দেশে পর্যাপ্ত মজুদ আছে। প্রয়োজনে তুরস্ক, মিশর ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হবে, বলেছেন কৃষিমন্ত্রী।
Published : 20 Aug 2023, 10:07 PM
আগে থেকেই তেঁতে থাকা পেঁয়াজের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা বয়ে এনেছে এই নিত্যপণ্য রপ্তানিতে ভারতের শুল্কারোপের খবর।
ঢাকায় আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা জানালেও খুচরায় একেক দোকানে ইচ্ছেমত দাম বাড়ানো হচ্ছে; ক্রেতাদেরও কেনার সময় দাম বেড়ে যাওয়ার বিয়ষটি বিবেচনায় নিতে দেখা যাচ্ছে।
রোববার ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশি ও ভারত থেকে আমদানি উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে শনিবার ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরের এক দিনের মধ্যে খুচরায় দর বেড়ে যাওয়া অস্থিরতা বাড়িয়েছে বাজারে। বাজার কোন দিকে যাবে তা নিয়েও কথা বলছেন তারা।
এদিকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আশা করছেন ভারতের শুল্কারোপের তেমন প্রভাব পেঁয়াজের দামে পড়বে না।
মাঠ পর্যায় থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশের কৃষকদের কাছে এখনও তুলনামূলকভাবে ভালো মজুদ আছে বলে জানান তিনি।
এ কারণে ভারতের শুল্ক আরোপ দেশে পেঁয়াজের দামে তেমন প্রভাব ফেলবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এখন দাম কিছুটা বাড়লেও কয়েকদিন পর কমে আসবে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে তুরস্ক, মিশর ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হবে।
এদিন বিকালে ঢাকার ফার্মগেইটে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের (সিডিবি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশে এসেছে তিন লাখ টন। এর অর্থ হল দেশেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই দিন আগেও কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের দোকানগুলোতে এক পাল্লা (৫ কেজি) ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ২৭০ টাকায়। রোববার এসব দোকানে প্রতি পাল্লা ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিকেজি আমদানি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ১২ টাকা করে। এরমধ্যে গত এক দিনে বেড়েছে ৮ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রেতা হানিফ মিয়া বলেন, আমদানিকারকরাই দাম বাড়াচ্ছেন। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেবে এমন খবরে বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকার শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়তদার সমিতির সভাপতি হাজি মো. সাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভারতে পেঁয়াজের ওপর শুল্কারোপের খবরের প্রভাব শ্যাম বাজারেও পড়বে। এ নিয়ে ব্যবসায়ী, আমদানিকরকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তবে গত দুই দিনে আমদানি ও দেশি পেঁয়াজের দাম আড়তে বাড়েনি।
কারওয়ান বাজার থেকে প্রতি পাল্লা ৪০০ টাকা দরে এক মণ দেশি পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন মুদি দোকানি শরীফুল ইসলাম।
সেসময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মনে করেছিলাম দাম বাড়ার আগেই এক চালান পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাব। এখন কিনতে এসে দেখি দাম ঠিকই বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি ৮০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে কত টাকায় বিক্রি করব বলেন?”
অনলাইন মার্কেটপ্লেস চালডালে রোববার বিকালেও প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা দাম দেখানো হচ্ছিল।
কারওয়ান বাজারের দেশি পেঁয়াজের আড়ৎদার লুৎফুর রহমান বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার সাথে সাথে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে যাচ্ছে। যেসব পাইকার জেলা থেকে পেঁয়াজ এনে ঢাকায় বিক্রি করছেন তারাই দাম বাড়াচ্ছেন।
“গত এক দিনে কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে। এখন প্রতি পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, যা একদিন আগেও ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল,” বলেন লুৎফর।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, পেঁয়াজ রপ্তানির জন্য বিখ্যাত মহারাষ্ট্রসহ অন্যান্য রাজ্যের বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২৫ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন করে ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক যুক্ত করলে দাম আরও ১০ রুপি করে বেড়ে যাবে। বিনিময় হারের কারণে এর সঙ্গে ১৩ টাকার একটা বাড়তি দায় যোগ হওয়ার কথা জানাচ্ছেন আমদানিকারকরা।
শ্যামবাজারে পেঁয়াজের আড়ৎদার সমিতির সভাপতি হাজি মো. সাহিদ বলেন, ভারতে পেঁয়াজের ওপর রপ্তানি শুল্ক আরোপের পর এখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামও বেড়ে যাওয়ার ভাব আছে। তবে এখনও পরিস্থিতি স্থিতিশীল। গত দুই দিনে দাম বাড়েনি। ভারতীয় পেঁয়াজ এখন প্রতিকেজি ৪২ টাকা থেকে ৪৪ টাকার মধ্যে আছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭০ টাকার মধ্যে আছে।
“এখন আমদানিকারকরা শুল্কায়নের সুযোগ নেবেই। তবে নতুন শুল্কের প্রভাব পড়তে হয়ত আরও কয়েকদিন লাগবে। ভারত পেঁয়াজের ওপর রপ্তানিশুল্ক আরোপ করেছে মাত্র। তারা তো এখনও বন্ধ করে দেয়নি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজারে অতটা অস্থিরতা হবে না,” বলেন এই পাইকারি বিক্রেতা।