ইভ্যালির সঙ্গে আরও দুটি লোভনীয় প্রজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল।
Published : 11 Jul 2024, 10:00 PM
আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি গ্রাহকদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পাওনার মধ্যে গত ছয় মাসে মাত্র আড়াই কোটি টাকা পরিশোধ করে এখন এর প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলছেন, আরও দেড় বছর সময় চায় তার, তাহলে পুরো পাওনা মিটিয়ে দিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে এসে গ্রাহকদের প্রতি ‘আকুতি’ জানিয়ে রাসেল বলেন, “আপনারা আইনের আশ্রয় নিলে আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে পারি না। তাই বিশ্বাস যেহেতু রেখেছিলেন, বিশ্বাস রাখুন; আর একটু সময় দেন।”
ইভ্যালির তথ্য অনুযায়ী, তাদের প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ গ্রাহকের ৩ লাখ অর্ডার আটকে রয়েছে অর্থাৎ অর্ডার করে পণ্য বুঝে পাননি এসব গ্রাহক; যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেনে রাসেলই তথ্য দিচ্ছেন যে, এই টাকার মধ্যে ইভ্যালি ফেরত দিয়েছে মাত্র আড়াই কোটি টাকা, সময় লেগেছে ছয় মাস।
গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা হতাশ এই ভেবে যে, এই বিপুল পরিমাণ পাওনা টাকার মধ্যে মাত্র আড়াই কোটি টাকা ফেরত দিতেই লেগেছে ৬ মাস। ফলে পুরো টাকা ফিরিয়ে দিতে কত বছর লাগবে, তার ঠিক নাই।
তবে খুব বেশি সময় লাগবে না দাবি করে রাসেল বলছেন, “টাকা ফেরত দেওয়ার যে প্রক্রিয়া, তাতে ভোক্তা অধিদপ্তরেরটা ছাড়া কোনোটাই শৃঙ্খলা মেনে দিতে পারিনি, এটা সত্য। তবে আমরা একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আসার চেষ্টা করছি।”
গ্রাহকদের নতুন আশা দেখাচ্ছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল, বলছেন, “আমরা কিন্তু কাজ করছি। আমরা যে পালিয়ে নেই সেটা, বোঝানোও আজকের প্রেস কনফারেন্সের আরেকটা উদ্দেশ্যে। আমি দুই বছরের ভেতরে সকল দেনা পরিশোধ করে দিব বলেছি। এটা আমি এমনি এমনি বলি নাই। এটা বলছি আমার আত্মাবিশ্বাস থেকে। ছয় মাস হয়েছে। আরও দেড় বছর সময় আমাদের দেন।”
কোনো একটি পক্ষ ইভ্যালির বর্তমান অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে অভিযোগ রাসেল বলেন, “আমরা তিন মাস ধরে সশরীরে অফিস করতে পারছি না। একটা গ্রুপ আছে, যারা আমাদের বর্তমান এই অবস্থার জন্য সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের হয়রানি করার চেষ্টা করছে। মানুষকে লেলিয়ে দিচ্ছে। আমাদেরকে টাকা পরিশোধ করতে অসহযোগিতা করছে। তারা আমাদেরকে যদি ধ্বংস করে দিতে চায়, তখন আপনারা আমাদের পাশে থাইকেন।”
তবে কারা ইভ্যালি ধ্বংস করতে নেমেছে, জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান রাসেল।
নতুন নতুন তারিখ দিয়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিচ্ছেন ইভ্যালির সিইও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এবার বলেছেন, “আগামী দুই মাসের মধ্যে মিডিয়া (মধ্যস্থকারী) বিল দিয়ে দেব, আর সাধারণ গ্রাহকদের বিল দুই মাস পর থেকে দেওয়া শুরু করব।”
ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনার দাবি তুলে তিনি বলেন, “এখন আমাদের অ্যাপে প্রতিটা অর্ডার দেখা যায়। আমাদের বিজনেস এখন একেবারেই স্বচ্ছ। কারও কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। এখন যে ধারাবাহিকতায় বিজনেস করতেছি, সেই ধারাবাহিকতায় যদি বিজনেস করতে পারি, তাহলে সবার টাকাই আমরা ফেরত দিতে পারব। তবে একটু সময় আমাদের দিতে হবে।”
চেক না থাকায় যেসব গ্রাহক চিন্তায় আছেন, চেক ছাড়া টাকা পাবেন কিনা; তাদের চিন্তামুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, যারা পেমেন্ট করেছে, সবার লিস্ট আছে। তাই সবাই টাকা পাবে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে।
নতুন দুই প্রজেক্ট নামাচ্ছেন রাসেল
ইভ্যালির সঙ্গে আরও দুটি লোভনীয় প্রজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল। একটি প্রজেক্টের নাম ‘বিসেলার’, যা বিভিন্ন দেশে যুক্ত হয়ে কাজ করবে। তরুণরা সেখানে খণ্ডকালীন কাজ করতে পারবেন। এটা মূলত পণ্য বিক্রির একটা সাইট হবে।
আরেকটা প্রজেক্টের নাম ‘সবলোন’, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পণ্য সরবরাহ করা হবে। এখানেও রয়েছে মোহাম্মদ রাসেলের লোভনীয় প্রস্তাব। বলেছেন, “ডিরেক্ট ডলার আয় করব আমরা। এই প্রজেক্ট যদি আমাদের শুরু হয়, তাহলে খুব ভালো চলবে বলে আমার বিশ্বস। প্রায় ১০টি দেশে আপাতত শুরু করব।”
ইভ্যালির পূর্বাপর
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরুর পর গাড়ি, মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মত পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাড়া ফেলে অনলাইন মার্কেট প্লেস ইভ্যালি।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির চটকদার অফারের ‘প্রলোভনে’ অনেকেই বিপুল অঙ্কের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও তাদের অনেকে পণ্য বুঝে পাননি; ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া টাকাও ফেরত দেয়নি।
এক পর্যায়ে ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়ে ইভ্যালি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইভ্যালিসহ আরও বেশ কিছু ইকমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভে নামে গ্রাহকরা।
সেই থেকে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়।
মামলার বোঝা নিয়ে জেল খেটেছেন রাসেল ও ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল শামীমা এবং ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাসেল জামিনে কারামুক্ত হন। তারা আবার ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু করেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ১৯ মে ঢাকার কারওয়ান বাজারে তাদের কার্যালয়ে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ পরিশোধ বিষয়ে পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। সেই সভাতেও যোগ দিয়েছিলেন ইভ্যালির রাসেল।
সেই সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাসেল বলেছিলেন, ইভ্যালিতে আবার গ্রাহকরা কেনাকাটা শুরু করেছেন। নতুন ব্যবসার মুনাফা থেকে পাওনাদারদের ৫০ লাখ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন তিনি।