ইভ্যালি চলছে নগদে, পণ্যের অপেক্ষায় অনেকে

নানা অনিয়মের অভিযোগে তদন্তের মুখে ডিজিটাল লেনদেন বন্ধ হওয়ায় আলোচিত অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি এখন নগদ টাকায় পণ্য সরবরাহ করছে।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2020, 04:08 PM
Updated : 1 Sept 2020, 04:08 PM

এদিকে বিজ্ঞাপন দেখে কম দামে পণ্য পেতে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া ক্রেতারা আদৌ পণ্য পাবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছেন উদ্বেগে।

ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কারণে যেসব গ্রাহকের দেওয়া অগ্রিম টাকা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যায়নি, সেসব পণ্য তারা এখন সরবরাহ করতে পারছে না।

আপাতত নগদ টাকার বিনিময়ে পণ্য সরবরাহের (ক্যাশ অন ডেলিভারি) পাশাপাশি পুরনো অর্ডারগুলো ‘যথাসম্ভব’ সরবরাহ করার চেষ্টা করার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরুর পর অভিনব সব সুবিধার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করেই অনলাইন বাজারে শোরগোল তোলে ইভ্যালি। ২০০ শতাংশ ক্যাশব্যাকের মত সুবিধাসহ নানা মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক সংখ্যক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয় তারা।

প্রচলিত বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে ফ্রিজ, টিভি, মোটরসাইকেল, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল হ্যান্ডসেট, হোম অ্যাপ্লায়েন্সসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিছু গ্রাহকের হাতে তুলে দিয়ে নজর কাড়ে ইভ্যালি।

কিন্তু মাসের পর মাস গ্রাহকের টাকা আটকে রাখা, প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের পাশাপাশি অস্বাভাবিক কম দামে পণ্য দেওয়ার সুবিধা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় সম্প্রতি তদন্তের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের ব্যাংক হিসাব গত সপ্তাহে জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তার আগেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইভ্যালির পণ্য কেনায় কার্ডের লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও তাদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে।

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে প্রায় ৫০০ বিক্রেতাকে সঙ্গে নিয়ে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সেবা চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইভ্যালি।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, “যেহেতু‍ আমাদের ব্যাংক হিসাব এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে, সেহেতু গ্রাহক ও বিক্রেতাদের সুবিধার্থে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ শুরু করেছি।

“ক্যাশ অন ডেলিভারির সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিক্রেতারা সরাসরি তাদের পেমেন্ট পাচ্ছেন। অন্যদিকে গ্রাহকেরাও পণ্য বুঝে নিয়েই মূল্য পরিশোধ করেছেন। এর ফলে আমাদের নিয়ে একটা অভিযোগের যে বড় জায়গা, গ্রাহকদের পণ্য পেতে দেরি হয়; সে সমস্যার সমাধান হল।“

মঙ্গলবার পর্যন্ত ইভ্যালির সঙ্গে যুক্ত এক হাজার ৫০৩টি দোকান চালু আছে বলেও জানান তিনি।

তবে কম দামে পণ্য পাওয়ার জন্য অগ্রিম দিয়ে এখন বিপাকে পড়া অনেকেই ফেইসবুকে তাদের অভিযোগের কথা লিখছেন।

মাহফুজা রুহি নামে একজন অভিযোগ করেছেন, জুনের এক তারিখে তিনি দাম পরিশোধ করে একটি ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের অর্ডার করেও ইভ্যালি থেকে পণ্য পাননি।

ইভ্যালির অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় মাজহারুল ইসলাম রিঙ্কন নামের একজন লিখেছেন, “গত ৩ জুন একটি সুজুকি হায়াতি মোটরসাইকেলের অর্ডার করেছি। ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য দেওয়ার কথা, কিন্তু ৯০ দিনেও আসেনি।“

তানভীর আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, একটি পণ্যের টাকা পরিশোধ করে তিনি ৯০ দিনেরও বেশি সময় অপেক্ষা করেছন, কিন্তু পণ্যটি পাননি। সাত দিনের মধ্যে পণ্য না পেলে তিনি ‘মামলা’ করবেন।

যেসব অভিযোগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে রাসেল বলেন, “যেহেতু সরকারি সংস্থা এবং বিজনেস ট্রেড বডি অনুসন্ধান করছে, আমরা তাদেরকে পূর্ণ সহায়তা করে যাব। আমাদের বিশ্বাস, আমরা অনৈতিক এবং অবৈধ কিছু করিনি আর সে বিষয়টিই তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।”