তৈরি পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে গঠিত উত্তর আমেরিকার ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর জোট অ্যালায়েন্স যে কারখানাগুলোকে নিয়ে কাজ করছে তার এক তৃতীয়াংশের বেশি সংশোধনের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করেছে।
Published : 15 Nov 2017, 05:56 PM
এই জোটের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পর্কিত ৬৫৮টি কারখানার ৮৫ ভাগে মেরামতকাজ শেষ হয়েছে বলে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান সংস্থাটির আবাসিক পরিচালক (কান্ট্রি ডিরেক্টর) জেমস এফ মরিয়ার্টি।
বাংলাদেশ মেয়াদ শেষের ছয় মাস আগে ঢাকার একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সামনে চার বছরের কাজের সারমর্ম তুলে ধরেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, অ্যালায়েন্সভুক্ত ৬৫৮টি কারখানার মধ্যে ২৩৪টি কারখানায় নিরাপত্তার জন্য নেওয়া সংশোধনীকাজ পরিকল্পনামতো শেষ হয়েছে। বাকিগুলোতেও ২০১৮ সালের মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ হবে।
“২০১৩ সালে আমরা এমন একটি শিল্প পেয়েছিলাম, যা ছিল ‘ট্রাজেডিতে’ জরাজীর্ণ। নিরাপত্তার বিষয়টি কারখানার নিয়ম না হয়ে হয়েছিল ব্যতিক্রম কিছু। এখন কারখানাগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ।”
অ্যালায়েন্সের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সংস্কারকাজের অন্তর্ভুক্ত ৬৫৮টি কারখানার মধ্যে ২৩৪টি কারখানায় কর্মপরিবেশগত সংস্কারকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।
বাকিগুলোতে ‘ফায়ার ডোর’ স্থাপন ও কলাপসিপল গেইট সরিয়ে ফেলার মতো অগ্রাধিকারমূলক কাজের ৮০ শতাংশসহ কর্মপরিকল্পনার ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
অ্যালায়েন্স গঠনের পর থেকে মেসবাহ রবিন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ছিলেন; এর নির্বাহী পরিচালক ছিলেন ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল মেয়াদে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি। গত বছরের মে মাসে তিনি কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে মেসবাহের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন।
মেয়াদ শেষে চলে যাওয়ার আগে ভবিষ্যতে ওই কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জিম মরিয়ার্টি বলে জানান।
“অ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন কারখানার নিরাপত্তা নজরদারিতে রাখার লক্ষ্যে যাতে একটি নির্ভরযোগ্য ও স্বাধীন ঊদ্যোগ কীভাবে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আমরা আইএলও, বিজিএমইএ, সরকার ও অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
অ্যালায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে ১৪ লাখেরও বেশি শ্রমিককে প্রাথমিক অগ্নিনিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও ২৭ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তারক্ষীকে অগ্নি নিরাপত্তায় নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা তুলে ধরেন মরিয়ার্টি।
পরিচয় গোপন রেখে শ্রমিকদের জন্য ‘আমাদের কথা’ নামে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন, অ্যালায়েন্সের ভেতরে ও বাইরে মোট ৯৪১টি কারখানার ১৩ লাখের বেশি শ্রমিককে হেল্পলাইন ব্যবহারের প্রশিক্ষণ এবং ১৭১টি কারখানায় ‘গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সেইফটি কমিটি’ গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
“আমরা চাই, অত্যন্ত সফল এই হেল্পলাইন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলো চালু থাকবে। আর এসব দায়িত্ব নেওয়ার মতো বেশ কয়েকটি স্থানীয় অংশীদার রয়েছে।”
রানা প্লাজা ধসের পর অ্যালায়েন্সের মতো করেই ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ গঠিত হয়েছিল যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড হিসেবে পরিচিতি। কারখানা ভবনের নিরাপত্তা মানসম্মত করতে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে অ্যাকর্ড।
চুক্তি অনুযায়ী, দুটি সংস্থার একই সময়ের মধ্যে এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার কথা। সেভাবেই অ্যালায়েন্স প্রস্তুতি নিলেও অ্যাকর্ড বলছে, সংষ্কারকাজের দায়িত্ব হস্তান্তরে তাদের আরও ৬ মাস সময় প্রয়োজন।
পোশাক মালিকদের অভিযোগ, অ্যাকর্ড-অ্যালয়েন্সের তৎপরতায় বাংলাদেশের অনেক রপ্তানিমুখি পোশাক কারখানা অচল অথবা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই চুক্তি অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম শেষ করে বিদায় নেওয়া উচিত।