ডিমের দাম যখন লাগামছাড়া ছিল, সে সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে দাবি করা হয়, ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এখন পাইকারি দর নেমেছে ৯ টাকায়।
Published : 09 Nov 2023, 09:09 PM
ভারত থেকে ডিমের চালান আসতে না আসতেই হুড়মুড়িয়ে কমতে থাকা ডিম এখন ঢাকার কোথাও কোথায় খুচরায় ১০ টাকাতেও নেমে এসেছে। অথচ সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২ টাকা বেঁধে দিয়েও সফল হয়নি সরকার।
বৃহস্পতিবার মিরপুর বড়বাগ বাজারে এক ডজন সাদা ডিম ১২০ টাকায় এবং লাল ডিম ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই হিসাবে প্রতিটি সাদা ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা, লাল ডিমের দাম ছিল ১১ টাকার কম।
সাদা ডিমের দাম সব সময় কিছুটা কম থাকলেও ডিমের বাজার যখন অস্থিতিশীল হয়ে উঠে, সে সময় দুই ধরনের ডিমই একই দামে বিক্রি হতেও দেখা যায়।
অবশ্য বড়বাগ বাজারের দরেই যে সব জায়গায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে এমন নয়। দাম বাড়ার সময় সব জায়গায় একসঙ্গে লাফ দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, কমার ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। লাল ডিম এখনও এলাকা ভেদে কোথাও কোথাও ১৪০ টাকা, কোথাও ১৪৪ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এমনকি এদিন সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ ডিম বিক্রি করেছে সাড়ে ১২ টাকা দরে ১৫০ টাকা ডজনে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “এখন পাইকারি বাজারে এখন প্রতিটি ডিমের পাইকারি দর ৯ টাকা থেকে ৯টাকা ৩০ পয়সা।”
ডিমের দাম যখন লাগামছাড়া ছিল, সে সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে দাবি করা হয়, ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা।
এখন কথিত সেই উৎপাদন খরচের চেয়ে কমে পাইকারি দর কীভাবে নামল- এই প্রশ্নে সুমন হাওলাদার বলেন, “কারসাজি করে খামারিদের চাপে ফেলার জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে করে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ে আবারও খামারবিমুখ হয়।
“ক্ষুদ্র খামারিরা উৎপাদন কমিয়ে দিলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তখন আবারও বাজারের দখল নিয়ে এক চেটিয়ে ব্যবসা করবে।”
পোলট্রি খাতে প্রভাব বিস্তার করা করপোরেট কোম্পানিগুলো কখনও এসব বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে না। গত রোজায় ব্রয়লার মুরগির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে ‘কারসাজির’ কথা বলা হয়েছিল। তবে এ জন্য কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিটি ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২ টাকা দাম ঠিক করে দেয় সরকার। কিন্তু বাজারে ১৪৪ টাকা ডজনে ডিম পাওয়া যায়নি।
তিনদিন পর ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর কদিন দাম কমতে থাকে। শুরুতে চারটি কোম্পানিকে চার কোটি ডিম আনার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ১৫টি কোম্পানি, তারা আনতে পারবে ১৫ কোটি ডিম।
তবে নানা জটিলতায় আমদানি দেরি হতে থাকলে আবার চড়তে থাকে দাম। ডজন ছাড়িয়ে যায় ১৬০ টাকা।
তবে গত ৬ নভেম্বর ঘুরে যায় চাকা। ভারত থেকে আসে ৬২ হাজার ডিমের প্রথম চালান। পরদিন থেকেই কমতে থাকে দাম।
এক দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে দাম কমে আসে ৮০ পয়সা। পরে দাম আরও কমতে থাকে।
ডিম বিক্রেতা খোরশেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক সপ্তাহে ধইরা পাইকারিতে প্রতিদিনই ডিমের দাম কমতেছে, আমরাও কমাইতেছি। গত এক বছরের মধ্যে ডিমের দাম এতটা কমে নাই।
“দাম বেশি কমে গেলে খামারিরা লোকসানে পড়বে। সেই ক্ষেত্রে একটি ঝুঁকি আছে। সেটা হচ্ছে, বেশি লোকসান হওয়া শুরু করলে খামারি মুরগি বিক্রি করে খামার বন্ধ করে দেবে। তখন আবার ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দেবে, দাম বাড়তে শুরু করবে।”
কমছে মুরগির দরও
মিরপুরের বড়বাগে কেনাকাটা করতে আসা মোশাররফ হোসেন বলেন, “মাছ-মাংস, শাক সবজির দাম আজকে বেশ কমে এসেছে। কাকে ধন্যবাদ দেব জানি না। আমরা চাই সব পণ্য যেন যৌক্তিক দামের মধ্যে থাকে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।”
মোশাররফের কথার প্রতিফলন পাওয়া গেলো মুরগির বাজারে দিয়ে। বিক্রেতা আনিসুর রহমান বলেন, “চলতি সপ্তাহে মুরগির বাজার বেশ নিম্নমুখী। ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকায় নেমে এসেছে।”
দুই সপ্তাহ আগেও বড়বাগ বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে।
লেয়ার মুরগির দামও নেমে এসেছে ৩০০ টাকা কেজি দরে, যা কদিন আগেও ছিল ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। কক মুরগি ২৮০ টাকায়, দেশি মুরগি ৫২০ টাকায় এবং গরুর মাংস ৭৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে মিরপুরের এই বাজারে।
শীতের আগাম সবজিতে ‘খুশির হাওয়া’
গ্রীষ্মকালীন সবজির শেষ মৌসুমে বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতিতে গোটা অক্টোবর মাসে সবজির দাম ভুগিয়েছে মানুষকে। কদিন বাজারে ৮০ টাকা দরের নিচে সবজি পাওয়া যায়নি বললেই চলে।
তবে শীতের আগাম সবজি নিয়ে আসছে ‘স্বস্তির হাওয়া’।
আগাম আলু বাজারে চলে আসা, ভারত থেকে আমদানি বাড়া- এই দুই সমীকরণ কমিয়ে দিয়েছে পুরনো আলুর দাম।
নতুন আলু কোথাও প্রতিকেজি ১২০ টাকা কোথাও ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুরনো আলু নেমে এসেছে ৪০ টাকার ঘরে। কদিন আগেও ৬০ টাকায়, কোথাও ৭০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে আলু।
ডিমের মতো আলুর বাজার ঠান্ডা করতেও ভূমিকায় ছিল আমদানি। বাজার অস্থিতিশীল হতে থাকলে সরকার
খুচরাতে কাঁচা মরিচের কেজি নেমেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। লাল শাক, ডাটাশাক, পালংশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে চলে এসেছে।
বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়শসহ সব ধরনের সবজির দামই প্রতিকেজি ৫০ টাকার নিচে নেমেছে। নতুন শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
মুড়িকাটা পেঁয়াজও চলে এসেছে বাজারে, যা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। এই পেঁয়াজে থামিয়েছে পুরনো পেঁয়াজের ঊর্ধ্বগতিও।