“ড্যাপ সংশোধন বিধিমালা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে।”
Published : 23 Dec 2024, 06:52 PM
বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের আগেই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট (ব্যবহার সনদ) নিতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান সরকার।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে রিহ্যাব মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নতুন বিধিমালায় বলা আছে, ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার অনেক আগেই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হবে।
“আমাদের কর্মকর্তারা এখন প্রতিটি স্তরে থাকবেন, দেখবেন ও সই করবেন।”
একটি ভবন সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কিনা কিংবা ভবনটি ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কিনা, মূলত সেটি নিশ্চিত করার জন্যই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এই আইনি নথি সাধারণত স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা পৌরসভা দিয়ে থাকে।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, “এত দিন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া হত। এর ফলে নানা ধরনের সমস্যা হত।
“বিধিমালা এমনভাবে করা হচ্ছে যে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট, যেটায় আগে অনেক সমস্যা ছিল এবং অনেক জটিল ছিল, এখন অনেক সহজ করে আনা হচ্ছে।”
আবাসন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “অনেকে বাড়ি নির্মাণে অনেক বছর সময় নেন। আবার ফ্ল্যাট নির্মাণ হলে হস্তান্তর করতে দেরি করেন; অতিরিক্ত অর্থ চান। এগুলো যেন না হয়, সেটা দেখতে হবে।”
ড্যাপের সংশোধিত বিধিমালার কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ড্যাপের যে বিধিমালার বিষয়, সেটা আশা করি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে ফেলব।”
ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, “রাজউকে যোগদানের পর রিহ্যাব আমার সঙ্গে প্রথম দেখা করে। রিহ্যাবের দাবি ছিল, ড্যাপ ও বিধিমালা সংশোধন করা। আমাদের মন্ত্রণালয় ও সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে৷
“রাজউকের পক্ষ থেকে যে জটিলতা ছিল, তা সহজ করা হচ্ছ। এজন্য রাজউকের লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে দেরি হলে তারা দায়ী থাকবেন।”
তিনি বলেন, “এখন থেকে ভবনে এয়ার কন্ডিশন লাগানো হবে কিনা, সেটাও বলা থাকবে। এর সঙ্গে সুয়ারেজ পদ্ধতি কেমন হবে তা বলা হবে। ২০২৫ সাল থেকে ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ানো হবে।”
অনুষ্ঠানে রিহ্যাব সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “সম্প্রতি আবাসন শিল্প সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বৃদ্ধি, এসব কারণে সংকটে আছে।
“বিগত স্বৈরাচারী সরকারের স্বার্থান্বেষী মহল করোনাকালে তড়িঘড়ি করে নামমাত্র শুনানিতে গিয়ে মানুষের মতামত আমলে না নিয়ে বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ ড্যাপ প্রণয়ন করে। এর ফলে ঢাকা শহরের উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছে।”
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে রিহ্যাব এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি কবে সুরাহা হবে।”
অন্যদের মধ্যে সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ এবং মেলা কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক ও প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ্ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মেলা চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে পাঁচ দিনের এই মেলা আয়োজন করেছে আবাসন নির্মাণ কোম্পানিগুলোর সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
আয়োজকরা বলেছেন, এবার মেলায় ২২০টি স্টল থাকছে। এ বছর সাতটি গোল্ড স্পন্সর, ১৮টি কো-স্পন্সর, ১৮টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১০টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় প্রবেশে ‘সিঙ্গেল এন্ট্রি’ টিকিটের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। ‘মাল্টিপল এন্ট্রি’ টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা।
‘মাল্টিপল এন্ট্রি’র মাধ্যমে একজন সর্বোচ্চ পাঁচবার মেলার প্রবেশ করতে পারবেন। টিকিটের সম্পূর্ণ অর্থ ‘করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি’ (সিএসআর) হিসেবে দুস্থদের জন্য ব্যয় হবে। টিকেটের র্যাফেল ড্রতে থাকছে পুরস্কার।
২০০১ সাল থেকে ঢাকায় এই মেলা শুরু হয়। এটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত রিহ্যাবের ২৬তম ফেয়ার। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৫টি মেলা করেছে রিহ্যাব।
২০০৪ সাল থেকে বিদেশেও মেলা আয়োজন করছে রিহ্যাব। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি, যুক্তরাজ্য, দুবাই, ইতালি, কানাডা, সিডনি ও কাতারে একবার করে মেলা হয়। দুবাইয়ে হয়েছে দুবার।