অগভীর সমুদ্রের নয়টি ব্লকে এবং গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র ডেকেছে সরকার।
Published : 04 Jul 2024, 10:13 PM
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পেট্রোবাংলার দরপত্রের সূচি আগ্রহী ঠিকাদারদের অনুরোধে কিছুটা পিছিয়ে দিচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সবশেষ ২০২৩ সালের নতুন মডেল পিএসসির আলোকে গত মার্চে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বন করেছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা।
দরপত্রে অগভীর সমুদ্রের নয়টি ব্লকে এবং গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আগ্রহীদের আহ্বান জানানো হয়েছিল। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার মধ্যে নির্ধারিত ঠিকানায় দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল।
সমুদ্রের বাংলাদেশ অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং ১১টি অগভীর সমুদ্রে। বর্তমানে দুটি ব্লকে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি। দরপত্র ডাকা হয়েছে বাকি ২৪টি ব্লকের জন্য।
দরপত্র আহ্বানের আগে কনসালটেন্ট কোম্পানি উড ম্যাকেনজিকে দিয়ে সমুদ্রে মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে বা জরিপ চালানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সার্ভে জরিপ সংগ্রহ করেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অফশোরে ছয়টি কোম্পানি ডেটা কিনেছে। ১৭টি কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের লাস্ট ডেট। তবে আমরা কিছু এক্সটেনশন করব। কারণ অনেকে সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে। আমরা সময় কিছুটা বাড়াব, কারণ, তারা ডাটা নিয়ে কাজ করছে।”
দরপত্র জমা দিতে সময় তিনমাস বাড়ানো হবে বলে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কতদিন সময় বাড়ানো হবে সেটা আমরা আলোচনা করে ঠিক করব। আমাদের হাতে এখনও সময় আছে।”
স্থলভাগে গভীর খনন
দেশে এখন দৈনিক তিন হাজার ৫০০ মিলিয়ন গ্যাসের চাহিদা থাকলেও আমদানি করা এলএনজিসহ দৈনিক সর্বোচ্চ ৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের যোগান দিতে পারে সরকার। এরমধ্যে এক হাজার তেকে ১১০০ মিলিয়ন গ্যাসই আসে আমদানি করা এলএনজি থেকে।
বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি বিকল হয়ে পড়ায় সারা দেশে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে ইতোমধ্যে শিল্প কারখানা বিকল হতে শুরু করেছে। তবে বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসায় আপাতত লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি নেই।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা ছয় হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হবে। আমরা ২০২৭ সালের পর গ্যাস নিয়ে আরও কোনো সংকট দেখতে চাই না। সেজন্য এই দুই বছরের মধ্যে মহেশখালীতে আরও দুটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে।
“বর্তমান ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সমান্তরালে স্থলভিত্তিক গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের জন্য চীনের কাছে অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এখানে প্রায় এক বিলিয়নের মতো খরচ প্রয়োজন হবে।”
এছাড়া স্থলভাবে গভীর কূপ খননের কাজে হাত দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “স্থলভাগে অংশিদারত্বের ভিত্তিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে খনন করতে পারি কিনা চিন্তা ভাবনা করছি। এখন আমরা ডিপ ড্রিলিংয়ে যাচ্ছি। প্রায় চার হাজার মিটার নিচে চলে যাব। গভীর কূপে সম্ভাবনা দেখা গেছে। প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার নিচে গেলে এখন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।”
পাঁচটি কূপ খননের জন্য পরামর্শক নিয়োগের কথা জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, “আগামীতে সেই জায়গায় যেতে প্রচুর অর্থ লাগবে। সেই অর্থ আমরা বিভিন্নভাবে পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা সরকারের কাছে অর্থ চেয়েছি।”
গ্যাস ড্রিলিংয়ে আড়াই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, “গ্যাস পাওয়া গেলে এই বিনিয়োগ ২০ গুণ হারে রিকভার করবে। একটা গ্যাস কূপে ২০ মিলিয়ন খরচ করলে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ফেরত পাওয়া যায়। এখানে সরকারের কাছে আবেদন করেছি বিনিয়োগের জন্য।”
বর্তমানে গ্যাসের যেসব নতুন ও পুরাতন কূপ রয়েছে, সেগুলো ২২০০ থেকে ৩২০০ মিটার গভীরে খনন করা হয়েছে।