ইনডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সমর্থনের অভিপ্রায়’ প্রকাশের প্রেক্ষিতে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিল।
Published : 09 Apr 2025, 05:21 PM
ভারতের বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত।
ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) মঙ্গলবার এক সার্কুলারে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
ওই সার্কুলারে ২০২০ সালের ২৯ জুনের একটি সার্কুলার ‘অবিলম্বে’ বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বা কভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতের স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে দেশটির অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল পুরনো ওই সার্কুলারে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ট্রানজিটে থাকা বাংলাদেশি পণ্য বিদ্যমান প্রক্রিয়ার আওতায় ভারত ছাড়তে পারবে, তবে নতুনভাবে কোনো পণ্যের চালান ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাবে না।
ইনডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সমর্থনের অভিপ্রায়’ প্রকাশের প্রেক্ষিতে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিল।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক অন্য দেশে রপ্তানির বিষয়টিও বাধাগ্রস্ত হবে।
ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্টার্স কাউন্সিল এই সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল, কারণ বাংলাদেশ ও ভারত তৈরি পোশাক খাতে প্রতিযোগিতা করছে।
সেভেন সিস্টার্স বিতর্ক
আকস্মিকভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কোনো কারণ ভারত সরকার দেখায়নি। সিবিআইসির সার্কুলারেও কিছু বলা হয়নি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে দেওয়া এক মন্তব্য ভারতের উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
২৮ মার্চ বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “ভারতের সাত রাজ্য, ভারতের পূর্বাঞ্চলে, যেগুলোকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়ে থাকে… ভারতের ভূবেষ্টিত অঞ্চল। সমুদ্রে যাওয়ার কোনো উপায় তাদের নেই। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক আমরা।
“ফলে, এটা বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এটা চীনের অর্থনৈতিক বর্ধিতাংশ হতে পারে। বিভিন্ন জিনিস নির্মাণ, উৎপাদন করুন, বাজারজাত করুন; জিনিসপত্র চীন নিয়ে আসুন কিংবা সারাবিশ্বে পাঠিয়ে দিন।”
তার ওই বক্তব্য ঘিরে রীতিমত হৈ চৈ শুরু হয় ভারতে। বাংলাদেশ-চীনের আলোচনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোকে টেনে আনায় ইউনূসের সমালোচনামুখর হন ভারতের রাজনীতিক, সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ইউনূসের ওই বক্তব্যকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থান তুলে ধরার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের অবস্থা যখন নাজুক, তখন চীনকে ‘নতুন কৌশলগত অংশীদার; হিসেবে চিত্রিত করাও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরো জটিল করে তুলেছে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ভারত গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশকে ‘একতরফাভাবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার’ দিয়ে সহায়তা করে এসেছে। তবে বাংলাদেশের লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি চীনের সহায়তায় সচল করার উদ্যোগ ভারতের শিলিগুঁড়ি করিডোরের কাছাকাছি হওয়ায় ভারত এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।
লালমনিরহাটের বিমানঘাঁটিটি ভারতের শিলিগুঁড়ি করিডোর বা ‘চিকেনস নেক’-এর খুব কাছে, যা ভারতের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে সংযোগের একমাত্র পথ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে ‘কৌশলগত সহযোগিতা’ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে এমন প্রতিবেদনে নয়াদিল্লির উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।