচে আমাতুলা খানোভা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডট্কমকে বলেন, “সংবাদমাধ্যমকে জানানোর মতো আনুষ্ঠানিক তথ্য এখন পর্যন্ত দূতাবাসের কাছে নেই।’’
পাশের দেশ ইউক্রেইনে ২০২২ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। যে কোনো ধরনের লেনদেনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা রাশিয়ার ব্যাংকের মধ্যে এসবার ব্যাংকও রয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে ডলারে লেনদেনে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন ব্যাবসায়ীরা। সরকারও রাশিয়ার অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অর্থ পরিশোধেও বিপাকে পড়েছে। কিস্তির অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ।
এর আগে ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা বাড়াতে গঠিত বাংলাদেশ-রাশিয়া আন্তঃসরকার কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশে রাশিয়ার একটি ব্যাংক চালুর বিষয়ে আলোচনাও হয়েছিল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে কমিশনের প্রথম বৈঠকে রাশিয়া সেই ব্যাংকের সম্ভাব্য নাম হিসেবে ‘স্পুটনিক ব্যাংক’ প্রস্তাব করলেও তা নিয়ে অগ্রগতির খবর পরে আর আসেনি।
দেশে ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। প্রাথমিক অনুমোদন হিসেবে ‘লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই)’ পাওয়ার পর ৫০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনসহ অন্যান্য শর্ত পরিপালন করলে ব্যাংকের লাইসেন্স দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিদেশি কোনো ব্যাংক বাংলাদেশে শাখা খুলতে চাইলে প্রথমবার একইরকম পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এজন্য কোম্পানি গঠন করে ৫০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের শর্তও মানতে হয়।
অপরদিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বাংলাদেশে ব্যাংকের ব্যবসা করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অুনমোদন নিতে হয়।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনতে ও তাদের জনবলের কর্ম অনুমোদন (ওয়ার্ক পারমিট) দেওয়ার সরকারি সংস্থা বিডা। তাই বিদেশি ব্যাংকের জনবল ও ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনায় এ অনুমোদনের প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশে ৯টি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিব্যাংক এনএ, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্টান্ডার্ড চাটার্ড বাংলাদেশ ও এইচএসবিসি, ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, পাকিস্তানের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ব্যাংক আল-ফালাহ ও হাবিব ব্যাংক এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উরি ব্যাংক।