“১০-১৫ দিন পরে নতুন চাল আসবে। তখন সেটার জাত ও মূল্য লিখে দেওয়া সম্ভব। মিলাররা চাইলে এটা করতে পারবে,” বলছেন এক বিক্রেতা।
Published : 19 Apr 2024, 12:40 AM
বৈশাখের প্রথম দিন থেকে চালের বস্তায় জাত ও মূল্য লেখার নির্দেশনা থাকলেও বাজারে এখনও সেই বস্তা মিলছে না।
রাজধানীর বাজারগুলোতে যেসব চাল বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর কোনো বস্তাতেই জাত ও মূল্য বসেনি। এখনো ‘আগের চালই’ বিক্রি কথা বলছেন বিক্রেতারা।
আর খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন নির্দেশনা সম্বলিত চাল ঢাকার বাজারে আসতে লেগে যেতে পারে মাসখানেক।
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার, বাবু বাজার ও কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোম্পানির চালেই জাত ও মূল্য লেখা নেই। বোরো মৌসুমের নতুন চাল বাজারে এলে সেগুলোর বস্তার গায়ে সরকারের নির্দেশনা মানার কথা বলছেন চালকল মালিকরা।
কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি দোকান ঢাকা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মো. সায়েম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনো বস্তার গায়ে এসব লেখা হয় নাই। কোম্পানি যেভাবে আমাদের দেয় আমরা সেভাবেই তো বিক্রি করি। আমাদের যদি কোম্পানিরা লিখে দেয়, আমরা সেভাবেই বিক্রি করব।
“১০ থেকে ১৫ দিন পরে বৈশাখের নতুন চাল আসবে। তখন সেটার জাত ও মূল্য লিখে দেওয়া সম্ভব। সরকারের কথা অনুযায়ী মিলাররা চাইলে এটা করতে পারবে। এক কোম্পানি ২৮ জাতের বস্তায় মিনিকেট লিখে রাখে। আর তীর কোম্পানি খুব ছোট করে অস্পষ্টভাবে জাত ও মূল্য লেখে। এছাড়া কেউ লেখে না।”
বাবুবাজারের চালের পাইকারি দোকান অন্তু-সেন্টু রাইসের বিক্রেতা মো. জলিল বলছেন, “মার্কেটে ঈদের পরে কোনো মাল আসে নাই। সরকার যেভাবে বলছে, মাল সেভাবেই আসবে, কিন্তু এখনো এগুলো আসে নাই। এখন যেগুলো আছে এগুলো আগের মাল। এগুলোতে নাম বা দাম লেখা নাই।”
চালের বস্তার গায়ে ধানের জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম লেখা বাধ্যতামূলক করে মাস দুয়েক আগে যে পরিপত্র জারি করা হয়, তা কার্যকর হয়েছে পহেলা বৈশাখ থেকে।
১৩ এপ্রিল খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় সেই পরিপত্রের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের বার্তায় বলা হয়, চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিল গেইটের মূল্য লিখতে হবে। সেই সঙ্গে লিখতে হবে উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম। উল্লেখ করতে হবে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের অবস্থানও (জেলা ও উপজেলা)। ওজনের তথ্যও থাকতে হবে।
সরকারের নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, “মন্ত্রণালয়ের মাথায় কেন হুট করে এটা ঢুকল বুঝলাম না। এখন তো সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা হল।
“এখন দাম যদি বেশি লেখে, তাহলে আমাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। তাই মন্ত্রণালয়ের নজর রাখতে হবে যে দাম লিখবে, সে যেন অতিরিক্ত না লেখে।”
বোরো মৌসুমের নতুন ধানের চালের বস্তায় দাম ও জাত লিখে দেওয়ার কথা বলছেন রশিদ মিনিকেট চালের মার্কেটিং ম্যানেজার নাশির হায়দার।
পুরনো বস্তাগুলো আগের মত করেই শেষ করার কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন বোরো মৌসুমের ধান কাটা হচ্ছে। এ জাতের বস্তায় আমরা দাম ও জাত লিখে দেব। আমাদের নতুন বস্তাগুলোয় এসব লেখা চলমান রয়েছে। আর এখন যে চাল বাজারে চলছে তাতে তো লেখা সম্ভব না। এগুলো এভাবেই শেষ করতে হবে।”
সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন মিলাররা। বিষয়টি নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তারা। তবে ওই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বস্তার গায়ে জাত ও দাম উল্লেখ করার নির্দেশনার বিষয়ে মিল মালিকেরা সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও সেটি গ্রহণ করা হয়নি। এখন নতুন যে চাল বাজারে আসবে সেগুলোতে তারা বিধি মেনেই কাজ করছে। মিলগেইটে এভাবেই হচ্ছে।
“তবে ঢাকায় আসতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে। আর ঢাকার বাজারগুলোতে যেগুলো বর্তমানে আছে, সেগুলো আগের মতই যাবে।”
চালের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সরকারের এই নির্দেশনাকে স্বাগত জানাচ্ছেন ভোক্তাদের অনেকে। এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমবে বলেই তাদের প্রত্যাশা।
কারওয়ান বাজারে নাজমুল কবির নামে এক ভোক্তা বলেন, “সরকারের এই উদ্যোগ ভালো। একই চাল বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন দামে এতদিন বিক্রি করেছে ব্যবসায়ীরা। চালের জাত কী তা বলতে পারে নাই। এতে কী খাচ্ছি তাই জানতাম না। এবার জানার পাশাপাশি ঠকে যাওয়ার প্রবণতাও কিছুটা কমবে মনে করি।”
কারওয়ান বাজারের চালের ব্যবসায়ী মেসার্স সিরাজ অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. মহসিন আহমেদ বলেন, “আমাদের যেভাবে দেওয়া হয়, আমরা সেভাবেই তো বিক্রি করি। আমরা তো বস্তা বানাই না, প্যাকেজিংও করি না। যদি একই চাল ভিন্ন নামে প্যাকেজিং করা হয় এ দায় কোম্পানির।
“দোকানের কোনো বস্তাতেই নাম-দাম লেখা হয়নি। এই আইন এখনো কোনো মিলাররা মানছে না। হয়ত সামনে মানবে। মিলাররা বাজারে যেগুলো চাল চলছে সেগুলোতে চাইলে নিজেদের লোক দিয়ে লেখাতে পারে।”
চালের বস্তার গায়ে জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম লেখার নির্দেশনা না মানলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩-এর ধারা ৬ ও ধারা ৭ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আইনটির ধারা-৬-এর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ রয়েছে।
আর ধারা ৭-এর শাস্তি হিসেবে রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান।
আরো পড়ুন-