“খোলা সয়াবিনও দেখছি দাম বাড়ার পরও বিক্রেতারা বাড়তি দামে বিক্রি করছে; বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত,” বলেন এক ক্রেতা।
Published : 13 Dec 2024, 10:30 PM
চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে, আলুর ক্ষেত্রে করা হয়েছে অর্ধেক। তবু চালের দাম বেড়েছে, আলুর দামও কমছে না। বাজারে নতুন আলু আসার পর দাম কমে এখন পুরনো আলুর সমান হয়ে গেছে।
হঠাৎ বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে চারদিন আগে প্রতি লিটারে আট টাকা দাম বাড়লেও এখনো অনেক দোকানে বোতলজাত তেলের দেখা মিলছে না।
শুধু বাজারে পর্যাপ্ত শীতকালীন সবজি থাকায় দামে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা।
শুক্রবার ঢাকার কারওয়ানবাজারের দোকানে বোতলজাত সয়াবিন পেলেও মহাখালী আর নিকেতন কাঁচাবাজারের অনেক দোকান ঘুরেও পাওয়া যায়নি। খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও তা বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সোমবার সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ও খোলা পাম তেলের সর্বোচ্চ ১৫৭ টাকা এবং পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ৮৫২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু দাম বাড়ানোর চার দিন পরও বাজারে এই তেলের ‘সরবরাহ ঘাটতির’ কথা বলছেন খুচরা বিক্রেতারা। রোজা সামনে রেখে ডিলার ও পাইকারদের বিরুদ্ধে মজুদের অভিযোগ করছেন তাদের কেউ কেউ।
শুক্রবার মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘সিলেট স্টোরের’ বিক্রেতা মো. আব্দুল জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সয়াবিন তেল কয়েকদিন আগে বাজার থেকে হারিয়ে গেছে। এখনও ফেরেনি। রোজা সামনে রেখে ডিলার এবং পাইকাররা মজুদ করে রেখেছে। তাই দাম বাড়ানোর পরও বাজারে তেল নেই।”
এদিন নিকেতন কাঁচাবাজারের দোকানি আবদুর রহমান ‘১ নম্বর’ খোলা সয়াবিন বিক্রি করছিলেন ১৯০ টাকা করে।
দাম বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সয়াবিন তেলের কয়েকটি গ্রেডিং আছে। পাম তেল আমরা বিক্রি করছি ১৬০ টাকা করেই, আর ১ নম্বর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা করে।
“বোতলজাত খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের তেল আমরা পাচ্ছি না পাইকারদের থেকে। এজন্য নতুন কিছু কোম্পানির তেল রেখেছি। সেগুলো বিক্রি হয় সরকার নির্ধারিত দামেই।”
কারওয়ান বাজারে অবশ্য খোলা সয়াবিন ১৬০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হতে গেছে, তাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে তিন টাকা বেশি।
এ বাজারের ‘মেসার্স কুমিল্লা জেনারেল স্টোরের’ বিক্রেতা মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন দামের বোতলজাত তেল কিছু কিছু বাজারে এসেছে। কিন্তু এখনও সংকট রয়ে গেছে। এখন খোলা সয়াবিন তেল আমাদের বেশি দরে কেনা পড়ে। তাই কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়ল ৮ টাকা
'লেবেল পাল্টাতে দেরি', বাজারে পুরোপুরি ঢোকেনি সয়াবিন তেল
দাম বাড়ানোর পরও সয়াবিন তেলের দাম আরও বেশি রাখায় বিরক্ত ক্রেতা ফয়সাল রহমান। শুক্রবার কারওয়ানবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফয়সাল বলেন, “আমি থাকি মনিপুরীপাড়ায়। স্থানীয় দোকানগুলোতে বোতলজাত তেল নেই দেখে কিছু দিন ধরেই খোলা সয়াবিন তেলে রান্না করছি।
“এখন খোলা সয়াবিনও দেখছি দাম বাড়ার পরও বিক্রেতারা বাড়তি দামে বিক্রি করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।”
নতুন-পুরনো আলু ‘সমানে-সমান’
বাজারে কয়েক সপ্তাহ আগে নতুন আলু ১২০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৯০/৯৫ টাকা দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার সেই দাম কমে ৭০/৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর পুরনো আলুও আগের ৭০/৭৫ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে।
গণআন্দোলনে সরকার পতনের আগেই আলুর দাম দ্বিগুণ হয়ে প্রতি কেজি ৫০/৫৫ টাকা উঠেছিল। সরকার পতনের পর সেই দাম উঠে যায় ৭০ টাকায়, যা এখনও কমেনি।
আলুর দাম কমাতে সরকার গত ৫ সেপ্টেম্বর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব নেই।
মহাখালী কাঁচাবাজারে আসা গৃহিণী শেফালী বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দিন ধরেই আলুর দাম বাড়তি। অন্যান্য বছর এই সময়ে আলুর কেজি থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর এ বছর এখনও আলুর দাম ৭৫ টাকা। বাজারে নতুন আলুও আছে প্রচুর। তবুও দাম কমে না।”
এই বাজারের সবজি বিক্রেতা শুক্কুর মিয়া বলেন, “আলুর দাম কৃষক পর্যায়েই একটু চড়া। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই আরও কমবে।”
বাড়তি চালের দাম
অন্তর্বর্তী সরকার চালের দাম কমাতে গত ৩১ অক্টোবর চাল আমদানির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ভারতের চালের দাম বেশি। তাই আমদানি করা হচ্ছে না। সে কারণে বাজারগুলোতে বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরু চালের দাম কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এ বাজারের রতন রাইস স্টোরের রতন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার শুল্ক কমালেও ভারতের চাল এখন দেশে আসছে না। আবার দেশি মোটা চালের বাজারে চাহিদা কম। এ জন্য কম বিক্রি হয়। চিকন চালের চাহিদা বেশি হওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।”
খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল কেজিতে দুই-তিন টাকা বেড়ে ৭২-৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল কেজিতে তিন টাকা বেড়ে ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি নতুন আটাশ কেজিতে তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৭ টাকা। পুরাতন আটাশ কেজিতে দুেই টাকা বেড়ে ৬০-৬২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। তবে ৫০ কেজির বস্তা কিনলে দাম আরেকটু কম পড়ে।
কমেছে সবজির দাম
শীতকালীন সবজিতে বাজার পুরোদমে সয়লাব হওয়ায় দাম আগের চেয়ে কমেছে গত সপ্তাহের তুলনায়।
আকারভেদে প্রতি কেজি গোল বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, ডাঁটা শাক এক আঁটি ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা ও পটল ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পেঁপে আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ক্ষীরা ৫০ টাকা, পাকা টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফুলকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৬০ টাকা এবং লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৮০ টাকা।
বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা ও পালং শাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা আঁটি দরে।
বাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়তে থাকা কাঁচা মরিচের দামও কমেছে। খুচরা পর্যায়ে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১০০-১১০ টাকা।