ডুবতে বসা ইভ্যালিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের যে খবর এসেছিল, তা আদৌ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা।
Published : 27 Aug 2021, 03:00 PM
যমুনা গ্রুপের পরিচালক (কমার্শিয়াল) শামসুল হাসান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ইভ্যালির সাথে তাদের আলোচনা হয়েছে, আর্থিক বিবরণী বুঝতে এখনও অডিট চলছে। সেসব কাজ শেষ হওয়ার আগে হ্যাঁ বা না কিছু সময় এখনও আসেনি। আর ইভ্যালির আগের ব্যবসার দায় নিতেও তারা রাজি নন।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া দায়-দেনার হিসাবে দেখা যায়, দুই লাখ ১৪ হাজার গ্রাহক ইভ্যালির কাছে পণ্য কেনার জন্য বুকিং দিয়েছেন। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত বুকিং বাবদ গ্রাহকরা ইভ্যালির কাছে ৩১০ কোটি টাকা পাবেন।
গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ না করা কিংবা অর্থ ফেরত (রিফান্ড) না দেওয়া এবং পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধ না করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।
আলোচিত ওই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের চেয়ারাম্যানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে, তাদের দেশত্যাগে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জুলাইয়ের শেষে যমুনা গ্রুপের এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার খবর দেওয়া হয় ইভ্যালির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক বিনিয়োগ হবে ২০০ কোটি টাকা; ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে যমুনা গ্রুপ।
এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম এবং পরিচালক মনিকা ইসলামের দুটি বক্তব্যও সেখানে ছিল।
সে সময় ইভ্যালির ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোনো আপত্তি না করলেও যমুনা গ্রুপের পরিচালক শামসুল হাসান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনাদের সাথে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। তাদের কাগজপত্রগুলো অডিট করিয়ে দেখছি। পজেটিভ কিছু থাকলে সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা চাইনি এই পর্যায়ে গণমাধ্যমে কিছু আসুক। কারণ বলার মত কোনো অগ্রগতি আসলে হয়নি।”
অডিট কতটা এগিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই পর্যন্ত তাদের কী অবস্থা। আমরা যদি ওদের সাথে যাইও সেক্ষেত্রে আমরা কিন্তু তাদের প্রিভিয়াস লায়েবিলিটি নেব না। এ সমস্ত দায় দেনা আমরা নেব না। এগুলো আগে পরিষ্কার করতে হবে।”
প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সম্মত হওয়ার কথাও অস্বীকার করেন শামসুল হাসান।
“এখন পর্যন্ত ওখানে কোনো বিনিয়োগ যায়নি। নগদ কোনো টাকা পয়সা ইভ্যালিকে দেওয়া হয়নি। কীভাবে ২০০ কোটি টাকার প্রসঙ্গ এল বুঝলাম না। ওদের সঙ্গে আমাদের পণ্যভিত্তিক ব্যবসার লেনদেন রয়েছে।
“২০০ কোটি শব্দটি আমরা উচ্চারণ করিনি। যমুনা গ্রুপ থেকে এ জাতীয় কোনো শব্দ উচ্চারণ করা হয়নি। যখন সবকিছু ঠিক থাকবে, ইনভেস্টমেন্ট তখনই হবে।”
যমুনা গ্রুপের এই অবস্থানের বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের বক্তব্য জানতে তাকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ইভ্যালির একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে খবর পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে হিসাব জমা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, ইভ্যালি তাদের গ্রাহক ও দায়দেনার হিসাব বৃহস্পতিবার জমা দিয়েছে।
“ওরা (ইভ্যালি) জানিয়েছে, দুই লাখ ১৪ হাজার ক্রেতার কাছে তাদের দেনা আছে ৩১০ কোটি টাকা।”
ইভ্যালি প্রতি ১৫ দিন পর পর গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত একবারও সেই হিসাব দেয়নি বলে জানান হাফিজুর রহমান। ফলে গত দুই মাসে তারা আদৌ গ্রাহকের কোনো টাকা ফেরত দিয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
ই-অরেঞ্জে গ্রাহকদের বিক্ষোভ
এদিকে শুক্রবার সকালে গুলশানে আরেক ই কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জের বন্ধ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন গ্রাহকরা যারা অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য পাননি, অথবা টাকাও ফেরত পাননি।
সেখানে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করার পর পরে পুলিশের পরামর্শে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চলে যান।
এই বিক্ষোভে যোগ দিতে আশুগঞ্জ থেকে আসা জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি পণ্যের জন্য ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন। ই-অরেঞ্জের মালিক গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন আরও অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছেন।
তাসরীফ নামের আরেকজন ক্রেতা জানান, তিনি ৩৩ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন ২৬টি বাইক কেনার জন্য।
“ধার-দেনা, ব্যাংক লোন করে দেওয়া এসব টাকা ফেরত না পেলে এখন আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”