যাচ্ছে অ্যালায়েন্স, ৬ মাস সময় পেল অ্যাকর্ড

বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নয়নে গঠিত ‘অ্যালায়েন্স’ নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ ছাড়লেও দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে ছয় মাস সময় পেয়েছে ‘অ্যাকর্ড’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2017, 12:53 PM
Updated : 19 Oct 2017, 03:45 PM

সচিবালয়ের বৃহস্পতিবার আইএলও, ইন্ড্রাস্টিঅল ও ইউনিগ্লোবালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের দুইজন মন্ত্রী, বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইয়ের শীর্ষকর্তাদের বৈঠকে ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডকে এই সময় দেওয়া হয়।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

তার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড হিসেবে পরিচিতি পায়। তেমনি আমেরিকার ক্রেতাদের জোটের নাম হয়‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ইনিশিয়েটিভ’, যা অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত পায়।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সাথে চুক্তি হয়েছিল বাংলাদেশে অ্যাকোর্ড-অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম পরিচালিত হবে ২০১৮ সালের ৩১ মে পর্যন্ত।

“সরকার, বিজিএমইএ এবং আইএলও বসে আজকে সিদ্ধান্ত নিলাম, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

“কোনো কারণে হয়ত হ্যান্ডওভার করতে দেরি হতে পারে সেজন্য অ্যাকর্ডের ছয় মাসের একটা অন্তর্বর্তীকালীন সময় প্রয়োজন হতে পারে, এই সময়ে নাম হবে ‘ট্রানজিশনাল অ্যাকর্ড’।”

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ ছাড়ার কথা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, “তারা আর কনটিনিউ করবে না। তাদের যে কাজ ছিল তারা তা শেষ করেছে। অ্যাকর্ডের ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে, আগামী সাত মাসের মধ্যে তারা বাকি কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশা করছি।”

‘নিরাপত্তার নামে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স কর্তৃক পোশাক কারখানা বন্ধ করে লাখো শ্রমিক বেকার করার প্রতিবাদে’ জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (ফাইল ছবি)

আগামী বছরের মে-তে কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অ্যাকর্ড আরও তিন বছর এই পরিদর্শন চালিয়ে যেতে চাইছিল। তবে তার বিরোধিতা করছে বাংলাদেশের শিল্প মালিকরা, সরকারও তাতে সায় দিচ্ছে।

বাংলাদেশে পোশাক কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন ও সংস্কার কাজ তদারক করে জোট দুটি।

অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ ছাড়ার পরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের রেমিডিয়েশেন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) সেসব কাজের দায়িত্ব নেবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স কারখানা পরিদর্শন করেছে, এখন আমরা দক্ষতা অর্জন করেছি। আমরা আশা তারা খুব সম্মানের সাথে আমাদের দেশ থেকে ফিরে যাবে, আমরা সব দিক থেকে তাদের মনে রাখব।”

ইতোমধ্যে ৭০টি গ্রিন ফ্যাক্টরি কাজ শুরু করেছে জানিয়ে তোফায়েল বলেন, আরও ২৮০টি কার্যক্রম শুরু করবে এবং আমাদের কারখানাগুলো পাঁচ থেকে ২০/২৫ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিকায়ন করেছে।

“রানা প্লাজা ধসের পরে ৪ বছর ৫ মাস পার হয়েছে, আল্লার রহমতে কোনো জায়গায় কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি। আমাদের বিনিয়োগকারীরা যেমন সচেতন-যত্নবান, আন্তর্জাতিক ব্রান্ড ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনও সন্তুষ্ট।”

তোফায়েল বলেন, “কিছু কিছু ট্রেড ইউনিয়ন আছে যাদের নেতারা কোনো কারখানায় কাজ করে না, তারা সরকারকে না জানিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনে অভিযোগ আকারে তথ্য সরবরাহ করে। আমরা একমত হয়েছি, কোনো অভিযোগ পেলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই করে তারা পদক্ষেপ নেবে।”

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ছাড়াও আইএলও, ইন্ড্রাস্ট্রিঅল এর প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।