Published : 02 Dec 2022, 08:08 PM
দফায় দফায় দাম চড়লেও চিনির পেছনে ছোটা এখনও কমেনি ক্রেতাদের; প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার কাঁচাবাজারের বেশির ভাগ দোকানে প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না। কিছু দোকানে থাকলেও স্থানভেদে প্রতিকেজিতে দামের হেরফের হচ্ছে পাঁচ টাকা।
শুক্রবার ঢাকার মিরপুর, মহাখালী এলাকায় অন্তত ১০টি দোকানে খোঁজ নিয়ে কোথাও প্যাকেটের চিনি পাওয়া যায়নি। মাত্র তিনটি দোকানে খোলা চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে একজন দোকানি প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম চেয়েছেন ১১৭ টাকা বাকি দুইজন ১২০ টাকা করে।
অপরদিকে কিছু সুপারশপে চিনি পাওয়া যাচ্ছে; তবে সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদার বদলে শুধু দুই প্যাকেট করে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে চিনির চাহিদার প্রায় পুরোটাই আসে বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো থেকে। নিজেরা ঘোষণা দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিলেও সরবরাহ না বাড়ানোর কারণেই খুচরায় চিনির সংকটের কথা বলছেন দোকানিরা।
মিরপুরে একটি মুদি দোকানে পাওয়া গেল সরকারি চিনিকলের আখের চিনি। তবে প্যাকেটের গায়ে প্রতিকেজির দাম লেখা আছে ১৪০ টাকা। সরকার নির্ধারিত খুচরা দামের চেয়ে তা ৪১ টাকা বেশি।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ১৪ টাকা বাড়িয়ে প্রতিকেজি সরকারি চিনিকলে উৎপাদিত চিনির খুচরা দর ৯৯ টাকা নির্ধারণ করে।
অপরদিকে সরকার সবশেষ খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৯৫ টাকা করে সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে কেজিতে ১৩ টাকা করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার আগে নতুন দরে বাজারে চিনি ছাড়েন মিল মালিকরা। এতে চিনির দাম আরও এক দফা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি।
প্রতিবেলাতেই দরকারি এই নিত্যপণ্য না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই দিন আগে পোস্ট দিয়েছেন, কোথাও চিনি না পেয়ে তিনি মিছরি গুঁড়ো করে চা তৈরি করেছেন। পরের দিন বাসা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি দোকানে চিনি কিনতে পারার খবরও দেন তিনি।
সরবরাহ সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, বাজারে চিনির যে সঙ্কট তার কারণ এক কথায় বর্ণনা করা যাবে না।
এর পেছনে বহু কারণ জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, একদিকে ডলার সংকটের কারণে চিনির কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে পর্যাপ্ত চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আবার উৎপাদিত চিনির দাম বেশি হলেও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন মূল্য তালিকা ঘোষণা করছে না।
“আমরা এ নিয়ে দুই মাস ধরে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে আসছি। কিন্তু একটি সমস্যারও সমাধান দেওয়া হয়নি।“
চিনির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন বাজারে আসা এক কেজি চিনিতে বিভিন্ন ধাপে ৩৩ টাকার শুল্ক জড়িয়ে আছে। আমরা এখানে সরকারকে ছাড় দিতে বলে আসছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হচ্ছে না। অনেকে হয়তো মনে করে থাকেন যে, কোম্পানিগুলো সংকট সৃষ্টি করছে। কিন্তু এতগুলো দৃশ্যমান সংকট থাকার পরে আবার নতুন করে সংকট সৃষ্টি করতে যাবে কে? আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করছি।“
এলসির ক্ষেত্রে ডলার সংকটের কথা তুলে ধরে মহাসচিব জানান, ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে চিনির কাঁচামালবাহী একটি জাহাজ দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু ডলারের অভাবে সেখানে থাকা ৫৫ হাজার টন চিনি এখনও খালাস করে শেষ করা যায়নি। জাহাজ বসে থাকার কারণে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। একটু একটু করে চিনি খালাস করা হচ্ছে।
বাজারে চিনি সংকটের বিষয়ে কথা বলতে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে শুক্রবার একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
সরকারি চিনির বাড়তি দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জহুরা ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বর্তমান সংকটকে কাজে লাগিয়ে কোনো অসাধু চক্র প্যাকেটের গায়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। কারণ সরকারি আখের চিনির বাড়তি একটা চাহিদা বাজারে রয়েছে। কিছু দিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত এমন একটি চক্রকে ধরেছিল বলে জানান তিনি।
নভেম্বরের শুরুতে করপোরেশনের চিনির দাম কেজিতে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর নতুন করে আর দাম বাড়ানো হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে বাজার করতে গিয়ে চিনি নিয়ে ঝামেলা পোহানোর মধ্যে মুরগি ও সবজির পড়তি দামে সামান্য স্বস্তি ছিল ক্রেতাদের।
গত দুই সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত তিন মাস ধরে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এছাড়া লেয়ার মুরগি ও সোনালি মুরগি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকার মধ্যে ছিল।
এছাড়া সিম, আলু, ফুল কপি ও বাঁধাকপিসহ শীতের সবজির দামও চলতি সপ্তাহে কিছুটা কমে এসেছে। চলতি সপ্তাহে সিমের দাম নেমেছে প্রতিকেজি ৬০ টাকায়। কোথাও কোথাও তা জাতভেদে ৪০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ৮০ টাকা ছিল। নতুন আলু ১২০ থেকে কমে ৬০ টাকায় এসেছে। প্রতিটি ফুল ও বাঁধাকপি পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ৩৫ টাকা ছিল।
সয়াবিন-চিনি পরিশোধনকারীদের দরেই, নীরব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
চিনির প্যাকেটে বেশি দাম লেখা, ইগলুকে জরিমানা