বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স যে কার্যক্রম চালাচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে তা সরকার করবে বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
Published : 17 Nov 2016, 04:48 PM
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক কমিটির প্রধান বার্নড ল্যান্ডের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বৈঠকের পর তিনি এই তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা কনফিডেন্ট যে, ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারব। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ছাড়া আমরাই এ কাজগুলো করতে পারব।
“আমরা মনে করি না ২০১৮ সালের পর আর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আমাদের এখানে থাকার প্রয়োজন আছে। আমরা পারব, পারার মতো আমাদের এক্সপার্ট আছে। তাদের এ কথা বলে দিয়েছি। ২০১৮ সাল থেকে সেই দায়িত্বটা লেবার মিনিস্ট্রির পক্ষ থেকে আমরা সেটা নেব।”
সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর ইউরোপীয় ক্রেতাদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘অ্যাকোর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘বাংলাদেশ সেফটি অ্যালায়েন্স’ গঠন করা হয়।
ইইরোপীয় চুক্তিটি সংক্ষেপে ‘অ্যাকোর্ড’ নামে পরিচিত। এ চুক্তিতে এ পর্যন্ত ৮৪টি প্রতিষ্ঠান স্বাক্ষর করেছে।
অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট ও গ্যাপসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধ হয়েছে। ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ইনিশিয়েটিভ’ সংক্ষেপে ‘অ্যালায়েন্স’ নামে পরিচিত।
এই দুই জোটের সঙ্গে করা সরকারের পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শেষ হবে।
অ্যাকোর্ড-অ্যালায়েন্স বাংলাদেশে কত দিন কাজ করবে, এমন প্রশ্নে চুন্নু বলেন, “আমরা তাদের বলেছি, আমরা নতুন পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েছি। ইন্সপেক্টরের ৫০০ পদের বিপরীতে ২৬৪ জন আছে। আরও ৮৯ জনকে নিয়োগ দিতে পিএসসি সুপারিশ করেছে, বাকীগুলোও দেবে।
“আমরা ইন্সপেক্টরদের ট্রেনিং দিচ্ছি এবং রেমিডিয়েশেন কো-অর্ডিনেশন (আরসিসি) সেল করেছি। সেখানে রাজউক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডব্লিউডির ইঞ্জিনিয়ার, ফায়ার সার্ভিস অর্থাৎ ফ্যাক্টরির নিরাপত্তায় কমপ্ল্যায়েন্সের জন্য যেসব ডিপার্টমেন্ট রয়েছে, এক্সপার্ট আছে, তাদের নিয়ে আমরা আরসিসি করেছি। তাদের আমরা ব্রিফ করছি। প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণ দেব।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে কিছু বলেছে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তারা জানতে চেয়েছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স যে কাজ করছে পরেও তাদের থাকার প্রয়োজন আছে কি না?
“আমরা বলেছি অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কাজটা আমাদের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা কনফিডেন্ট এ কাজটা আমরা করতে পারব। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের এক্সটেনশন প্রয়োজন পড়বে বলে আমি মনে করি না।”
এককভাবে অ্যাকোর্ড-অ্যালায়েন্স চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারবে না বলে জানান তিনি।
এ পর্যন্ত ৫৩২টি পোশাক কারখানা এবং সাড়ে সাত হাজার ফ্যাক্টরিতে ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন রয়েছে বলেও জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর শ্রম আইন হালনাগাদ করা এবং সব সেক্টর থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসন করার কথা প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।
শ্রম সচিব মিকাইল শিপার ছাড়ও শ্রম মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।