ব্যাংকে ইন্টারনেট না থাকায় আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা যায়নি। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিটেন্স আনা নেওয়ার কার্যক্রমও পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
Published : 23 Jul 2024, 10:35 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে দেশে ইন্টারনেটের পাশাপাশি চার দিন ধরে ব্যাংক বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে; ব্যাহত হয়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির পর আরও দুই দিনের সরকারি ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় রেমিটেন্স আসা-যাওয়ার কাজও বন্ধ ছিল।
আগেভাগে অনেকে টাকা তুলে না রাখায় নগদ অর্থ সংকটেও পড়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি অনেকে। জরুরি পণ্য কিনতে দোকানগুলোতে টাকা পরিশোধেও বেগ পেতে হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে অবরোধ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। এতে অনলাইনে সব ধরনের ব্যাংকিং লেনদেন এবং আমদানি-রপ্তানির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মহাখালীতে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ দুযোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবনে আগুন দিলে পাশের ভবনের ডেটা সেন্টারের তার পুড়ে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এতে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মাধ্যম নির্ভর লেনদেনে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশি। চার দিন ধরে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় রাজধানীর অনেক এলাকার এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠানো সম্ভব হলেও অনেক এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি গ্রাহকরা। আবার কোনো কোনো বুথে টাকা শেষ হয়ে যায়। আবার কোথাও টাকা থাকার পরও মেশিন কাজ করেনি। এতে বিপাকে পড়েন নগরবাসী।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের পরিপত্র জুনের শেষে হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা ফের মাঠে নামে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে যায়। এক পর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নিলে হতাহতের ঘটনার ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কারফিউ দেওয়া হয় এবং সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটির পর নির্বাহী আদেশে রবি ও সোমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
সধারণ ছুটির কারণে ব্যাংকও বন্ধ রাখা হয়। এতে করে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাপকভিত্তিক ইন্টারনেট নির্ভরতার কারণে ইন্টারনেট ছাড়া ব্যাংকের লেনদেন করা এখন জটিল এক কাজ। এ কারণে আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়াও সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া চেক দিয়ে গ্রাহকের টাকা উত্তোলন করাও এখন আর সম্ভব নয়। এখন ব্যাংকের সব কার্যক্রম সফটয়্যারের মাধ্যমে হয় বলে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া তা সচল করা সম্ভব নয়।
নুরুল কবির দম্পতি বেসরকারি চাকরীজিবি। তারা দুজনই কেনাকাটায় ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করেন। কোটা আন্দোলনের কারণে তৈরি বর্তমান পরিস্থিতিতে নগদ টাকা না থাকায় তারা পড়েন বিপাকে। এরমধ্যে মোহাম্মদপুরের একটি দোকানে ব্যাংকের পস মেশিনে টাকা পরিশোধ করতে চাইলে সেটি কাজ করছিল না।
সোমবার সকালে নুরুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ব্যাংকিং কার্ড ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। হঠাৎ এভাবে ইন্টারনেট কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কারণে আমরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছি না। এমনকি জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়েছে।”
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্ধ থাকায় ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। এছাড়া ইন্টারনেট কার্যক্রম বন্ধ থাকলে কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। বাইরে থেকে রেমিটেন্স আসা কিংবা দেশ থেকে রেমিটেন্স বাইরে যাওয়াও বন্ধ রয়েছে।
এটিএম বুথ বন্ধ অনেক জায়গায়
রাজধানীর যেসব এলাকা ঘিরে সংঘর্ষ বেশি হয়েছে সেগুলোতে এটিমএম বুথ বন্ধ রেখেছে ব্যাংকগুলো। আগুন, ভাঙচুরের মধ্যে নিরাপত্তাজনিত কারণে এগুলো বন্ধ রাখা হয়। অন্যসব এলাকার এটিএম বুথগুলো খোলা ছিল। তবে অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, তারা বুথে গিয়ে টাকা তুলতে পারেননি।
রেমিটেন্স আসা বন্ধ
কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় বিদেশ থেকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আসা বন্ধ রয়েছে। যারা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন সেগুলো এখন জমা হওয়ার সুযোগ নেই। ইন্টারনেট সংযোগ ফিরলে সেগুলো সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। এখন ব্যাংকগুলো কোনো রেমিটেন্স গ্রহণ করছে না।
আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
অন্য সময় সরকারি বা সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানির কাজ চলে। তবে ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধের পাশাপাশি এবার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
বিকেএমইর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সোমবার বলেন, “ইন্টারনেট কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ আছে। তাতে অর্থনীতি বিপাকের মধ্যে পড়েছে।”
মোবাইল ব্যাংকিংও ব্যাহত
ইন্টারনেট ছাড়া ইউএসএসডি কোডের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি বিকাশ, নগদ ও রকেটের মত সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সব জায়গায় টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
অনেকে এজেন্ট বলছেন, ইউএসএসডি কোড ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি একযোগে টাকা পাঠানোর চেষ্টা করলে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। এতে করে টাকা লেনদেন ব্যাহত হয়। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে।