“এসএমই খাত পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নীতি ও নিয়ন্ত্রণগত বিষয়, অর্থায়ন, অবকাঠামো ও দক্ষগত।”
Published : 07 Oct 2023, 10:51 PM
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এই খাতের উন্নয়ন হচ্ছে না আশানুরূপ। প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সব সূচকেই বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে এ বিষয়ে এক আয়োজনে।
শনিবার রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)য়ের আয়োজনে ‘ইমপ্রুভিং এক্সপোর্ট ক্যাপাবিলিটিস অফ এসএমইস: সাকসিডিং গ্লোবালি আপন এলডিসি গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই বিষয়টি উঠে আসে।
মূল প্রবন্ধে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “এসএমই খাত পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নীতি ও নিয়ন্ত্রণগত বিষয়, অর্থায়ন, অবকাঠামো ও দক্ষগত।”
এর সঙ্গে ব্যাংকে উচ্চ হারের খেলাপি ঋণ, এসএমই খাতে উচ্চ পরিচালন ব্যয়, আর্থিক খাতের সঙ্গে এ খাতের উদ্যোক্তাদের দুর্বল সম্পর্ক এসএমইর বিকাশ ঘটাতে দিচ্ছে না বলেও মত দেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে এসএমইর সরকারি উদ্যোগ সূচকে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ব্যবহার ২৮ দশমিক ৮৫। ভারতে এটি ৬২ দশমিক ৫০, চীনে ৭৬ দশমিক ৪৪, মালয়েশিয়ায় ৮১ দশমিক ২৫ ও ভিয়েতনামের ৬২।
নিয়ন্ত্রণগত মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সূচক ২০ দশমিক ৬৭। ভারতে এটি ৪৯ দশমিক ৫২, চীনে ৪১ দশমিক ৩৫, মালয়েশিয়ায় ৭২ দশমিক ৬০ ও ভিয়েতনামে ৩৭ দশমিক ৯৮।
দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সূচক ১৮ দশমিক ২৭। ভারতে তা ৪৬ দশমিক ৬৩, চীনের ৫৮ দশমিক ১৭, মালয়েশিয়ার ৬১ শতাংশ ও ভিয়েতনামের ৪৭ দশমিক ১৮।
বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক ভারত ও ভিয়েতনামের চেয়েও বেশি জানিয়ে সেলিম রহমান এসএমই খাতের জন্য বিশেষায়িত অর্থায়ন, ব্যাংকের পক্ষ থেকে খরচ কমানো এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকা ও দক্ষ জনবলের অভাবে প্রযুক্তিগত ব্যবহারে পিছিয়ে থাকায় বর্হিবিশ্বে রপ্তানি বাজার ধরতে পারছে না এসএমই খাত। পণ্যের গুণমাত মান রক্ষা করে প্রতিযোগিতায় যেতে পারলে এসএমই খাতের পণ্যর রপ্তানি বাজার সম্প্রসারিত হতে পারে।”
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। তিনি বলেন, “এসএমই খাতে অর্থায়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, কিন্তু প্রচারের অভাবে অনেক উদ্যোক্তাই জানেন না।”
দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এসএমই শিল্পের অবদান ৩৫ শতাংশ জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই সবাইকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলস বলেন, “কানাডা প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ জনবল তৈরিতে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষায় কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ।”
বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ আলদুহাইলান বলেন, “সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার হতে পারে বাংলাদেশের এসএমই পণ্য।”
এসএমই খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কবির আহমেদ বলেন, “মোট ঋণের ২৫ শতাংশ এসএমই খাতে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেক ব্যাংক এসএমই খাতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে সব ব্যাংকই এসএমই খাতের এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে পারবে।”
সেমিনারে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন এসএমই প্রতিষ্ঠঅ ‘তরঙ্গ’ এর উদ্যোক্তা কোহিনুর ইয়াসমিন, পিপলস লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজবিন বেগম, বেঙ্গল মিট প্রসেসিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম আসিফও।