এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, “এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট চাল কলগুলো কর্পোরেটদের চাপে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চালের বাজার কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে।”
Published : 22 Jan 2025, 08:51 PM
উদার বাণিজ্যনীতির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ‘গিলে খাচ্ছে’ বলে মনে করছেন এসএমই খাতের বিশেজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এভাবে হারিয়ে যাওয়া থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৭৮ লাখের বেশি এসএমই কোম্পানি রক্ষায় সরকারি নীতি সহায়তা প্রয়োজন।
বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এ মতামত উঠে আসে।
‘এসএমই নীতিমালা ২০২৫: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের রক্ষার কৌশল কী হতে পারে?
জবাবে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান বলেন, “উদার বাণিজ্য নীতির কারণে সারা বিশ্বেই তাই হচ্ছে। আমাদের দেশেও তার বাইরে নয়। চানাচুর, বিস্কুট, পাউরুটি ও মুড়ির মত পণ্য কর্পোরেটরা বানাচ্ছে। এসব পণ্য এসএমই খাতে সীমিত রাখতে সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন।
“এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট চাল কলগুলো কর্পোরেটদের চাপে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চালের বাজার কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে।”
এসএমই খাতের এসব ব্যবসা সচল থাকলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি চালের বাজারও স্থিতিশীল থাকত বলে কর্মশালায় পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা।
মুড়ি, চানাচুর, বেকারি পণ্য জাতীয় অল্প পুঁজির এলাকাভিত্তিক ব্যবসা ও পাঁচ থেকে ২০ টাকা দামের প্যাকেটজাত পণ্য উৎপাদন এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সীমিত রাখা যায় কি না, এমন প্রশ্নে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা হয়ত প্রস্তাব করতে পারি, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের পণ্য বড়রা কিনে নেবে। তারাই বাজারজাত করবে। বড়দের এসব পণ্য বানানোর প্রয়োজন হয়ত তখন থাকবে না।’’
তিনি বলেন, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ‘ব্যবসায়িক চাপ থেকে’ সারা দেশে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষায় আগামী বাজেটে কর হার কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হবে।
অর্থনীতির মোট কর্মসংস্থানের অন্তত ৫০ শতাংশ তৈরি হয় এসএমই খাত থেকে। আর মোট দেশজ উৎপাদনে অন্তত ২৫ শতাংশ ভূমিকা রাখছে এ খাত।
এসএমই খাতের সঙ্গে কুটির ও হস্তশিল্পকে যুক্ত করে নীতিমালা করার দাবি জানিয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, “বিশ্বে হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প পণ্যের বাজার সাতশ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশের মাত্র এক বিলিন ডলারের (১০০ কোটি ডলার) হিস্যা রয়েছে তাতে।”
তিনি বলেন, “সুরক্ষা দিতে পারলে কর্মসংস্থান তৈরির এ খাতটি টিকে থাকবে। সারা বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট কারখানায় কাজ শুরু করেছে। কিন্তু হস্ত ও কুটির শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে আসবে না। এজন্য এ খাতে নীতিসহায়তা দেওয়া দরকার।”
এসএমই খাতকে ‘থ্রাস্ট সেক্টর’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান তাসকিন আহমেদ।
এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের বড় অংশই অনানুষ্ঠানিক খাতের। সড়কের পাশে খাদ্য পণ্য বিক্রেতা ও ছোটো আকারের দোকানে পোশাক বিক্রেতাদের ট্রেড লাইসেন্স থাকে না।
বেশিরভাগ কোম্পানির আর্থিক হিসাব বিবরণী সংরক্ষণ করার মত সামর্থ্য নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার ও বিশেষ মোবাইল অ্যাপে সেবা দেওয়ার প্রস্তাব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এসএমই ফাইন্ডেশন মূলত উদ্যোক্তা তৈরি ও নীতিসহায়তা নিয়ে কাজ করে। এ বিষয়ে আগামীতে প্রস্তাব থাকবে।”
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত অর্ধশতাধিক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে কর্মশালাটির সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
আরও পড়ুন: